ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গে গণমাধ্যমের সখ্যতা কাম্য নয়

ড. কাজী এরতেজা হাসান
 | প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১৯:৩৯

বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গত সোমবার এক চা চক্রের আয়োজন করেন। অ্যামেরিকান ক্লাবের এই চা চক্রটিকে বলা হয়েছে বার্নিকাটের বিদায় উপলক্ষে সুশীলদের সঙ্গে বৈঠক। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই চা-চক্রে দাওয়াতি মেহমান হিসেবে যারা ছিলেন, তারা সবাই ওয়ান ইলেভেনের কুশীলব।

আমেরিকান ক্লাবে বার্নিকাটের চা-চক্রে ছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন, সিপিডির ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

ওয়ান ইলেভেনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। এছাড়াও ছিলেন দেশের প্রভাবশালী বাংলা ও ইংরেজি দুটি দৈনিকের দুজন আলোচিত সম্পাদক।

বার্নিকাটের বিদায়ী চা চক্র বলা হলেও, অতিথির তালিকা দেখে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের এক করার উদ্যোগ নিয়েছেন বার্নিকাট?

অবশ্য, গত কিছুদিন ধরেই মার্শা বার্নিকাটের তৎপরতা দেশের রাজনৈতিক সচেতন মহলে অনেক প্রশ্ন উদ্রেক করেছে। সম্প্রতি সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে একটি চা-চক্রে মার্কিন দূতাবাসের প্রটোকল ভেঙ্গে উপস্থিত হয়েছিলেন বার্নিকাট। এরপর চা-চক্রের অতিথিদের অনেকেই সেই চা-চক্রেরও অতিথি ছিলেন। আবার সম্প্রতি বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও নবগঠিত যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গেও দেখা গেছে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে।

বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কর্মকাণ্ড থেকে এটি স্পষ্ট যে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ওয়ান ইলেভেনের কুশীলব ও সুশীলদের ঐক্যবদ্ধের প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন বার্নিকাট। ওয়ান ইলেভেনের অবস্থা যদি আরেকবার ফিরে দেখা হয়, তাহলে বোঝা যাবে ওই সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থান চেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেনা সহায়তায় এর প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চলে। এখন আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

সম্প্রতি একটি বিষয় হয়তো অনেকেই খেয়াল করেছেন, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুজন ও ড. কামাল হোসেন সবাই অভিন্ন ভাষায় কথা বলছেন। সবাই প্রায় একই ভাষায় সমালোচনা করছেন সরকারের।

গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পন্থা হলো নির্বাচন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে সুশীলদের নিয়ে কাজ করছে তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন এবং নির্বাচনে মূল্যহীন বলেই স্বীকৃত। এমন সুশীলদের নিয়ে তৃতীয় শক্তির খোয়াব শুধু খোয়াবই। নির্বাচনের মাঠে এই সুশীলদের জয়ী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা বা আশঙ্কা নেই।

তাই সুশীলদের নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৃতীয় শক্তির প্রচেষ্টা বৃথা বলেই মনে করছি। এই বিষয়টি নিশ্চয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও অজানা নয়। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের ধারক দাবিদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুশীলদের নিয়ে তৃতীয় শক্তির উত্থানের পরিকল্পনা তবে কি ভিন্ন কোনো পথে?

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বার্নিকাটের সাম্প্রতিক চা-চক্রসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডসহ উল্লিখিত বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। এই জল্পনা-কল্পনা শেষ পর্যন্ত কোনো পথে বাস্তবে মোড় নেবে তা কয়েক মাসের মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

তবে ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের পক্ষে কেন গণমাধ্যমের একটি অংশ কেন বারবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে তা বোধগম্য নয়। ওয়ান ইলেভেনের সময় গণমাধ্যম থেকে শুরু করে দেশব্যাপী কি এক অস্থির অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করেছিল, সেটাও বোধহয় তারা ভুলতে বসেছেন। দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমই গোপনে ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের পক্ষে কাজ করছেন বলে ধারণা করছি। গণমাধ্যমের এমন আচরণ কখনোই কাম্য হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই ধারাকে ব্যাহত করতেই কি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এসব গণমাধ্যম? এই যৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর সময়ই দিয়ে দিবে। আমি কোনোভাবেই ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষে গণমাধ্যমের অবস্থানকে মানতে পারছি না। আমি এটাও বিশ্বাস করি, দেশে পরিচালিত ৭০ শতাংশ মিডিয়া হাউজ রয়েছে যারা বাইরে বাইরে আওয়ামী লীগ পন্থী বলে পরিচয় দিচ্ছে এবং সরকারের সব সুযোগ সুযোগ নিচ্ছে। ভেতরে ভেতরে তারাও ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্রকারীদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশপ্রেমিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কাছে এমন তথ্য রয়েছে বলেও বিশ্বাস করি। এখনই সময়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। কেননা মিডিয়ার এই যুগে মানুষ গণমাধ্যমকে বিশ্বাস করে। সেখানে যা বলা হচ্ছে সেটাই তারা সঠিক মনে করছে। এ অবস্থায় ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষে রয়েছে এমন মিডিয়া হাউজগুলোর অপতৎপরতা রোধ করা জরুরি।

এক্ষেত্রে আমাদের আরো সজাগ থাকতে হবে, যেন ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা কোনোভাবেই ষড়যন্ত্রে সফল হতে না পারে। সাংবাধানিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশে ক্ষমতার পালাবদল হবে বলে বিশ্বাস করি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

লেখক: সম্পাদক, ভোরের পাতা এবং দ্যা পিপলস টাইমস

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :