স্মরণ: কবিরত্ন এম.এ হক

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১২ আগস্ট ২০১৮, ১৯:৫৫

বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান-এ কবিরত্ন এম. এ. হকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে- ‘তিনি সমাজসেবক ও সাহিত্যিক ছিলেন। জীবনে বহুবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং গুণীজন হিসেবে সংবর্ধিত হয়েছিলেন।’ সাহিত্যিক, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী হিসেবে তিনি ফরিদপুর জেলায় স্বনামখ্যাত ছিলেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকে আজীবন সাহিত্য চর্চা করে তিনি কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি প্রমাণ রেখেছিলেন, প্রতিভার কোনো দেশ-প্রদেশ-ভূগোল নেই।

তিনি ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি সাবেক যশোর, বর্তমান ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার ব্যাংকেরচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভূগোলের বিবেচনায় নিঃসন্দেহে এটি প্রান্ত; যাকে বলে প্রত্যন্ত অঞ্চল। কিন্তু সেই প্রান্ত থেকেই তিনি কেন্দ্রের ভাবকে লালন করে আবার প্রান্তের ভাবকে কেন্দ্রে তুলে ধরে কেন্দ্র ও প্রান্তের ভেদ ঘুচাতে চেষ্টা করেছেন।

কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী থেকে ১৯৪৮ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করে তিনি খুলনা বিএল কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে আইএ পাস করে একই কলেজে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু বিএ ডিগ্রি লাভের আগেই তিনি শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। নিজ এলাকায় তিনি যুক্তিবাদী, পণ্ডিত, শিক্ষানুরাগী এবং ‘কবি সাহেব’ নামে সমধিক পরিচিত। তিনি একাধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা।

কবিরত্ন এম.এ.হক তার সাহিত্যিক জীবনে বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিকের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন পল্লী কবি জসীমউদ্দীন এবং বিখ্যাত সনেটকার সুফী মোতাহের হোসেনের অত্যন্ত স্নেহভাজন। জসীমউদ্দীন এবং সুফী মোতাহের হোসেন ছিলেন তার সাহিত্যের গুণমুগ্ধ পাঠক ও অনুপ্রেরণা দাতা। তার কাব্য-প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে জসীমউদ্দীন ও সুফী মোতাহের হোসেন স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হয়ে এম.এ.হকের ‘এপার-ওপার’ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দেন। কবিরত্ন এম.এ.হক বহুমুখী সাহিত্য-প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার এবং গল্পকার। তার রচিত নাতিদীর্ঘ গ্রন্থতালিকা থেকে তার সাহিত্য-প্রতিভার বৈচিত্র্য অনুমান করা যেতে পারে- ‘শুকতারা’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘পথদিশারু’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘এপার-ওপার’ (লোকগানের সংকলন), ‘কচি মনের খোরাক’ (পাকিস্তান আমলে প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে দ্রুত পঠন হিসেবে যশোর শিক্ষাবোর্ডে পাঠ্য ছিল), ‘দর্দে নবী’ (ইসলামি গান), ‘হক-বচন’, ‘ছন্দ-বন্ধ-বাগধারা’ (গ্রন্থটিতে অপ্রচলিত এবং হারাতে বসা অসংখ্য বাগধারাকে তিনি সংকলিত করেন এবং স্কুল-ছাত্রছাত্রীদের উপযোগী করে ছন্দে বাক্য রচনা করেন), ‘দেশের গান’ (দেশাত্মবোধক গানের সংকলন), ‘দাদুর ছড়া’ (শিশু-সাহিত্য), ‘স্মৃতিকথা’ (মুনীর চৌধুরী, ডক্টর এনামুল হক, কবি শাহাদাৎ হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান, বিজয় সরকার, কবি আশরাফ আলী খান প্রমুখের সঙ্গে কবির ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়ে রচিত), ‘কাঙ্গাল পথিক’ (কাব্যগ্রন্থ) এবং ‘মুক্তির গান’ (সুফি মতবাদী কবিতা)।

কবিরত্ন এম.এ.হকের সাহিত্যিক চেতনায় লোকজীবন ও লোক-সংস্কৃতির গভীর রূপ এবং আধুনিক জীবনবোধ- এ দুয়ের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। ইসলামি গান, লোকগান, আধুনিক গান এবং কবিতার সফল পাশাপাশি অবস্থান তার প্রতিভার দ্বিবেণী সমন্বয়কে করেছে প্রকাশিত। এম.এ.হকের কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ‘যশোর-সাহিত্য-সংঘ’ তাকে ‘কবিরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে। এছাড়া ‘যশোরের লোক কবি’, ‘ফরিদপুরের কবি পরিচিতি’ গ্রন্থে তার কবিতা ও জীবনী গ্রন্থিত হয়েছে। সাবেক বাংলা উন্নয়ন বোর্ড, বর্তমান বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের কবি পরিচিতি’ গ্রন্থে কবিরত্নের নাতিদীর্ঘ জীবনী গ্রন্থিত হয়েছিল। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘চরিতাভিধান’-এ কবিরত্নের জীবন ও তার কৃতিত্ব ভুক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কবিরত্ন এম.এ.হক ২০০৬ সালের ১৩ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে আমরা তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :