ফাঁকা রাজধানীর পিচঢালা পথে বাঁধুন মনটা

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০১৮, ০৮:২৬

ঈদের ঢাকা এখন পুরোপুরি ফাঁকা। প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার নিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট যাতায়াতে বেড়ানোর দারুণ এক সময়।

দালান-কোঠা আগের মতোই আছে, কিন্তু রাজধানীর সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের আধিক্য। ফলে রাজধানীকে এখন দেখাচ্ছে অবারিত। দৃষ্টি সুখকর। সড়কে দাঁড়িয়ে সামনে চোখ মেলে দিলে খোলা আকাশের আহ্বান। এক অচেনা ঢাকা। এই ছুটিতে রাজধানীর সড়কে রিকশা করে কিংবা হেঁটে বেড়ালেও মিলবে বিমল আনন্দ। আপনার মন তখন গুনগুনিয়ে উঠতে পারে- ‘পিচঢালা এই পথটাকে ভালোবেসেছি/তার সাথে এই মনটাকে বেঁধে নিয়েছি।’

তাই এক অর্থে পুরো ঢাকাই এখন এক বিনোদন কেন্দ্র হলেও পিচঢালা পথগুলো আপনাকে আরও নানা বিশেষায়িত বিনোদনকেন্দ্রে পৌঁছে দিতে পারে যদি আপনি চান।

শিশু পার্ক, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা, রায়েরবাজার বধ্যভুমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, নভোথিয়েটার, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, শাহবাগ জাদুঘর, কার্জন হল, রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, ধানমন্ডি লেক, হাতির ঝিল, খিলক্ষেত-পূর্বাচল ৩০০ ফুট, দিয়াবাড়ি, বুড়িগঙ্গা নদীসহ বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আপনার জন্য প্রস্তুত।

আসুন কয়েকটি বেড়ানোর জায়গা সম্পর্কে জেনে নিই-

হাতিরঝিল

হাতিরঝিল এখন মনোরম এক বিনোদনকেন্দ্র। আর ঈদের ছুটির সময় বিকালে মনে হয় সবাইকে যেন আহ্বান জানানো হয়েছে এখানে আসার জন্য। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সবাই এসে ভিড় করে এখানে। পরিবার নিয়ে ঘুরে যেতে পারেন হাতিরঝিল। সাধারণত বিকালে বেশি জমে ওঠে জায়গাটি। তবে ছুটির দিনে সকাল থেকেই লোকজনের আনাগোনা চলতে থাকে। আর রাতে ব্রিজের নিচ থেকে আলোর ঝলকানি অন্য এক রূপ দেয় হাতিরঝিলের।

দিয়াবাড়ী

লেকের শীতল বাতাস, সবুজ প্রান্তর, কাশবন- সব মিলিয়ে এক চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশ দিয়াবাড়ীতে। রাজধানীর ভেতরে এ যেন এক ভিন্ন জগৎ। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ীতে ঘুরে আসতে পারেন।

শিশুপার্ক

শিশুদের ঈদ আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় যদি তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শিশুপার্কে। ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত শিশুপার্কে ঘুরে আসতে পারেন পরিবার নিয়ে। টয় ট্রেন, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযানসহ বেশ কিছু রাইডে আছে এখানে।

ঢাকা চিড়িয়াখানা

মিরপুরে এক মনোরম প্রকৃতিক পরিবেশে ঢাকা চিড়িয়াখানা অবস্থিত। ছবিতে কিংবা টিভিতে দেখা নানা ভয়ানক প্রাণী চোখের সামনে ঘুরছে, সে এক রোমাঞ্চকর ব্যাপার। সেখানে যেমন আছে বাঘ, সিংহ, কুমির, অজগর, তেমনি আছে হরিণ, হাতি, বানর, ময়ূরসহ আরও কত কত প্রাণী। চিড়িয়াখানা তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা যায়, এখন ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী রয়েছে।

বোটানিক্যাল গার্ডেন

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম বাংলাদেশে উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। কেন্দ্রটি ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন নামেও পরিচিত। চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে অনেকেই এখানে কিছুটা সময় কাটাতে আসেন। ঘুরে আসতে পারেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। তবে উদ্ভিদ উদ্যানের খুব বেশি গভীরে বা নিরিবিলিতে যেতে চাইলে দল বেঁধে যাবেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে বর্তমানে ১১৭টি গোত্রভুক্ত ৯৫২ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৬টি প্রজাতির ৩৫ হাজার বৃক্ষ, ৩১০ প্রজাতির ১০ হাজার গুল্ম, ৩৭৮ প্রজাতির ১২ হাজার বিরুৎ ও লতা জাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে।

এই ঢাকাতেই লুকিয়ে আছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। প্রাচীন ইতিহাস, সভ্যতা ও স্থাপত্যের টানে প্রায় সময়ই এসব স্থানে ভিড় লেগে থাকে দর্শনার্থীদের। ঢাকার দক্ষিণাংশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে রয়েছে লালবাগ কেল্লা ও আহসান মঞ্জিল। কাছাকাছি হওয়ায় একই সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন এ দুটি স্থান। এখানে যাওয়ার পথেই দেখে যেতে পারেন আঠারো শতকের প্রথম দিকের তারা মসজিদ।

লালবাগ কেল্লা

এটি একটি প্রাচীন দুর্গ। মোঘল আমলে পুরান ঢাকার লালবাগে নির্মিত দুর্গটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। লালবাগের কেল্লার নকশা করেন শাহ আজম। লালবাগ কেল্লার তিনটি স্থাপনার একটির মধ্যে রয়েছে পরী বিবির সমাধি। শায়েস্তা খাঁ তার মেযের স্মরণে এই মনোমুগ্ধকর স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। লালবাগ কেল্লার প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলেই বরাবর সোজা চোখে পড়ে পরী বিবির সমাধি।

আহসান মঞ্জিল

পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল। এটি আগে ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারি। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আহসান মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি তার ছেলে খাজা আহসানুল্লাহর নামে এর নামকরণ করেন। ১৮৫৯ সালে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণকাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৮৭২ সালে। সুরম্য এ ভবনটি ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন। ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ক্রমবিকাশের বহু স্মরণীয় ঘটনাসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্মৃতি বিজড়িত এই আহসান মঞ্জিল। এ ভবনেই ঢাকায় প্রথম বিদ্যুৎ চালু হয়।

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য আছে নওয়াব আমলের ডাইনিং রুম, নওয়াবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না, আলমারি, সিন্দুক, কাচ ও চিনামাটির থালাবাসন, নওয়াবদের অতি বিশ্বস্ত হাতির মাথার কঙ্কাল গজদন্তসহ, নওয়াব আমলের বিভিন্ন ধরনের অলংকৃত রুপা ও ক্রিস্টালের তৈরি চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ফুলদানি, আতরদানি, পানদান, নবাবদের ড্রয়িং রুম, নাচঘর, সোনা ও রুপার তারজালিকাজ, আহসান মঞ্জিলের মডেল।

তারা মশজিদ

তারা মসজিদ পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত। সাদা মার্বেলের গম্বুজের ওপর নীলরঙা তারায় খচিত এ মসজিদ নির্মিত হয় আঠারো শতকের প্রথম দিকে। মোঘল স্থাপত্যশৈলীর প্রভাব রয়েছে এ মসজিদে।

(ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/ডিএম/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :