ফ্যাশন
এই ঈদেও নতুন পোশাক!
প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১২:৩৯
এক ঈদ যায়। আসে আরেক ঈদ। আর উৎসবের এমন দিন কাছে এলেই বেড়ে যায় দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর কর্মযজ্ঞ। এর মাধ্যমে ক্রেতারা পান নতুন নকশার পোশাক। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদুল আজহায়ও আসছে নতুন নকশার পোশাক। তবে ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদুল আজহায় পোশাক নিয়ে মাতামাতি একটু কমই থাকে।
আড়ংয়ের ফ্যাশন ডিজাইনার ফয়েজ হাসান বলেন, এবারের ঈদে না ক্ল্যাসিক, না ট্রেন্ডি কোনোটারই ধারাবাহিকতা নেই। আসলে ডিজাইনের ক্ষেত্রে আমরা কোথায় যাব সেটা এবারের ঈদের পোশাকে বোঝা যাচ্ছে না। কোথায় যাব বলতে বুঝাতে চাইছি, আমরা কি আমাদের সংস্কৃতিটাকে ধরেই এগোবো, নাকি পশ্চিমা ঢংটাকেও সঙ্গে রাখবো; এমন একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া যাবে এবারের ঈদের পোশাক দেখলে। বলা যায় ডিজাইন, কাটিং বা প্যাটার্নে আমরা কিছুটা অস্থিরতার মধ্যে এগোচ্ছি। অবশ্য পাকিস্তানি লন জাতীয় পোশাকের ব্যবহার দিন দিন কমছে, তেমনি অন্যদিকে দেশীয় পোশাকের কদর বাড়ছে। আর এটাই এখনকার এ ইন্ডাস্ট্রির বড় সাফল্য বলা যায়। সবচেয়ে বড় পজিটিভ লক্ষণ।
অন্যদিকে তাকালে ঈদের পোশাকে দেখা যাবে পশ্চিমা ও নিজস্ব সংস্কৃতির একটা মেলবন্ধন। তবে লুকিং বা পলিশের দিকটায় খুব একটা উন্নতি চোখে কম পড়ছে।
বরাবরের মতো আমরাও নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে ক্ল্যাসিক বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নকশিকাঁথা বা এ জাতীয় বিশেষ বিষয়গুলোকে কাজে লাগানো হয়েছে। তবে কাটিং বা প্যাটার্ন বলতে গেলে পুরোটাই আধুনিকায়ন; যেখানে ক্ল্যাসিকভাবটা কম এসেছে।
এ বিষয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার আকাশ বলেন, কয়েক বছর ধরেই মেয়েদের পোশাকে ফিউশন কাট আর ডাবল লেয়ারের প্রচলনটা বেশ চলছে। সে ধারাবাহিকতা থাকছে এবারের ঈদের পোশাকেও। সেটা লং কিংবা শর্ট সব পোশাকের ক্ষেত্রেই বিদ্যমান কিংবা বলা যায় শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপসÑসব ক্ষেত্রেই।
এদিকে কয়েক বছর ধরে ছেলেরা ধাবিত হয়েছে কালারফুল পোশাকে। এবারও তার ধারাবাহিকতা থাকছে। তবে এবার প্রিন্টের চেয়ে সলিড কালারের পোশাক বেশি দেখা যাবে বা আসছে। অবশ্য ছেলেদের প্যাটার্ন বা কাটিংয়ে খুব একটা পরিবর্তন নেই বললেই চলে। সেটা শার্ট কিংবা প্যান্টের বেলায়ও। অন্যদিকে মেয়েদের বেলায় প্যাটার্ন বা কাটিংয়ে কিছুটা পরিবর্তন আসছে; তা-ও সেটা আগের কাজের ধারাবাহিকতার সঙ্গে মিল রেখেই হচ্ছে। অন্যদিকে বলতে গেলে কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও পশ্চিমা ঘরানার ডিজাইন চোখে বেশি পড়ছে। সেটা ছেলেদের পোশাকে হোক বা মেয়েদের পোশাকেই; উভয় ক্ষেত্রেই সমান। এছাড়াও এখনো ঈদেও মতো উৎসব-পার্বণগুলোতে পশ্চিমা ঘরানার পোশাকই বেশি চলছে। সেক্ষেত্রে দেশীয়টা একটু কম। তবে ধীরে ধীরে হলেও দেশীয় পোশাকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আর সেজন্যই এবারের পোশাকের ডিজাইনেও রয়েছে পশ্চিমা আর দেশীয় ঘরানার একটা মেলবন্ধন। অবশ্য অনৈক ফ্যাশন হাউসই পুরোপুরি দেশীয় ঘরানার ঢংয়ের পোশাকই উপস্থাপন করছে। তবে ফিউশন কাটের মাধ্যমে পাঞ্জাবিতে একটু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। অবশ্য সেটা সব ক্রেতা গ্রহণ করবে কি না তা-ও দেখার বিষয়।
বসুন্ধরা সিটির দেশীদশে ঈদের কেনাকাটার জন্য এসেছেন মালিবাগের হুমায়রা বেগম। তিনি বলেন, ফ্যাশন হাউসগুলো ঘোষণা দেয় নতুন ডিজাইনের পোশাকের। কিন্তু ঘুরেফিরে সেই গতানুতিক ধারার ডিজাইনই বেশি। বলা যায় শুধু ডিজাইনের নাম পরিবর্তন করে আনা হয়। অথচ ফ্যাশন ডিজাইনাররা বলে বেড়ান, এটা নতুন, ওটা নতুন ইত্যাদি। আবার তারা দেশীয় সংস্কৃতির কথাও বলে থাকেন। কিন্তু তাদের ডিজাইন করা পোশাকগুলোতে ভারতীয় পোশাকের ডিজাইনের প্রায় হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অন্যদিকে পশ্চিমা ঢংয়ের মিলতো আছেই। আসলে ডিজাইনাররাও তাদের গতানুতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না বলে মনে হয়। এ ক্ষেত্রে তারাও অনেকটা ‘জোয়ারের নৌকায় পাল তুলে দেওয়া’র মতো। সেটা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট বা অন্য সব পোশাকের মধ্যেই লক্ষণীয়।
দেশীয় ফ্যাশনের অন্যতম ব্র্যান্ড আড়ং এরই মধ্যে ঈদুল আজহার পোশাকের খবর পৌঁছে দিয়েছে মানুষের কাছে। নিজেদের বিক্রয় কেন্দ্রে তারা প্রদর্শনীরও আয়োজন করেছে। বরাবরের মতোই তাদের পোশাকের রঙে ও নকশায় রয়েছে বৈচিত্র্যের আমেজ; সেই সঙ্গে আবহাওয়া উপযোগী। আড়ংয়েরই উদ্যোগে তাগা বা তাগাম্যান ঈদুল আজহা উপলক্ষে এনেছে বৈচিত্র্যময় রং ও নকশার পোশাক।
দেশীদশের নিপুণ, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিয়ানা, কে ক্র্যাফট, রঙ বাংলাদেশ, অঞ্জন’স, নগরদোলা ও দেশালেও ঈদুল আজহা উপলক্ষে নতুন পোশাক এনেছে। এসব পোশাক সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুদের জন্য আনা হয়েছে।
উৎসব বা পার্বণে ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি পরা অনেকটা অলিখিত নিয়মে দাঁড়িয়েছে। তাই দেশের যেকোনো উৎসব বা পার্বণে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো অন্য পোশাকের পাশাপাশি পাঞ্জাবিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দেশীদশ ও অন্য ফ্যাশন হাউসগুলো এনেছে নানা রং ও নকশার পাঞ্জাবি।
পাঞ্জাবির পাশাপাশি এসব ফ্যাশন হাউস ঈদুল আজহা উপলক্ষে এনেছে নানা নকশার শার্ট। বসুন্ধরা সিটির দেশীদশের একটি হাউস থেকে ঈদ উপলক্ষে নিজের জন্য পাঞ্জাবি কিনেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, শার্টতো বারো মাসই পরি। তবে উৎসব বা অনুষ্ঠান উপলক্ষে পাঞ্জাবি পরতে ভালো লাগে। কারণ এতে একধরনের উৎসবের আমেজ ও শুভ্রতা প্রকাশ পায়।
পাঞ্জাবি বা শার্ট ছাড়া অনেকে টি-শার্ট বা পোলো শার্টেই খোঁজেন সব ঋতু বা উৎসবের আমেজ। সেজন্য অনেক ফ্যাশন হাউস বছরের সব ঋতু বা উৎসবেই আনেন নতুন নকশার টি-শার্ট বা পোলো শার্ট। এসব টি-শার্ট বা পোলো শার্টেও আছে ঈদের আমেজ। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের নিত্যউপহার, মেঘ, যোগী, আর্টিজানসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে টি-শার্ট ও পোলো শার্ট পাওয়া যাবে। দাম ৩৮০ থেকে ৭৮০ টাকা। আর পাঞ্জাবি ও শার্ট পাওয়া যাবে আড়ং, দেশীদশ, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে। পাঞ্জাবির দাম ১ হাজার ২৫০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা ও শার্টের দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।
ছেলেদের শার্ট, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট বা পোলো শার্টের পাশাপাশি মেয়েদের কুর্তি বরাবরের মতোই জনপ্রিয়। সে ধারাবাহিকতায় আসছে ঈদুল আজহায়ও দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো এনেছে নানা নকশার কুর্তি। বিশেষ করে যাদের সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ির প্রতি আগ্রহ কম তারা বেশি পরছেন কুর্তি। এছাড়া হাল ফ্যাশনে কুর্তির দ্যুতিও বেশ ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে এ সময়ে স্মার্ট লুক আনতে মেয়েরা জিনস, জেগিংস বা লেগিংসের সঙ্গে কুর্তি পরছেন হরহামেশা। বাজার ঘুরে প্রায় সব ফ্যাশন হাউসেই অন্য পোশাকের পাশাপাশি ঈদুল আজহা উপলক্ষে আনা কুর্তির সংগ্রহ রয়েছে বেশ। কুর্তির পাশাপশি এসব ফ্যাশন হাউসে ঈদুল আজহা উপলক্ষে এসেছে শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের নানা সংগ্রহ। বরাবরের মতো এসব শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের রঙে ও নকশায়ও রয়েছে উৎসবের বর্ণিলতা। আর আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে এসব পোশাকের কাপড় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে সুতি, লিলেন, তাঁত, বলাকা সিল্ক, অ্যান্ডি, ভয়েলসহ নানা কাপড়। আর রং হিসেবে আছে লাল, সাদা, মেরুন, অফ হোয়াইট, নীল, কমলা, হলুদ, গেরুয়া, ফিরোজা, অ্যাশ, বিস্কুট, বেগুনিসহ নানা রং। অবশ্য সাদাকালো ফ্যাশন হাউস শুধু সাদাকালো রঙেই করে থাকে তাদের সব পোশাক। এছাড়া নকশার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস তাদের পোশাকের নকশায় উপস্থাপন করেছে বিভিন্ন থিম।
আড়ং, দেশীদশ, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাবে কুর্তি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ। কুর্তি ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। শাড়ি ১ হাজার ৮০০ থেকে ৯ হাজার ৫০০, সালোয়ার কামিজ ১ হাজার ৮০০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা।