ওদের আছে ডলার, আমাদের আছেন আল্লাহ: এরদোয়ান
তুরস্কের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের পর তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘ওদের যদি ডলার থাকে- তাহলে আমাদের আছে আমাদের জনগণ, আমাদের অধিকার এবং আমাদের আছেন আল্লাহ’।
এছাড়া শনিবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এরদোয়ান লিখেছেন, ‘আমেরিকা যদি তুরস্কের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান না দেখায় তাহলে ন্যাটোর মতো সামরিক জোটে দু’দেশের সহযোগিতা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে’। খবর বিবিসির।
এরদোয়ান যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, ‘‘ওয়াশিংটন যদি ‘একলা চলার এবং সম্মান না দেখানোর’ পথ ত্যাগ না করে তাহলে তার দেশ নতুন বন্ধু ও মিত্র খুঁজে নেবে’’।
শুক্রবার তুরস্কের শুক্রবার তুরস্কের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের ট্রাম্পের ঘোষণার পর এ মন্তব্য করলেন এরদোয়ান।
শুল্ক বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের পর থেকে ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রা লিরার প্রায় ২০ শতাংশ দরপতন হয়েছে। এর মাধ্যমে তুরস্ক অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তুরস্কের ওপর এমন পদক্ষেপের কথা টুইটে জানানোর পরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এরদোয়ান। তবে তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
এরদোয়ান ওয়াশিংটনের ওপর ক্ষুব্ধ- কারণ সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কুর্দি যোদ্ধাদের অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকানরা, তাছাড়া নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনকেও তারা বিচারের জন্য তুরস্কের হাতে তুলে দিচ্ছে না।
এছাড়া আংকারা যে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার পরিকল্পনা করছে- সেটাও একটা বড় কারণ।
অন্যদিকে আঙ্কারার অভিযোগ, ফেতুল্লা গুলেন পেনসিলভানিয়ায় তার বাড়িতে বসে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কলকাঠি নেড়েছিলেন।
এরদোয়ান আরো বলেন, ‘সন্ত্রাসের অভিযোগে তুরস্কে বিচারাধীন মার্কিন ধর্মযাজক এ্যান্ডু ব্রানসনের ব্যাপারে বিচারের প্রক্রিয়া শেষ হবার অপেক্ষা না করেই ওয়াশিংটন পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে’।
ব্রানসনের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযোগ- তার সাথে কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টি এবং ফেতুল্লা গুলেনের সম্পর্ক আছে। আমেরিকার শক্তিশালী ইভানজেলিকাল খ্রিস্টান লবি এ নিয়ে হৈচৈ শুরু করার পর এর জবাবে তুর্কি স্বরাষ্ট্র এবং বিচারমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।
এবিষয়ে এরদোয়ান অভিযোগ করে বলেন, ‘একজন যাজকের কারণে তুরস্ককে নতজানু করার যে প্রচেষ্টা ওয়াশিংটন চালাচ্ছে তা গ্রহণযোগ্য নয়’।
তুরস্কের মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কিছুদিন পরেই ট্রাম্প এই শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিলেন।
এছাড়া অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- তুরস্ক তাদের প্রায় অর্ধেক তেল আমদানি করে ইরান থেকে। সে কারণে ইরানের ওপর পুনঃআরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুরস্কের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তুরস্কের মাটিতে আছে ন্যাটো জোটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইনজারলিক সামরিক বিমান ঘাঁটি। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য ন্যাটো এ ঘাঁটিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। এ ঘাঁটিটি বন্ধ করে দেবার জন্য তুরস্কে অভ্যন্তরীণ চাপ আছে।
তুরস্কের কিছু সরকার সমর্থক আইনজীবীর অভিযোগ- ইনজারলিকে মোতায়েন কিছু আমেরিকান সেনা কর্মকর্তা এরদোয়ান-বিরোধী অভ্যুত্থানের পেছনে ভূমিকা রেখেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও চেয়েছিলেন তারা।
গত সপ্তাহে এক অভিযোগে এই আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি আবেদন জানান- যেন ইনজারলিক থেকে সব বিমান উড্ডয়ন বন্ধ করে দেয়া হয়।
(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/একে/জেবি)