মাদারীপুরে পাট চাষে লোকসান গুণতে হচ্ছে চাষিদের

সাগর হোসেন তামিম, মাদারীপুর
 | প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০১৮, ২৩:১৩

‘চার বিঘা জমিতে দেশি পাটের আবাদ করেছিলাম। জমিতে পাটের চারা থাকা অবস্থায় অতি বৃষ্টিতে চারা পানিতে তলিয়ে ছিল। তাই পাট গাছ বেশি বড় হতে পারেনি। এই বছর পাটের ফলনও খুব খারাপ।’ এবছর পাট চাষে দিশেহারা হয়ে এভাবেই বলেছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া গ্রামের পাটচাষি জাহাঙ্গীর শরীফ।

পাটচাষে এবছর এমন পরিস্থিতি শুধু জাহাঙ্গীর শরীফেরই নয়। একই ধরনের অবস্থা জেলায় কয়েক হাজার পাটচাষির। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার মাদারীপুরে পাটের ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। এতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। উঁচু জায়গায় পাট ভালো হলেও অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গায় ফলন ভালো হয়নি। আবার যেখানে পাটের ফলন ভালো হয়েছে, সেখানে পানির অভাবে জাগ দিতে সমস্যায় পড়ছেন কৃষকরা। এসব কারণে লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, মাদারীপুরে অন্তত লক্ষাধিক কৃষক পাট চাষের সাথে জড়িত। চলতি বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৭৮ হেক্টর জমি। যার ভেতরে মাদারীপুর সদরে ৭ হাজার ৪৯৮ হেক্টর, কালকিনি ৫ হাজার ৩৬০ হেক্টর, রাজৈর ৬ হাজার ৮৩০ হেক্টর এবং শিবচর উপজেলায় ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে দেশি, তোষা ও মেস্তা জাতের পাটের চাষ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উঁচু জমিতে পাটের ফলন ভালো হলেও নিচু জমিতে ভালো হয়নি। মৌসুম শেষ হতে চললেও ছোটই রয়ে গেছে অনেক জমির পাট। ইতিমধ্যে পাট কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরিণত পাটগুলো কেটে ইতিমধ্যে জাগ দিতে শুরু করেছেন কৃষকরা। অনেক জায়গায় ছোট ছোট পাটগাছ ক্ষেতেই রয়ে গেছে। যেসব জমির পাট কাটার উপযোগীই হয়নি সেসব জমির কৃষক লোকসানের আশঙ্কা করছেন। আগামী ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ দিন পাট রাখা যাবে ক্ষেতে। তারপরই শুরু হবে আমন মৌসুম।

প্রান্তিক চাষিরা বলছেন, এবার জমিতে পাটের চারা থাকার সময়ে অতি বৃষ্টিতে ক্ষেত তলিয়ে থাকায় মাদারীপুরে পাটের ভালো ফলন হয়নি। ফলে এবার পাট চাষ করে চাষিদের লোকসান গুণতে হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চরমুগরিয়া, পেয়ারপুর, ধুরাইল, হাউজদি, কুনিয়া, ভরুয়াপাড়া, বনগ্রাম, রাস্তি ও কালকিনি উপজেলার কর্ণপাড়া, মাইচপাড়া, নবগ্রাম, বালিগ্রাম ও রাজৈর উপজেলা বাজিতপুর, কদমবাড়ি, কবিরাজপুর বদরপাশার, শাখারপার, সরমঙ্গল, হোসেনইপুরসহ কয়েকটি গ্রামের পাটচাষিরা ক্ষেত থেকে পাট কেটে তা পাশের ডোবা, পুকুর বা মরানদীতে জাগ দিচ্ছেন। কয়েকটি গ্রামে আবার দেখা গেছে, নারী-পুরুষ মিলে একত্রে পাটের আঁশ ছাটাই করছেন। ছাটাই করা আঁশ চাষিরা তুলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে।

রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট সরমঙ্গল গ্রামের কৃষক সিরাজ মুন্সী বলেন, এ বছর ফলন ভালো হয়নি। অসময়ে অতি বৃষ্টির কারণে পাটের চারা গাছ বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটেছে। পাটের ফলনের আগে সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকার কিস্তি তুলেছি। এখন যে ফলন হয়েছে, তা দেখে লাভ নিয়ে হতাশায় মধ্যে পড়েছি।

কালকিনি ইউনিয়নের পূর্ব মাইচপাড়া গ্রামের চাষি সত্তার আকন বলেন, আমার ৬ শতাংশ জমিতে আগাম পাটের আবাদ করেছিলাম। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে অর্ধেক বীজই গজায়নি। এরপর চারা কিছুটা বড় হওয়ার পর অতি বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে গোড়া পচে গেছে। এবার পাট চাষ করতে গিয়ে লাভের বদলে ক্ষতি হয়ে গেছে।

কালকিনি উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পাটচাষি মামুন বেপারী বলেন, আমাদের অঞ্চল পাট ও আলু চাষের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এবার পাটচাষিদের মাথায় হাত। রোদ ও বৃষ্টির ভারসাম্য ছিল না। এছাড়া ঝড়ে চারা মাটিয়ে শুয়ে গেছে। এগুলো আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জিএমএ গফুর বলেন, নিচু জমিতে পাটের ভালো ফলন না হলেও উঁচু জমিতে তুলনামূলক ভালো ফলন হয়েছে। তবে হতাশার কোন কারণ আপতত নেই। এ বছর পাটচাষে আমরা যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিলাম, তা পূরণ না হলেও প্রায় কাছাকাছি থাকবে। আমরা আশা করছি, প্রান্তিক চাষিরা এবারো পাটের দাম ভালো পাবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/নিজস্ব প্রতিবেদক/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :