আরও আন্দোলন নিয়ে ১৪ দলের বৈঠকে সতর্কতা

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০১৮, ২০:৫৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি দ্রুত সুরাহা না হলে একে ব্যবহার করেও আন্দোলন বা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা হতে পার বলে সরকারকে সতর্ক করেছে ক্ষমতাসীনদের জোট ১৪ দল।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে জোটের বৈঠকে এই পরিস্থিতি এড়াতে পোশাক শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়ে বলেছেন একাধিক শরিক দলের নেতা।

তোপখানা রোডের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকটি হয়।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা স্পষ্ট। তবে এক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে, যদিও নগর জীবনে আগের স্বাভাবিক চিত্র ফেরেনি। 

এর মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে প্র্রক্রিয়া চলছে। ন্যূনতম বেতন বোর্ডের প্রতিবেদন দেয়া হয়নি এখনও। আর এই বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে মালিক এবং শ্রমিকপক্ষের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে।

ডিসেম্বরেই নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও বোর্ড প্রতিবেদন না দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে ঝামেলার আশঙ্কা করছেন ১৪ দলের শরিক নেতারা।

এর আগে পোশাক খাতে যতবার বেতন বৃদ্ধির ইস্যু এসেছে, ততবার দেশে আন্দোলন হয়েছে, আর পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় নামলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলাও হয়ে থাকে।

১৪ দলের বৈঠকে জাসদের একাংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া ও কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্ববায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, জাতীয় পার্টি জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম নির্বাচনের আগে আরও আন্দোলনের আশঙ্কা করেন।

একজন বলেন, ‘গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতনের দাবি নিয়ে সরকারকে নির্লিপ্ত মনে হচ্ছে। সরকারের প্রতিশ্রুতিতে এমপিওভুক্তি ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরে গেলেও তারা আউটপুট না পেলে আবার রাজপথে নামতে পারে। আর সুযোগসন্ধানীরা এসব ইস্যুকে কাজে লাগাতে পারে।’

‘নির্বাচনের আগে সরকারকে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কেবল প্রশাসনিকভাবেই নয়, এসব বিষয়গুলোতে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।’

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘বৈঠকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন  নিয়ে শরিকরা  কিছু অস্পষ্টতার কথা বলেছে।’

বৈঠকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন, শিক্ষকদের এমপিওসহ বার্নিং ইস্যুকে দ্রুত সরকারকে সমাধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। তবে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে শরিকরা তাদের খেদের কথাও জানান।

মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদিত আইনে সর্বনিম্ন শাস্তি উল্লেখ না থাকাসহ বেশ কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতার কথা তুলে ধরেন ১৪ দলের নেতারা। তারা আইনটি চূড়ান্ত করার আগে স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দেয়া ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করা হয়।

বৈঠকের পরে ১৪ লীয় জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সড়কে নৈরাজ্য আর সহ্য করা হবে না ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। বিআরটিএর অবহেলা আর দেখতে চায় না জাতি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নাসিম বলেন, ‘লাইসেন্স আর ফিটনেস ছাড়া কোনো গাড়ি যেন সড়কে চলতে না পারে ট্রাফিক পুলিশকে সেই নির্দেশ দিতে হবে। মন্ত্রী এমপি যে-ই হোক গাড়ির কাগজ না থাকলে কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না।’

‘বাস মালিক, শ্রমিকদেরকে প্রয়োজনে জেলে ঢোকাতে হবে।’

কামাল হোসেনের তীব্র সমালোচনা

নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলন চলাকালে সরকারের সমালোচনা করে গণফোরামের সভাপতি সভাপতি কামাল হোসেনের বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়।

বৈঠকে নেতারা বলেন, কামাল হোসেনের মতো সিনিয়র মানুষ আত্মাহুতিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশের ক্ষতি করছেন। তিনি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ষড়যন্ত্র করছেন।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তিনি (ড. কামাল) বর্ণচোরা। গুন্ডাতন্ত্র বলতে গিয়ে নিজেই গুন্ডামি করেছেন। তার মতো সিনিয়র একজন মানুষের কাছে এ ধরনের বক্তব্য জাতি আশা করে না। সব দিকে পরাজিত হয়ে তিনি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। আমাদের সকলকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।’

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া বলেন, ‘কামাল হোসেন একজন ষড়যন্ত্রকারী। তিনি আরেক ষড়যন্ত্রকারী বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় বৈঠক করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’  

গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘কামাল হোসেন সরকারের সমালোচনা করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’

আনিসুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০৯আগস্ট/টিএ/ডিএম/জেবি)