গরু বিক্রির টাকাসহ ফেরার পথে বেওয়ারিশ দাফন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০১৮, ০৮:০২
প্রতীকী ছবি

গরু বিক্রির টাকা নিয়ে কুষ্টিয়া ফেরার পথে নিখোঁজ দুই কৃষকের একজনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়েছে। অন্যজনের খোঁজ নেই এখনো।

ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) রাতে ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে গরু বিক্রি করে ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন ওই দুই কুষক।

তারা হলেন- কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার মনোহরদিয়া ইউনিয়নের কন্দর্পদিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে আজিজুল মন্ডল ও একই এলাকার নুর মহম্মদের ছেলে লালটুসা।

আজিজুর মণ্ডলের লাশ ঈদের দিন বুধবার (২২ আগস্ট) সকালে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায় ঢাকা-ঈশ্বরদী রেললাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় না মেলায় পরদিন তার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে সিরাজগঞ্জ জিআরপি থানা পুলিশ।

লালটুসা এখনো নিখোঁজ। পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, তাদের কাছে থাকা দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে দুজনকেই হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।

এদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে শোকের মাতম চলছে হতদরিদ্র দুই পরিবারে।

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানান, মনোহরদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম মালিথার ১৫টি গরু ট্রাকে করে গত ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন তার ছেলে সজিব মালিথা ও স্থানীয় চার কৃষক। তারা হলেন- কন্দর্পদিয়া গ্রামের আজিজুল মণ্ডল, লালটুসা, পুতুল সাহা ও হাসান মণ্ডল।

১৯ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামের হাটে ১০টি গরু বিক্রি করেন তারা। সবচেয়ে বড় গরুটি সেখানে দাম না উঠায় ২০ আগস্ট আজিজুল মণ্ডল ও লালটুসা সেটি নিয়ে ঢাকার গাবতলী হাটে আসেন।

২১ আগস্ট সন্ধ্যার পর গাবতলী হাটে তারা গরুটি ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তাৎক্ষণিক তারা ট্রেনযোগে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে গাবতলী হাট থেকে বের হন। পথিমধ্যে সর্বশেষ ঢাকার তেজগাঁও থেকে রাত সাড়ে ৯টায় এস এম মালিথার স্ত্রী মঞ্জু আরা বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় লালটুসার। এরপর থেকে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তিন দিন তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারেনি।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম মালিথা বলেন, ‘২৩ আগস্ট সকালে ইন্টারনেটে দেখতে পাই সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া রেলওয়ে পুলিশ অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে। ছবি দেখে মনে হচ্ছিল এটা আজিজুলের লাশ। আমি একটি মাইক্রো ভাড়া করে আমার ছেলেসহ ওদের পরিবারকে উল্লাপাড়ায় পাঠায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পায় লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে ফেলেছে রেলওয়ে পুলিশ। লাশের ছবি ও গায়ের পোশাক দেখে দাফন করা লাশটি শনাক্ত করেন আজিজুল মণ্ডলের পরিবারের সদস্যরা।

তিনি বলেন, ‘গরু বিক্রির দুই লাখ টাকা নিয়ে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। তাদের সঙ্গে আমার স্ত্রীর সর্বশেষ কথা হয় তারা যখন তেজগাঁওয়ে। আমার স্ত্রী তাদের বলে টাকা-পয়সা নিয়ে সাবধানে চলে আসতে। তারা জবাব দেন কোনো সমস্যা নেই, চলে আসছেন।’

এস এম মালিথার ছেলে সজিব মালিথা বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি আজিজুল মন্ডলের লাশ রেলের পাশে সাট হয়ে পড়ে ছিল। তার লুঙ্গি লাশের পাশে পড়ে ছিল। যদি ট্রেন থেকে পড়ে যেত তাহলে তার লাশ সাট হয়ে পড়ে থাকত না এবং লুঙ্গিও পাশে থাকত না।’

সজিব বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে ঢাকা থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। টাকা লুটের পর আজিজুলকে হত্যা করে লাশ ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইবি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহরুল আলম বলেন, ‘ঘটনাটি ইবি থানার মধ্যে না। তারপরও আমরা নিখোঁজ আজিজুল মন্ডল ও লালটুসা পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি।’

জহরুল বলেন, ‘লালটুসার পরিবার থানায় একটি জিডি করেছে। শুনেছি, আজিজুল মণ্ডলের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে ফেলেছে উল্লাপাড়া রেলওয়ে পুলিশ। তার পরিবারকে ওই থানায় গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে গরু বিক্রির টাকা হাতিয়ে নিতেই তাদের হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।’

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :