প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও স্কুলের সামনে রাস্তা পারাপারে নেই পুলিশ
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে রাস্তা পারাপারের জন্য স্কুলের সামনে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ এখনও বাস্তবায়ন করেনি ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ক্লাশ ছুটির পর গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় বাস চাপায় নিহত হন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব। এর পরদিন থেকে রাজধানীতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে নিরাপদ সড়কের দাবি তুলে।
এর মধ্যে ২ আগস্ট নিহতের পরিবারের সদস্যদের ডেকে পাঠিয়ে নিজ কার্যালয়ে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেময় তিনি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারে বিশেষ দুটি নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম।
ইহসানুল করি জানান, ‘সব স্কুলের সামনে স্পিডব্রেকার স্থাপন এবং প্ল্যাকার্ডধারী বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
গত ৫ আগস্ট গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সড়ক নিরাপদ করতে নেয়া নানা উদ্যোগের কথা বলেন। এ সময় তিনি প্রত্যেকটা স্কুলে রাস্তা পারপারে ট্রাফিক পুলিশ থাকবে জানিয়ে বলেন, ‘ছুটির সময় রাস্তা পারাপারের সুব্যবস্থা করে দেবে।’
‘আমাদের ছোট বাচ্চারা অনেক করেছে, খুব ভালো কথা। কিন্তু এখন তাদের আর দেখার দরকার নেই। তারা যদি কেউ ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিতে চায়, পুলিশকে বলেছি, তাদেরকে কাজে লাগানো পারি। যারা ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিতে চায়, সেটা ছাত্রই হোক, আর শিক্ষকই হোক তারাও দিতে পারে বাচ্চাদের রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা করতে পারে।’
গত ১২ আগস্ট বিমানবন্দর সড়কে এমইএইচ এলাকায় রাস্তা পারাপারের জন্য আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেও একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পাওয়ার পর গত ৭ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা গেছে। সরকার প্রধানের নির্দেশনার জন রাজশাহীতে স্কুলের সামনে রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
কিন্তু ঢাকায় এমনটা দেখা যায়নি। স্কুল শুরু সময় ও ছুটির সময় ঢাকাটাইমসের একাধিক প্রতিবেদক বিভিন্ন স্কুলের সামনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। এ সময় দেখা যায়, সড়কের বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এক সপ্তাহ আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরাও রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার পরিচয় দিচ্ছে। নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করছে তারাও।
আবার রাস্তা পারাপারে যে নিরাপদ উপায় আছে, এমনটিও নয়। সব স্কুলের সামনে ওভারপাস বা জেব্রা ক্রসিং নেই। ফলে ছেলে মেয়েদেরকে হাত উঁচু করে গাড়ি খামার সংকেত দিয়েই পারাপার হতে হয়।
ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, রামপুরা ইকরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এখনো পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন হয়নি।
মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী দীন ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি হলেও এখনও পর্যন্ত সেটার বাস্তবায়ন না দেখে হতাশ তিনি। বলেন, ‘এই কয়েক দিন আমি যেসকল স্কুলের সামনে দিয়ে এসেছি, সেখানে কখনো কোন ট্রাফিক পুলিশ দেখতে পাইনি। ওরা (শিক্ষার্থী) ছোট মানুষ, অনেক আছে যারা জানেই না কীভাবে সড়ক পারাপার হতে হয়।’
‘আমাদের কলেজের সামনেও কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ খুব দরকার। কারণ ছুটির সময় বা ক্লাস শুরুর আগে অনেক শিক্ষার্থী জড়ো হয় এখানে। তার ওপর কলেজের সামনের দিয়ে বাস চলাচল করে এখান দিয়ে। যেকোন মুহূর্তেই বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে যে কারও।’
মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অর্নবও একই তথ্য দিয়েছেন। তার কলেজের সামনেও কোনো পুলিশ আসেনি রাস্তা পারাপারের জন্য।
রাজশাহী ও চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে পুলিশ বসতে পারলে ঢাকায় হয়নি কেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরাডিসি (উপ কমিশনার) সাহেবদেরকে বলেছি উদ্যোগ নিতে। এটা তো এক দিনেই হবে না। সময় লাগবে।’
‘ঢাকায় শত শত স্কুল। বললেই একদিনে সব জায়গায় লোক দেয়া সম্ভব নয়। আমাদেরও লোক স্বল্পতা আছে। এর সমাধান হবে, তবে সময় দিতে হবে।’
(ঢাকাটাইমস/ ১৩আগস্ট/এএকে/কারই/এনআই/ডব্লিউবি)