ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানী
চিরচেনা রাজধানী এখন ফাঁকা। শহরের রাস্তা জুড়ে নেই যানজট আর কোটি মানুষের আনোগোনা। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছেন নগরবাসী। রাজধানীর অধিকাংশ সড়কই একই অবস্থা। সবখানে সুনসান নীরবতা। গোটা নগরী ফাঁকা হলেও আগে ঈদের রাতে বড় ধরণের ছিনতাই, খুন বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
নগরীতে কমে এসেছে গণপরিবহন, রিকশা সিএনজি অটোরিকশাও। রাজধানীর রাস্তাগুলো এখন প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের দখলে। অনেকটা নির্বিঘ্নে চলাচল করছেন নগরবাসী।
ঈদের আগের দিন দুপুরের পর থেকে রাজধানীজুড়ে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। রাজধানীর মতিঝিল, ফার্মগেট, গুলশান, ধানমন্ডি, শাহবাগ, মিরপুর, বনানী, নিউমার্কেট প্রায় সব এলাকায় একই অবস্থা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের চিত্র ছিল গতানুগতিক। তবে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম বলে যানজট ছিল না।
রিকশাচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, টিকিট না পেয়ে দ্যাশে যাইতে পারি নাই। বউ পোলাপাইন গতকালই ট্রেনে বাড়ি গেছে। এখন যা ভাড়া মারছি তাই লাভ। একই কথা জানালেন সিএনজি চালক রহিম মিয়া। তিনি জানালেন, ঈদে ঢাকায় বাড়তি আয় হয়। কয়েকদিন পরে বাড়ি যাবেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই ফাঁকা হতে থাকে রাজধানী। চাকরিজীবীরা আগেই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে সোমবার ঈদের আগে শেষ কার্য দিবসে রাজধানীর রাস্তাগুলোতে ছিল ঘরমুখো মানুষের স্রোত।
ঈদে প্রতিবারের মতো রাজধানীর গার্মেন্টগুলোতে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়া হয়। কেউ কেউ দু’তিন দিন আগে থেকেই গার্মেন্ট ছুটি দিয়ে দেয়। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর অনুরোধে এই কাজ করা হয়। এর ফলে নগরী ফাঁকা হতে তাকে বেশ আগে থেকেই।
মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর, সাভার, শেওড়াপাড়ার গার্মেন্ট এলাকাগুলো ফাঁকা দেখা গেছে। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। গার্মেন্টের কর্মীরা নিজ উদ্যোগে এসব গাড়ি ভাড়া করে এনেছেন। বিভিন্ন জেলার কর্মীরা একসঙ্গে বাড়ি যাবেন।
ব্যাবিলন গ্রুপের গার্মেন্টের সিকিউরিটি গার্ড শহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, দুপুরের পর থেকে এসব গাড়ি ছেড়ে যায়। মালিক পক্ষের সহযোগিতায় গার্মেন্টের কর্মীরা নিজেরা একত্রিত হয়ে এসব গাড়ি ভাড়া করে থাকেন।
প্রতিবার নগরবাসীকে বাড়ি ফিরতে বিড়ম্বনায় পড়তে হলেও এবার একটু বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে উন্নয়ন কাজ আর মেট্রোলেন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় যাতায়াতে কিছুটা বাড়তি বেগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের।
পল্টনে এলাকায় দেখা যায় প্রেস ক্লাবের উল্টো পাশ দিয়ে পল্টন আসা হয় মেইন রোড হয়ে। রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে।
ফলে এক লাইনে চলতে হচ্ছে বিভিন্ন বাসগুলোকে। এজন্য গাড়ির সংখ্যা কম হলেও কিছু সময় লাগছে পল্টন মোড় পার হতে।
এদিকে গতকাল রেল, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল ঘরমুখো মানুষের ঢল। রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশন ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই উঠেছেন ট্রেনের ছাদে।
এছাড়া প্রতিটি ট্রেনই ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা দেরিতে স্টেশন ছেড়ে গেছে। মানুষের বাড়তি চাপের কারণে ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
ঢাকাটাইমসের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা জানান, ঈদের আগের রাতে নগরীজুড়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বাড়িতে ফেরার সময় যাত্রাপথে কিংবা বাসা বাড়িতে কোনো বড় ধরনের ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি, খুনের ঘটনা ঘটেনি।
মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি থাকলেও কোনো ধরনের ডাকাতি বা ছিনতাই হয়নি।
ঈদে যাত্রীদের ঘরে ফেরা উপলক্ষে বাস-ট্রেন ও লঞ্চঘাটে নিরাপত্তার দায়িত্বে র্যাব-পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন ছিল। ফলে এখন পর্যন্ত রাজধানীর কোথাও কোনো অপ্রতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। রাজধানী ফাঁকা হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন রাজধানীবাসী।
(ঢাকাটাইমস/২২ আগস্ট/ওআর)