লাশ ফেলার নিরাপদ স্থান আখাউড়া জংশন এলাকা

মহিউদ্দিন মিশু, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০১৮, ২২:১৭

ডাকাতি, অপহরণ বা ছিনতাইয়ের পর খুন করে লাশ ফেলার নিরাপদ স্থান যেন ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট রেলপথের তিতাস নদী ও সংলগ্ন আখাউড়া রেলওয়ে জংশন এলাকা। রেলওয়ে পুলিশের হিসাবে এখানে প্রতি মাসে গড়ে চারটি লাশ উদ্ধার হয়।

এলাকাটি ঘিরে রয়েছে অপরাধ জগতের নানা কাহিনী। পূর্বাঞ্চলের আখাউড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নথিতেও ক্রাইম পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত।

মাদক চোরাকারবারি, মাদকাসক্ত, ছিনতাইকারী, চোর-ডাকাত আর পেশাদার খুনিদের অভয়ারণ্য হিসেবে প্রচার আছে সীমান্তবর্তী এই উপজেলার। তিতাসের পাড়ে অবস্থিত আখাউড়া জংশন এলাকা ও এর আশপাশে প্রায়ই অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যায়। অন্য কোথাও হত্যার পর এখানে এনে কিংবা এখানে হত্যার পর লাশ ফেলে যায় খুনিরা।

সর্বশেষ গত মঙ্গল ও বুধবার দুজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের একজন কুমিল্লার আমড়াতলী গ্রামের দারোগাবাড়ির মৃত বাবুল মিয়ার ছেলে শাকিল (৩০)। বুধবার দুপুরে আখাউড়া পৌরশহরের তিতাস নদী ও সাইনধারা নদীর মোহনায় এই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার মাথার নিচে ও ডান হাতে ধারালো আস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের ধারণা, হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

এর আগের দিন মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন এলাকা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় (৫৫) এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। তার পরনে লুঙ্গি ও গায়ে হাফহাতা গেঞ্জি ছিল।

আখাউড়া রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ২৬ জন অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করেছে শুধু রেলওয়ে পুলিশ। এর মধ্যে ৫ জন মহিলা ও অন্য মরদেহগুলো পুরুষের বলে জানান আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি শ্যামল কান্তি দাস।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি ঢাকাটাইমসকে জানান, আখাউড়া হয়ে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচলকারী বিভিন্ন আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন যাত্রীর সর্বস্ব লুটে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার শত শত নজির রয়েছে আখাউড়ায়। ফলে অপরাধীদের কাছে আখাউড়া অঞ্চল নিরাপদ ক্রাইম পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

পেশাদার ছিনতাইকারী, খুনিসহ মাদক ব্যবসায়ীদের জন্যও এই সীমান্তবর্তী এলাকা স্বর্গরাজ্য। পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণির অসৎ কর্মকর্তা নিয়মিত আখাউড়া এলাকার অপরাধীদের কাছ থেকে মাসোহারা পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পূর্বাঞ্চল রেলপথের আখাউড়া সেকশনের আখাউড়া-আশুগঞ্জ, আখাউড়া-মন্দবাগ ও আখাউড়া-মুকুন্দপুর রেলপথের ১০০ কিলোমিটার এলাকায় গত পাঁচ বছরে (২০১৪-২০১৮) ২৪১ জনের লাশ উদ্ধার করেছে শুধু আখাউড়া রেলওয়ে জিআরপি থানা পুলিশ। এর মধ্যে ৬৫ জন মহিলা ও ১৭৬ জন পুরুষ। ২১৪টি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। পরিচয় পাওয়া বাকি ২৭ জনের লাশ নিয়ে যায় পরিবার। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সাতটি ছাড়া বাকি ২৩৪টির ইউডি মামলা হয়।

তবে বর্তমানে এই পথে অপরাধ অনেক কমেছে বলে দাবি করেন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চট্টগ্রাম (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মো. শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে একাধিক ছিনতাইকারী গ্রুপকে আইনের আওতায় সোপর্দ করা হয়েছে। অপরাধ দমনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’ একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, সাধারণ মানুষ সচেতন হলে এ ধরনের অপরাধের ঘটনা কমে আসবে।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :