‘আমাদেরও দায়িত্ব আঙিনা পরিষ্কার রাখা’
বাসা থেকে বের হয়েই পারভেজ হোসেন দেখতে পেলেন দুটি বস্তায় পশুর বর্জ্য পড়ে আছে রাস্তায়। কয়েকটি পলিথিনের ভেতরে পশুর নাড়িভুড়ি সেখানে। দুর্গন্ধ বের হচ্ছে তা থেকে। অথচ সরু গলিটি পার হয়ে একটু এগিয়ে গেলেই আছে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন। কিন্তু সেখানে গিয়ে বর্জ্য ফেলে আসতে আলস্য কারও কারও।
পারভেজ হোসেন থাকেন রাজধানীর হাতিরপুল এলাকায়। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা অনেক টাকা দিয়ে পশু কোরবানি দিই, কিন্তু সেই পশুর বর্জ্যটা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলি না। অথচ আমরা সচেতন হলেই বর্জ্যটা বস্তায় ভরে কাছাকাছি কোনো ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। এতে সিটি কর্পোরেশনের লোক খুব সহজেই বর্জ্য পরিষ্কার করতে পারে।’
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মান উন্নয়নের জন্য কাজ করে স্কাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়াকার্স ইউনিয়ন। এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, সবাই যদি নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলত তাহলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের এই বর্জ্য পরিষ্কার করতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগত।
আবদুল লতিফ বলেন, তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পাঁচ হাজার ৩০০ কর্মীকে নিয়ে কাজ করছেন। এরই মধ্যে ৪০টি ওয়ার্ড তিনি পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ৮০ শতাংশ বর্জ্য পরিষ্কার হয়েছে সেখানে। নতুন করে আবার কেউ কোরবানি দিলে সেটা এখন পরিষ্কার করতে হচ্ছে।
কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কয়েক শ জায়গা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পশু জবাই করা হয়নি। আবদুল লতিফ বলেন, ‘আবার দেখা যায় অনেকে আছেন তারা কোরবানির পর কাটাকাটি করে মাংস নিয়ে যান, কিন্তু বর্জ্যের ব্যাপারে কোনো চিন্তা করেন না। মনে করেন এটা সিটি করপোরেশনের একার কাজ।’
এর উল্টো চিত্রও আছে। অনেকে কোরবানির পর সংশ্লিষ্ট জায়গাটি ধুয়ে-মুছে পরিচ্ছন্ন করে নেন। রাজধানীর ইস্কাটনের বাসিন্দা মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমরা আমাদের গ্যারেজের ভেতরে পশু কোরবানি দিয়েছি। এরপর সঙ্গে সঙ্গে পানি দিয়ে রক্ত ধুয়ে দিয়েছি। বর্জ্য নিজেরাই নির্দিষ্ট স্থানে ফেলেছি। আমাদের গলির প্রায় সবাই নিজ দায়িত্বে বর্জ্য পরিষ্কার করেছে। শুধু সিটি করপোরেশনের দিয়ে তাকিয়ে না থেকে আমাদেরও দায়িত্ব নিজের আঙিনা পরিষ্কার রাখা। সিটি করপোরেশনকে সহায়তা করা।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কর্মরত আছেন ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের এ ওয়ার্ডে শতভাগ বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে গেছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কেউ কেউ অতিরিক্ত পরিশ্রম করার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’
ওয়াহিদুজ্জামান জানান, তার ওয়ার্ডে ১০২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কাজ আরও দ্রুত হতো যদি নাগরিকদের সবাই তাদের দায়িত্ব পালন করতেন। তবে নাগরিকরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে বলে জানান তিনি।
কোরবানির পশুর বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেললে তা পচে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পরিবেশ দূষিত করে। শুধু তাই নয়, নালা-নর্দমায় ফেলা বর্জ্য থেকে ছড়ায় নানা ধরনের রোগজীবাণু। অতিরিক্ত বর্জ্যের চাপে নর্দমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমার পানি আটকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তখন সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এসব বর্জ্য অপসারণ করতে হিমশিম খায়।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের সহযোগিতা করার কথা বলেন নগরবিদরা। তারা মনে করেন, নাগরিকদের সচেতনতা আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রচেষ্টা মিলে পরিচ্ছন্ন নগর পাওয়া সম্ভব।
(ঢাকাটাইমস/২৩আগস্ট/জেআর/মোআ)