বস্তি ভেঙে হবে ২০ তলা ভবন, দৈনিক ভাড়ায় থাকবে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০১৮, ২১:১৯ | প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৩৮
ফাইল ছবি

বস্তিবাসীর দুঃসহ জীবনের অবসান ঘটাতে একটি পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে সরকার। রাজধানীতে কোনো বস্তি রাখতে চান না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সবগুলো বস্তি ভেঙে দিয়ে উঁচু ভবন করে দেবেন। আর বস্তিতে যে ভাড়ায় থাকে এসব বহুতল ভবনে থাকা যাবে।

এসব ভবনে ভাড়া পরিশোধে তিন ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। প্রতি মাসের হিসাবেও যেমন টাকা পরিশোধ করা যাবে, তেমনি কেউ চাইলে সপ্তাহের হিসাবে ভাড়া দিতে পারবে। এমনকি দিনের হিসাবেও দেয়া যাবে ভাড়া।

প্রধানমন্ত্রী জানান, এরই মধ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছেন গণপূর্তমন্ত্রী। আর তিনি সেগুলো দেখেও দিয়েছেন। প্রাথমিক কাজগুলো এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে এই পরিকল্পনার কথা জানান শেখ হাসিনা। দাসেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাষণ প্ল্যান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান ছিল এটি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন বস্তি যে দুরবস্থায় আছে, ঢাকা শহরে এই ধরনের বস্তি আর থাকবে না।…ইতিমধ্যে আমরা একটা প্ল্যান নিয়েছি যে, প্রত্যেক এলাকায় আমরা বহুতল ভবন নির্মাণ করে দেব।’

‘সবাই ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকবে, আর আমার গরিব মানুষরা থাকবে না, এটা আবার কেমন কথা? তাদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করে দেয়া হবে, সেখানে যারা দিনে দিনে পয়সা কামাই করে, তারা প্রতি দিনের ভাড়া দিনে দেবে, সেই ব্যবস্থা থাকবে। কেউ সাপ্তাহিক ভাড়া দিতে পারবে, সেই ব্যবস্থাও থাকবে। কেউ মাসে দিতে পারলে, মাসে দিতে পারবে। যে যেভাবে থাকতে চায়, সেভাবে থাকবে।’

প্রতিটি ভবন ২০ তলা করা এবং সেগুলোর ভাড়া নাগালের মধ্যে রাখার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বস্তির একটা কামরায় যে ভাড়া দিয়ে সে থাকে, ঠিক সেই ভাড়ায়ই সে থাকতে পারবে।’

এসব ভবনে বিদ্যুৎ ও পানির জন্য প্রিপেইড মিটার থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারাও একটু ভালো জীবন যাপন করবে, সেই ব্যবস্থাটা আমরা কিন্তু করতে যাচ্ছি।’

এই পরিকল্পনা নেয়ার কারণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ কেন এই ধরনের মানবেতর জীবন যাপন করবে? তারাও তো মানুষ। আর কেন বস্তিতে আসে? আসে তো কোনো না কোনো কারণে। কেউ আসে কাজের খোঁজে, কেউ আসে সামাজিক সমস্যার কারণে, কাউকে বের করে দেয়া হয়, কেউ আসে সম্পত্তির দ্বন্দ্বে।’

‘আমি নিজে প্রথম যখন প্রধানমন্ত্রী হই, আমি বস্তিবাসী থেকে নিয়ে এসে বাচ্চাদের পর্যন্ত সকলের ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম; তাদের সাথে বসে গল্প করে জানতে চেষ্টা করেছিলাম, কেন তারা এসে এই রকম মানবেতর জীবন যাপন করে?’

‘সেখানে অনেকগুলো তথ্য আমরা পেয়েছিলাম। অনেককে আমরা যার যার নিজের গ্রামে নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিতও করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে যে উন্নতিটা হবে, সেই উন্নয়নের ছোঁয়া উচ্চবিত্ত যেমন পাবে, তেমনি নিম্নবিত্ত, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও যেন পায়, সেটাই আমার লক্ষ্য। উচ্চবিত্তরা তো নিজের ভাগ্য গড়ে নিতে পারে, কিন্তু যারা একেবারে নিচে পড়ে আছে, তাদের দিকে কে তাকাবে?’

‘আমার রাজনীতি তাদের জন্য। এই কথাটা মনে রাখতে হবে। কারণ, জাতির পিতা এই সাধারণ মানুষের জন্যই রাজনীতি করে গেছেন। কাজেই আমার সব কাজে ওটাই লক্ষ্য।’

এই পরিকল্পনা অনুযায়ী এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে বলেও জানানো হয় অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার গণপূর্ত মন্ত্রী এখানে বসেই আছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটা প্ল্যান করেছে, সেগুলো আমি দেখে দিয়েছি। আমরা কাজ শুরু করেছি।’

‘এভাবে সমগ্র ঢাকা ঘিরে, শুধু ঢাকা না, আমি বলব, এখন থেকে যে প্ল্যানই করব, ঢাকা, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আমরা কাজ করব।’

বস্তিবাসীদেরকেও এই শহরে দরকার আছে-সেটিও জানিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বলেন, শহরের যত উন্নতি হয়, সাথে সাথে কাজের জন্য এই ধরনের লোক দরকার হয়, কর্মী লাগে। কিন্তু তাদের জীবনমানটা যেন উন্নতি হয় সেদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

যানজট নিরসনে হবে দ্রুতগতির ট্রেন

যানজট নিরসনে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার করার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ঢাকায় এসে দূরের জেলার মানুষও যেন কাজ করে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য দ্রুতগতির ট্রেন করে দেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।

‘আমার লক্ষ্য হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকায়-একেবারে পায়রা বন্দরসহ অর্থাৎ রাজধানীর সাথে বিভাগীয় শহরগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য দ্রুতগতির রেল… যেমন বুলেট ট্রেন আছে জাপান, চায়নাসহ পৃথিবীর সমস্ত উন্নত দেশে, সেই ধরনের বুলেট ট্রেন সিস্টেম আমরা করে দেব। তেমনি নৌপথ আরও ভালোভাবে চালু করা আর সড়কগুলো আমরা আরও উন্নতমানের করে দেব, যেন রাজধানীতে দিনে দিনে এসে কাজ করে তারা ফিরে যেতে পার।’

‘আর ঢাকা ঘিরে বহুতল ভবন বিশিষ্ট শহর করে দিতে চাই, যাতে রাজধানী ঢাকার ওপর চাপটা কম পড়ে।’

উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পর গ্রামে থাকতে মানুষ পছন্দ করবে বলেই বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর। বলেন, ‘গ্রামে পরিবেশটাও ভালো, বাতাসটাও ভালো, থাকতেও আরাম, খেততেও আরাম, ঘুমাতেও আরাম।’

‘কাজেই সবাই ঢাকায় এসে কাজ করে যেন ফিরে যেতে পারে, সে ব্যবস্থাটা করতে চাই। দেশকে আমরা উন্নত করতে চাই, সমৃদ্ধ করতে চাই।’

ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :