আইনস্টাইনের বড় ভুল!

গাজী ইয়াসিনুল ইসলাম
| আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১১:৫৪ | প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১১:০৭

মহাবিশ্ব সম্পর্কে বহু ধারণারই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একটি ধারণা সেই এরিস্টটল থেকে নিউটন, আইনস্টাইন পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন। তারা পরিবর্তনশীল মহাবিশ্বে বিশ্বাস করতেন না। তারা বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্ব সংকুচিত বা প্রসারিত হচ্ছে না। মহাবিশ্ব চিরকালই অপরিবর্তনীয় (Static)।

কিন্তু জেনারেল রিলেটিভিটির ফিল্ড সমীকরণ থেকে এমন সিদ্ধান্তে যাওয়া যায় যে মহাবিশ্ব মোটেই অপরিবর্তনীয় (Static) নয়। মহাবিশ্ব হয় সম্প্রসারিত হচ্ছে নতুবা সংকুচিত হচ্ছে, স্থির নয়। আইনস্টাইন কুসংস্কার মুক্ত ছিলেন না। অপরিবর্তনীয় মহাবিশ্বের কুসংস্কার ধরে রাখতে তিনি তার সমীকরণে পরিবর্তন আনলেন।

আইনস্টাইনের সমীকরণকে এইভাবে লেখা যায়: মহাবিশ্বের জ্যামিতিক গঠন= পদার্থ (ভর) + শক্তি

আইনস্টাইন নতুন একটি ধ্রুবক সমীকরণে যোগ করলেন। এটি অ্যান্টি গ্রাভিটি বল হিসাবে কাজ করে গ্রাভিটির আকর্ষণীয় বলকে প্রতিরোধ করে। ফলে মহাবিশ্ব অপরিবর্তনীয় থাকতে পারবে। আইনস্টাইন এর নাম দিলেন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট এবং তাকে গ্রিক অক্ষর ল্যামডা, Λ, দিয়ে চিহিৃত করলেন।

এখন Λ কে উপরের সমীকরণে বাম পাশে (জ্যামিতিক গঠন) রাখলে তা গাণিতিক ত্রুটি সংশোধনের জন্য ধ্রুবক বলেই মনে হয়। কিন্তু একে সমীকরণের ডান পাশে (ভর ও শক্তির সঙ্গে) যুক্ত করলে Λ কে মহাবিশ্বের ভর শক্তির আরেক উৎস বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

এ ক্ষেত্রে Λ মহাবিশ্বের শূন্য স্থানের সাথে সম্পর্কিত এক ধরনের (গ্রাভিটেশনালী) বিকর্ষিক বল হিসাবে প্রতীয়মান হয়। এই বল দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।

আইনস্টাইনের ধারনা এই ছিল যে, ঐ বল গ্রাভিটির আকর্ষণকে প্রতিহত করে মহাবিশ্বকে একটি অপরিবর্তনীয় (Static) সাম্যবস্থায় রাখবে, ঠিক গ্যাসে/বাতাসে ভরা একটি টায়ারের মত। টায়ারের ভিতরের বাতাস বাইরের দিকে প্রেসার দিয়ে, সম্প্রসারিত রাবারের (রাবারের তৈরি টায়ার) ভেতরের দিকে দেওয়া বলকে প্রতিহত করে। ফলে তা নির্দিষ্ট আকার বজায় থাকে। কিন্তু আইনস্টাইনের কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট অপরিবর্তনীয় মহাবিশ্ব গঠন করতে পারল না।

গ্রাভিটি দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে এবং Λ দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। ফলে মহাবিশ্ব অতি সামান্য বড় হলে Λ বাড়বে এবং গ্রাভিটি কমবে। Λ ও গ্রাভিটির সাম্য নষ্ট হবে এবং মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হবে। মহাবিশ্ব অতিসামান্য ছোট হলে তা সংকুচিত হতে শুরু করে। ফলে আইনস্টাইনের অপরিবর্তনীয় মহাবিশ্বের আশা গাণিতিক ভাবে আর ঠিকল না। তবে তিনি Λ কে সমীকরণ থেকে আর বাদও দিতে পরলেন না কারন Λ কে রেখে, তার মান শূন্য বা শূন্য না রেখে (Zero or Non zero) নানান মজার মহাবিশ্বের মডেল তৈরি করা গেল।

পরবর্তীতে হাবল সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণা পর্যবেক্ষন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করলেন। আইনস্টাইন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টকে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল(Biggest Blunder) বলে আখ্যায়িত করলেন।

একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে গবেষণায় দেখা গেছে শূন্য স্থানের সাথে সম্পর্কিত একধরনের অ্যান্টি গ্রাভিটি বল রয়েছে যা মহাবিশ্বকে আরো দ্রুত সম্প্রসারিত করছে। একে বলা হয় ডার্ক এনার্জি। তাহলে আইনষ্টাইনের ধারনা একেবারে ভুল ছিল না। এ সম্পর্কে পরে আলোচনা করব।

কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট ব্যবহার করে অনেকে মহাবিশ্বের বিভিন্ন মডেল দাঁড় করান। আইনস্টাইন-ডি সিটার (Einstein-de Sitter) মডেলে কসমোলজিক্যাল কনসাল্ট্যান্ট এর মান ধরা হয় শূন্য। এই মডেল অনুসারে মহাবিশ্বের জ্যামিতিক গঠন হবে সমতল এবং মহাবিশ্ব আজীবন সম্প্রসারণশীল থাকবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা