উন্নয়নশীল তুরস্ককে যেমন দেখছি-৬

তুরস্কে উচ্চশিক্ষায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ

রহমত উল্লাহ
| আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০১৮, ১৯:১৬ | প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৫৯

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের মিলনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তুরস্কের ১৮৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটিতেই রয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থী।

এশিয়া ও আফ্রিকার প্রায় সব দেশ এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়তে আসে তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তুরস্কের উচ্চশিক্ষা কমিশনের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১ লাখ ৮ হাজারের মতো (১,০৭,৯৪৭) শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ছিল। তাদের মধ্যে প্রায় ৬৬ শতাংশ ছেলে এবং ৩৪ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। গড়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫৮০ জন করে বিদেশি শিক্ষার্থী। তবে ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা, ইজমির, বুরসা, কোনিয়াসহ বড় শহরের বিশ্বদ্যালয়গুলোর প্রতিটিতেই সহস্রাধিক বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর আগমনের পেছনের কারণ নিয়েই এ পর্ব:

বোলোনিয়া ঘোষণা: ইউরোপীয় মান

১৯৯৯ সালের জুন মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যদেশগুলোর শিক্ষামন্ত্রীদের সমাবেশে ‘বোলোনিয়া ঘোষণা’ গৃহীত হয়। এ ঘোষণার আলোকে সদস্যদেশগুলো ২০১০ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ‘ইউরোপীয় উচ্চশিক্ষা এলাকা’ গঠনের পথ প্রশস্ত করে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউরোপের আদলে তুরস্কে তিন স্তরের উচ্চশিক্ষাকে ঢেলে সাজানো হয়। পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে শুরু করে মূল্যায়ন এবং গ্রেডিং সবকিছুই আনা হয় ইউরোপীয় মানে। ফলে তুরস্কের ডিগ্রি ইউরোপে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে।

পাশাপাশি তুরস্ক থেকে ইউরোপে এবং ইউরোপ থেকে তুরস্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেয়াদে বৃত্তিসহ পড়ার (ইরাসমুস) সুযোগ তৈরি হয়। ইউরোপীয় মানের কারণেই তুরস্কে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর আগমন ঘটছে।

ইরাসমুস ব্যবস্থা: প্রতি বছরই পড়া সম্ভব ইউরোপে

ইউরোপের সবগুলো দেশের সঙ্গেই তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তির আওতায় তুরস্ক থেকে প্রতি সেশনে নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বৃত্তিসহ ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পান। একইভাবে ইউরোপের দেশগুলো থেকেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আসেন তুরস্কে। ইরাসমুস+ প্রোগ্রামের আওতায় ইচ্ছা করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাছাই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেশন থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত প্রতি বছরই যেতে পারেন ইউরোপে। ইউরোপের প্রবেশদ্বার তুরস্কে ভর্তি হয়ে ইউরোপে পড়ার সুযোগের কারণেও বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণস্থলে পরিণত হয়েছে দেশটি।

তুরস্কে ভর্তি: সুযোগ আছে এশিয়ার দেশগুলোতে পড়ারও

তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু ইউরোপের সঙ্গেই যুক্ত নয়; এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গেও রয়েছে সমঝোতা চুক্তি। ‘মাওলানা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’-এর আওতায় তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা যেমন আজারবাইজান, কাজাকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেকগুলো দেশে পড়তে যেতে পারেন। তেমনি ওই সব দেশ থেকেও শিক্ষার্থীরা আসেন তুরস্কে। উল্লেখ্য, তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এশিয়ায় পড়তে যাওয়া এবং এশিয়া থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মাসিক খরচ তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হয়। এসব সুযোগও তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমনের পথ প্রশস্ত করেছে।

ফারাবি প্রোগ্রাম: পড়া যায় তুরস্কের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও

ইরাসমুস ও মাওলানা এক্সচেঞ্জের আওতায় যেমন বাইরের দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারা যায়; তেমনি ফারাবি প্রোগ্রামের আওতায় তুরস্কের অভ্যন্তরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ারও রয়েছে বড় একটি সুযোগ। প্রথম বর্ষের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সেশনগুলো নিজ বিশ্ববিদ্যায়ের বাইরে ১/২ সেশন করে পড়া যায়। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য এটিও অনেক ভালো একটি সুযোগ। ফলে শহরতলীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বড় শহরে পড়ার সুযোগ পেতে পারেন অনেক যোগ্য শিক্ষার্থী।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসন

তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক আসন বরাদ্দ রয়েছে। অর্থাৎ তুরস্কের উচ্চশিক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দিষ্টসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে সংখ্যার তারতম্য ঘটে, তবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়। ২০১৭ সালে তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর দুই বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ৫৯ হাজার ৪৫৩ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য আসন নির্ধারণ করে উচ্চশিক্ষা কমিশন।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে ৭১ হাজার ৫৮১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আসন বরাদ্দ রাখা হয়। খেলাধুলা, মিউজিকসহ বিশেষায়িত কোর্সগুলোতে রাখা হয় তিন হাজার ৭৪৯টি আসন। স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট পর্যায়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সংখ্যা বরাদ্দকৃত আসনসংখ্যা আরও ৪০ হাজারের মতো হবে (তুরস্কে সাধারণত স্নাতকোত্তর পর্যায়ে স্নাতকের অর্ধেক এবং ডক্টরেট পর্যায়ে স্নাতকোত্তরের অর্ধেক পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়)।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছর কমপক্ষে ১ লাখ ৭৫ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ রয়েছে। তবে তুরস্কে বর্তমান অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের মোট

সংখ্যার দিক থেকে হিসাব করলে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২৫-৩০ হাজার বিদেশি ভর্তি হন। তবে নিজ খরচে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের পরিমাণ বাড়লে তুরস্কে প্রতি বছর ভর্তি হওয়া বিদেশির সংখ্যা বাড়বে। আগ্রহী বাংলাদেশিরাও এ সুযোগ নিতে পারেন।

(আগামী পর্বে থাকছে: তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আর্থিক সামাজিক সুবিধা)

লেখক: সাংবাদিক ও পিএইচডি শিক্ষার্থী, কারাদেনিজ টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রাবজোন, তুরস্ক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :