শেষ দিনেও লণ্ডভণ্ড ট্রেনের শিডিউল, দুর্ভোগ

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৮, ১৫:২৮ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০১৮, ১৭:০৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ঈদযাত্রার শেষ দিনেও ট্রেনের শিডিউলে চরম বিপর্যয় ঘটেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা থেকে বিভিন্ন ট্রেন নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পরে ছেড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। আর যেসব ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে সেগুলোতে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়।

কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, সকাল থেকেই পুরো স্টেশনজুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভিড় ঠেলে ব্যাগ, লাগেজ হাতে নিয়ে ছুটছেন কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দিকে। কেউবা ভিড় ঠেলে গেট দিয়ে ভেতরে উঠছেন, যারা পারেননি তাদের কেউবা জানালা দিয়ে প্রথমে ব্যাগ, পরে পরিবারের সদস্যদের ট্রেনের ভেতরে ঢোকাচ্ছেন, এরপর নিজেও উঠছেন ওই জানালা দিয়েই। মুহূর্তের মধ্যেই ট্রেনে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ট্রেনের ছাদেও ফাঁকা নেই। পুরো ট্রেনের ছাদজুড়ে মানুষ আর মানুষ। ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

সান্তাহারে যাওয়ার জন্য উত্তরবঙ্গের চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবির। ট্রেনটি সকাল আটটায় স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১১টায়ও স্টেশনে আসেনি। পরিবর্তিত ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় দেয়া হয়েছে ১২টা ৪০ মিনিট। ট্রেন আসতে দেরি হওয়ায় বন্ধুদের নিয়ে গান গাইছেন আবির।

আবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতিবার সড়কে যানজটের ভোগান্তি, সে কারণে আগেই ট্রেনের টিকিট কাটলাম। এখন এসে দেখি ট্রেন পাঁচ ঘণ্টা লেট। কি আর করা এই জন্য বন্ধুদের নিয়ে গান গাচ্ছি, সময় তো কাটাতে হবে।’

শুধু নীলসাগর এক্সপ্রেসই নয়, প্রায় অধিকাংশ ট্রেনই নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী ছেড়ে যেতে পারছে না। এর ফলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখো যাত্রীদের।

রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ছয়টায় কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ১০টাতেও এসে পৌঁছাতে পারেনি ট্রেনটি।

রংপুর এক্সপ্রেস সকাল নয়টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেয়া হয়েছে দুপুর দুইটায়।

খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৬টা ২০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তিন ঘণ্টা ২৫ মিনিট বিলম্ব করে ৯টা ৪৫ মিনিটে ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যায়।

রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী ওহিদুল ইসলাম পরিবার নিয়ে যাবেন গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে। ওহিদুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, পরিবার নিয়ে বাড়ি যাব। তুলনামূলক ঝামেলা কম ট্রেনে, এজন্য ১২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছি। কিন্তু ট্রেনের যে অবস্থা, তাতে ছোট স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছি। প্রতিটা যাত্রী আসহায় অবস্থায় শত বিড়ম্বনা নিয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছে। উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ ট্রেন ৪/৫ ঘণ্টা করে লেট।

ভিড় ঠেলে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে উঠতে পেরেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজুল ইসলাম। ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লেট করে ট্রেনটি ছাড়ছে। ট্রেনের ভেতরে-ছাদে কোথাও একটু ফাঁকা নেই। পুরো ট্রেনজুড়েই শুধু যাত্রী আর যাত্রী। অনেকে আছেন টিকিট থাকার পরও নিজের আসন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। সবচেয়ে ভোগান্তির বিষয় ট্রেনটি অতিরিক্ত লেট। ঈদ যাত্রায় প্রতিবারই এমন ভোগান্তি হয়। এবার ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা নেই।

কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ঈদযাত্রায় প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ থাকায় ট্রেন তার নিজস্ব গতির চেয়ে ধীরগতিতে চলছে। এ ছাড়া প্রতিটি স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামা করার কারণে আরও বেশ কিছু সময় অতিরিক্ত লেগে যাচ্ছে। ফলে ট্রেনগুলো দেরিতে আসছে। কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন দেরিতে আসায় কিছুটা বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে।

কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মোট ৫৩টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে তিনটি ঈদ স্পেশাল, বাকিগুলো আন্তঃনগর, লোকাল ও মেইল সার্ভিস।

ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/জিএম/এমআর