সূর্যকে ছুঁতে উড়ল নাসার ‘পার্কার’

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট ২০১৮, ১১:০২

সৌরজগতের মূল গ্রহ সূর্যকে ছুঁতে উড়াল দিয়েছে নাসার মহাকাশযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’।

শনিবার ওড়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রবিবার সূর্য অভিযানে উৎক্ষেপণ করানো হয় পার্কারকে।

টানা সাত বছর ধরে এই প্রকল্পে কাজ করেছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। এতে খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি ডলার।

পার্কার সোলার প্রোব কেপ ক্যানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশনের ৩৭ স্পেস লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকে ডেল্টা-৪ হেভি রকেটের পিঠে চেপে মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দেয় বলে টুইটার বার্তায় জানিয়েছে নাসা।

মূলত সূর্যের বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বাইরের স্তর করোনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে এবং এর প্রভাবে মহাকাশের আবহাওয়ায় কী প্রভাব পড়ে, তা বুঝতে এই সৌর অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছে নাসা।

উৎক্ষেপণের পর নাসার তরফে একটি ব্লগে জানানো হয়েছে, ‘মহাকাশযানটি সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সমস্ত কাজ করছে। সবমিলিয়ে এটা বলাই যায় যে, পার্কার সোলার প্রোব সূর্যকে স্পর্শ করার লক্ষ্যে তার অভিযান শুরু করে দিয়েছে।’

নাসা জানিয়েছে, বাহক রকেটের থেকে সফলভাবেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছে মহাকাশযানটি। উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণের মধ্যে মহাকাশযানে থাকা সোলার অ্যারেগুলিও খুলে গিয়েছে।

সূর্যের বায়ুমণ্ডল, সৌরবায়ু, সৌরঝড়, সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্র ইত্যাদি নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে এই চালকহীন মহাকাশযান। প্রখ্যাত সৌরবিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ ইউজিন পার্কারের নামেই নামকরণ করা হয়েছে এই মহাকাশযানের। এই প্রথম কোনও জীবিত বিজ্ঞানীর নামে নামকরণ করা হল নাসার কোনও মহাকাশযানের।

১৯৫৮ সালে করোনার পরিধি বিস্তার, সৌরবায়ু এবং সূর্যের বায়ুমণ্ডল নিয়ে বেশ কিছু তাত্ত্বিক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন পার্কার।

সূর্যের এত কাছাকাছি (সৌরপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩৮ লক্ষ মাইল উপরে) পৌঁছেও ঝলসে যাবে না পার্কার সোলার প্রোব। কারণ, এই মহাকাশযানে রয়েছে অত্যাধুনিক তাপরোধক বর্ম।

নাসা জানিয়েছে, সূর্যের সবচেয়ে বাইরের বায়ুস্তর করোনার গড় তাপমাত্রা কম-বেশি ১০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকে, যা সৌরপৃষ্ঠের তুলনায় প্রায় ৩০০ গুণ বেশি। এই বিপুল তাপ ও আনুষঙ্গিক সমস্যাগুলিকে অতিক্রম করতে পার্কার সোলার প্রোবকে দেওয়া হয়েছে ৪.৫ ইঞ্চি পুরু ‘হিট শিল্ড’। শুধু তাপ নয়, সূর্যের তেজষ্ক্রিয়তাও রুখে দিতে সক্ষম এই হিট শিল্ড। পৃথিবীতে সূর্যরশ্মির যে তেজষ্ক্রিয়তা থাকে, তার থেকেও ৫০০ গুণ বেশি তেজষ্ক্রিয়তা শোষণের ক্ষমতা রয়েছে এই বর্মের।

কেন এই অভিযান গুরুত্বপূর্ণ?

সূর্য কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে সাহায্য করবে পার্কার নামের এই স্যাটেলাইট। সূর্য তার বৈদ্যুতিক বিভিন্ন কণা এবং চৌম্বক শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সবসময় প্রভাবিত করছে। এই ‘সোলার উইন্ড’ বা সূর্য থেকে নিঃসরিত বাতাসের প্রভাবে উত্তর মেরুর আকাশে তৈরি হয় অদ্ভুত সুন্দর রংচঙে আলোর খেলা।

কিন্তু সূর্যের কিছু প্রবাহ পৃথিবীর চৌম্বক শক্তির ভারসাম্য বিঘ্নিত করে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে, মহাকাশে স্যাটেলাইটগুলো কক্ষচ্যুত হতে পারে, এমনকি বৈদ্যুতিক গ্রিড বিকল হয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞানীরা সেই সব বিপদ আগে থেকে বোঝার চেষ্টা করছেন। পার্কার আগাম তথ্য দিয়ে এ কাজে দারুণভাবে সাহায্য করতে পারে।

কেন সূর্যের এত কাছাকাছি যাওয়া দরকার?

‘করোনা’ বা সূর্যের চারদিকের উজ্জ্বল আভাযুক্ত যে এলাকা সেটির অদ্ভুত আচরণ বিজ্ঞানীদের কাছে বড় রহস্য। সূর্যপৃষ্ঠের চেয়ে করোনার তাপমাত্রা বেশি। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যেখানে ছয় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো, করোনা অঞ্চলের তাপমাত্রা কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি হতে পারে।

কেন এই ফারাক- তার সুনির্দিষ্ট উত্তর এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে নেই। এছাড়া, সূর্য থেকে নিঃসরিত বাতাস যখন করোনায় প্রবেশ করে, তখন তার গতি হঠাৎ তীব্রভাবে বেড়ে যায়। এই গরম বাতাস তখন প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ কিলোমিটার বেগে সোলার সিস্টেমের ভেতর দিয়ে ধেয়ে চলে।

পার্কার করেনার বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের বিভিন্ন তথ্য পাঠাতে সক্ষম হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/একে/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :