সরকারি হাসপাতালে ‘মৃত’ ঘোষিত শিশুর জন্ম বেসরকারি হাসপাতালে

কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া
| আপডেট : ১১ আগস্ট ২০১৮, ২২:১৬ | প্রকাশিত : ১১ আগস্ট ২০১৮, ২১:৩৪

পেটে ‘মৃত’ ঘোষিত সন্তান বেঁচে আছে দিব্বি। শিশু জন্ম দেয়ার আগেই কান্নার সাগরে ভাসা মায়ের পৃথিবীতে এখন খুশির জোয়ার।

ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ায়। গত বুধবার সদর হাসপাতালে সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি হন খুশি খাতুন। চার দিনের মাথায় শনিবার তাকে জানানো হয়, পেটের সন্তান মারা গেছে। আর এই ‘মৃত’ সন্তানকে অপসারণ করতে হবে।

পরে খুশিকে ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন গর্ভের সন্তান জীবিতই রয়েছে। আর সিজারিয়ান অপারেশনে ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দেন তিনি।

অবশ্য শিশুটি এখনও সংকটাপন্ন। আর তাকে আবার নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই সদর হাসপাতালে। রাখা হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র্রে।

খুশির মনে এখন রাজ্যের খুশির পাশাপাশি উদ্বেগ। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্ষোভ। তার সন্তানকে ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করিয়ে তার মনে কেন বেদনা দিয়েছিল সেটি বুঝতে পারছেন না তিনি।

খুশি খাতুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বুধবার আমাকে কুষ্টিয়ার আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাপাতাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সনো রিপোটের্ (আল্ট্রাসাউন্ড) দেখা যায় আমার গর্ভে সন্তান রয়েছে। চিকিৎসক তাদের সুবিধামত সময়ে ডেলিভারি করাবেন বলে জানান।’

‘কিন্তু তিনদিন পর শনিবার ভোর ছয়টার দিকে জানানো হয় গর্ভে যে সন্তান রয়েছে তা জীবিত নয়, মৃত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন কথায় আমি ভেঙে পড়ি। তখন একজন নার্স আমাকে ইনজেকশন পুশ করে। এতে আমি যন্ত্রণায় ছটফট করি। পরে আরেকটি ইনজেকশন পুশ করা হয় শরীরে। বুঝলাম মৃত সন্তান প্রসব করাতে নার্স ইনজেকশন দিচ্ছে।’

‘পরে আমার স্বামী ও বাবা আমাকে নিয়ে যান বেসরকারি ইসলামিয়া হাসপাতালে। সেখানে আমার শরীরের অবস্থা নিশ্চিত হবার জন্য আবার সনো (আল্ট্রাসাউন্ড) করানো হয়। জানানো হয়, তার গর্ভে যে সন্তানটি রয়েছে তা জীবিত রয়েছে। দ্রুত আমাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিজার করান। এতে আমার গর্ভের পূত্র সন্তান জন্ম নেয়।’

খুশি বলেন, ‘সন্তানটির শরীরের অবস্থাও খুব একটা ভালো নেই। দ্রুত সন্তানের চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় সেই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। রাখা হয় নিবিঢ় পরিচর্যা কেন্দ্রে।’

ইসলামিয়া হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সাঈদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কুষ্টিয়া জেনারেল হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন কর্মকা-ের কারণেই মা ও শিশুর জীবন বিপন্ন হতে চলেছে। এমন আচরণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কখনও কাম্য নয়।’

তবে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক তাপস কুমার সরকার তাদের দায় অস্বীকার করেছেন। বলেন, ‘খুশি নামে এক প্রসূতি হাসপাতালে ভর্তি হলেও মৃত সন্তান হয়েছে মর্মে হাসপাতালের কেউ নিশ্চিত করেনি। যদি হাসপাতালের কোনো স্টাফ জড়িত থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কুষ্টিয়ায় ‘সচেতন নাগরিক কমিটি’র সভাপতি রফিকুল আলম টুকু। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিভিন্ন অভিযোগ ব্যাপক হারে আসছে। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে। খুশি খাতুন নামে প্রসূতিকে নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

গত ২৩ এপ্রিল এমন একটি ঘটনা ঘটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। অকালে জন্ম নেয়া একটি শিশুকে মৃত ঘোষণার পর আজিমপুর করবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পর শিশুটি নড়ে উঠে। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালে। নাম রাখা হয় মীম। অবশ্য পরে শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি।

এই ঘটনায় তোলপাড় হওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, কথা বলেন স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তবে এই তদন্ত প্রতিবেদনে কী এসেছে, কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না, তা জানানো হয়নি।

ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :