পাটের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাজশাহীর কৃষক

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১১:২৭

পাট কাটা, জাগ দেওয়া আর আঁশ ধোয়ার কাজে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন রাজশাহীর চাষিরা। খালে-বিলে পানির সংকট থাকলেও যেখানেই একটু পানি পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই পাট জাগ দিচ্ছেন চাষিরা। তবে নোংরা পানিতে পাট জাগ দেওয়ার কারণে আঁশের রঙ খারাপ হয়ে দামে প্রভাব পড়ার শঙ্কায় আছেন চাষিরা।

এমনিতেই রাজশাহীতে পানির অভাব আর ভালো দাম না পাওয়ার কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। তাই কমছে পাটের চাষ। এ জন্য গত বছরের তুলনায় ৮৭৫ হেক্টর কমিয়ে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এবার পাটে লাভ না হলে আগামীতে চাষাবাদ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে রাজশাহীতে পাট চাষ হয়েছিল ১৩ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে। ২০১৭ সালে চাষ হয়েছিল ১৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। আর এবার পাট চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় ৮৭৫ হেক্টর কম।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পাটের ভালো ফলন হলেও গেল বছর খরা ও অনুক‚ল আবহাওয়া না থাকায় পাটের দাম পাননি চাষিরা। এবারও রাজশাহীতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে কৃষক পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাই বছরের পর বছর পাট চাষ কমছে এই জেলায়। এছাড়া পানির অভাবে কৃষকদের বেশি সমস্যা হচ্ছে পাট জাগ দিতে। খাল-বিলে পানি না থাকায় ডোবায় জাগ দিতে হচ্ছে পাট। এতে পাটের রঙ নষ্ট হচ্ছে। ফলে কৃষক ভালো দাম পাচ্ছেন না।

জেলার পবা উপজেলার ভুগরইল গ্রামের পাটচাষি মুসা ইসলাম জানান, তিনি এবার তিন বিঘা জামিতে পাট চাষ করেছেন। আশা করছেন প্রতি বিঘায় ১০ মণ পাট হবে। তবে বর্তমান সময়ে পাট চাষে লাভ হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। মুসা বলেন, এক বিঘা পাট কাটা ও পানিতে জাগ দেওয়ার খরচ হচ্ছে প্রায় তিন হাজার টাকা। এছাড়া পাট জাগ দেওয়ার পরে পানি থেকে তুলে আঁশ ছাড়ানো হয়। এই কাজের জন্য একজন শ্রমিককে ৪০০ টাকাসহ তিন বেলা খেতে দিতে হয়। এতে একজন শ্রমিকের পেছনে প্রায় ৫০০ টাকা খরচ পড়ে যায়।

উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের পাটচাষি সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম নিয়ে শঙ্কিত। পাটের দাম দুই হাজার টাকার কম হলে লোকসান হবে। সাইফুল বলেন, পাটের দাম কম পাওয়া, বিক্রির সমস্যা এবং ভালো বীজের অভাব পাট চাষে সমস্যা।

বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের মোজাফফর হোসেন সাড়ে চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে একজন কৃষকের ব্যয় হয় ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। অথচ এক বিঘা জমিতে ভালো আবাদ হলে পাট পাওয়া যায় ৮ মণ। গতবার উঠতি বাজারে মণ প্রতি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে কৃষককে বিঘা প্রতি প্রায় ১ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। এবারও আশঙ্কায় আছি।

উপজেলার গড়গড়ির পাট চাষি শফিকুল জানান, আষাঢ়ে বৃষ্টির দেখা না পেলেও শ্রাবণে বৃষ্টি পেয়ে পাট জাগ দিতে সুবিধা হয়েছে। সবাই এখন পাট জাগ দেওয়ার পর পানিতে থেকে সোনালী আঁশ বের করার জন্য ব্যস্ত।

চাষি আফজাল হোসেন বলেন, বাজারে পাটের দাম ভালো হলে এ বছর একটু লাভের মুখ দেখা যাবে। তা না হলে আগামীতে পাটের বদলে অন্য অবাদ নিয়ে ভাবতে হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, রাজশাহীতে এ বছর ৯০ শতাংশ জমিতে ভারতীয় ‘জিআরও-৫২৪’ জাতের পাট চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে পাট চাষ কম হলেও ফল ভালো হয়েছে। এখন পাট দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। এতে পাটের চাহিদা বাড়ছে। আর চাহিদা বাড়লে পাটের দামও বাড়বে। আশা করছি, চাষিরা এবার লাভবান হবে।

ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/আরআর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :