এবারও কি সরাইল ছেড়ে দেবে আ.লীগ?

শেখ আদনান ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৫৩

ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পেয়ে মুগ্ধ হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে চরম অনৈক্য আর জনবিচ্ছিন্নতা দেখে হতাশ হয়েছি।

সামনে নির্বাচন। বিএনপি, এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতকে পর্যন্ত জনসংযোগ করতে দেখেছি, কিন্তু আওয়ামী লীগের কোন টিকিট প্রত্যাশীকে প্রকাশ্যে দেখলাম না।

সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ভাষা সংগ্রামী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরাইল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মো. আবু হামেদ সাহেব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড শুরু করেন, তখনই মহান নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন শেখ আবু হামেদ ও তাঁর সমমনারা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাইল আওয়ামী লীগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এমনকি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পরে শেখ আবু হামেদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল।

অথচ ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু পরীক্ষিত সৈনিক শেখ আবু হামেদকে না দিয়ে নমিনেশন দিয়েছিলেন ‘ঘনিষ্ঠ’ তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে। মূলত এরপর থেকেই পথ হারিয়ে ফেলে সরাইল আওয়ামী লীগ।

তাহের উদ্দিন ঠাকুররা কি শুধুমাত্র সরাইলকেই লাইনচ্যুত করেছিল? পুরো বাংলাদেশই পথ হারিয়েছিল তাহের উদ্দিন ঠাকুর আর খন্দকার মোশতাক গংদের অশুভ হাতের থাবায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম কুশীলব এই তাহের উদ্দিন ঠাকুর। সেই যে সরাইল আওয়ামী লীগ পথ হারাল, আর খুঁজে পায়নি।

নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়। সবাই বিজয় মিছিল করে, কিন্তু আওয়ামী লীগকে কখনো স্থানীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মিছিল বের করতে দেখিনি। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, এলাকার হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের একটা বড় অংশ পর্যন্ত এখন আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চায় না। এরা জাতীয় পার্টি, এমনকি বিএনপিকেও ভোট দেয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি গত দুই বার ধরে জাতীয় পার্টিকে দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তাহের উদ্দিন ঠাকুরের বাড়ী বলে হয়ত সরাইলকে খুব একটা ‘ভালো পায় না’ না কেন্দ্র আওয়ামী লীগ। না হলে এই আসনটি যুগ যুগ ধরে অন্য দলের কাছে ছেড়ে দিয়ে রাখার মানে কী হতে পারে?

সরাইলে ভাষা সংগ্রামী ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন এবং আছেন। মুক্তিযুদ্ধে সরাইলের মানুষের ঐতিহাসিক অবদান আছে। তাহলে সরাইলে কেন আওয়ামী লীগ দুর্বল অবস্থানে থাকবে? এর কারণ অনুসন্ধানের দরকার কেন্দ্র আওয়ামী লীগ কখনো অনুভব করেছে বলে তো মনে হয় না।

আমার জীবনে আমি সবসময়ই বিএনপি আর গত দুই টার্ম ধরে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বিজয়ী হতে দেখেছি। একটা আসনে বছরের পর বছর আওয়ামী লীগ বিরোধীদের হাতে ছেড়ে দিয়ে রাখলে, সে এলাকায় মানুষ কী জন্য আওয়ামী লীগ করবে? অথচ এলাকায় বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে সাধারণ মানুষজন।

সাধারণ মানুষ এখানে ধর্ম পরায়ণ হলেও ধর্মান্ধ নয়, সাম্প্রদায়িক নয়। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ নানা সরকারি পরিসেবা পেয়ে সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে এ আসন থেকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে এমন ভাবনা খুব কম মানুষের মধ্যেই দেখলাম। মানুষ বরং বিএনপি নিয়ে মজে আছে।

আওয়ামী লীগের সরাইল-আশুগঞ্জ অঞ্চলে দলীয় অবস্থা দুর্বল হওয়ার প্রধান কারণ দুটো। প্রথমত, কেন্দ্র থেকে অবহেলা আর দ্বিতীয়ত স্থানীয় পর্যায়ে মারাত্মক কোন্দল। নিজেদের কলহ নিয়ে ব্যস্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার সরকারের অসাধারণ সব উন্নয়নের বার্তা নিয়ে সাধারণ জনগণের কাছে যাওয়ার ফুরসত পাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ জ্বালাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। সে বিদ্যুতের আলোয় জনসংযোগ করছে বিএনপি, জামায়াতের প্রার্থীগণ।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :