‘মামলা মাথায় নিয়ে ছাত্ররা পড়াশোনা করবে কীভাবে?’

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০১৮, ০৮:৪৯ | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০১৮, ০৮:৪৭
ফাইল ছবি

নিরাপদ সড়ক এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় যেসব ছাত্র গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তারা সবাই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷ কিন্তু তাদের মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেছে৷

আটক শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই জামিন মঞ্জুর হয় ঈদের আগে৷ বাকিরা জামিন পান ঈদের পর৷ সর্বশেষ মুক্তি পেয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী লুৎফুন্নাহার লুমা৷

ছাত্রদের প্রধানত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়৷ প্রধান অভিযোগ ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছাড়ানো৷ এছাড়া ভাঙচুর, গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের ওপর হামলা, মোটর সাইকেল পোড়ানোর অভিযোগও আছে৷ কোটা সংস্কার আন্দোলনের যাদের আটক করা হয়েছিল, তাদের বড় একটি অংশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িত দেখানো হয়৷

ছাত্রদের বাইরে অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ এবং খ্যাতিমান আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকেও গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাদের বিরুদ্ধেও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়৷ নওশাবা জামিনে মুক্তি পেলেও শহীদুল আলম এখনো কারাগারে৷

আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্র ইফতেখার আহমেদকে আটক করা হয়েছিল ৬ আগস্ট৷ ঈদের আগে তিনি জামিনে মুক্তি পান৷ তার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা এবং ভাঙচুরের মামলা দেয়া হয়েছে৷ তার বাবা আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলে হামলা বা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ছিল না৷ সে ওই সময় পরীক্ষার হলে ছিল৷ ছাত্রলীগের ছেলেরা তাকে ধরে মারধর করে৷ মোবাইল নিয়ে নেয়৷ আমার ছেলে পুলিশের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়৷ পুলিশের অনুরোধে তার মোবাইলটি ফেরত দেয়া হয়৷ কিন্তু আমার ছেলেকে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়৷ সে ১৩ দিন কারাগারে ছিল।’

তিনি আরেও বলেন, ‘জামিনে ছাড়া পেলেও সে এখনো মামলার আসামি৷ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে৷ আর এখন যদি এই মামলার জন্য তার বারবার আদালতে যেতে হয়, তাহলে সে পড়ালেখা করবে কীভাবে! আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, ওই মিথ্যা মামলা যেন তুলে নেয়া হয়৷ আর যেন হয়রানি করা না হয়।’

এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাবের আহমেদকেও বসুন্ধরা এলাকা থেকে ৬ আগস্ট আটক করা হয়৷ তার বিরুদ্ধেও পুলিশের বিরুদ্ধে হামলা এবং ভাঙচুরের মামলা দেয়া হয়েছে৷ ঈদের আগে তিনি জামিনে মুক্তি পান৷ তার পরিবারের সদস্যরা থাকেন টাঙ্গাইলে৷ তার মা মির্জা শাহিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো ভাঙচুর বা পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত না৷ বাসায় কাজের বুয়া ছিল না৷ সে বাইরে খেতে গিয়েছিল৷ মারামারি দেখে সে একটি ব্যাংকের মধ্যে আাশ্রয় নিয়েছিল৷ তারপরও তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়৷ তাকে জেল খাটতে হয়েছে৷ মুক্তি পেলেও মামলা আছে৷ মামলা থাকলে সে পড়াশোনা করবে কীভাবে? আগামী ৮ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়া প্রায় ১০০ ছাত্রের মামলার তারিখ আছে৷ সবাইকে আদালতে হাজির হতে হবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারকে আমরা কী বলব! সরকারের ওপর তো আর আমরা কথা বলতে পারি না৷ তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই ঠিক।’

সাবের আহমেদের বোন সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আমাদের দাবি, সরকার যেন সাধারণ ক্ষমার আওতায় ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো তুলে নেন৷ তাহলে তাদের শিক্ষাজীবন নিরাপদ হবে৷ তারা ঠিকমতো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।’

অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইমরুল কাওসার বলেন, ‘তার (নওশাবা) জামিন হয়েছে৷ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷ এখন মামলা চলবে৷ তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা৷ ২ সেপ্টেম্বর মামলার তারিখ আছে৷ তাকে আদালতে যেতে হবে৷ মামলা তুলে নেয়া হবে কি না তা আমি জানি না৷ এটা সরকারের বিষয়।’

কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আটক ছাত্রদের মামলার এক আইনজীবী অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকা৷ তিনি বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের ঘটনায় আটকদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও গাড়ি ভাঙচুর এবং গুজব ছড়নোর অভিযোগে ৫৭ ধারায় মামলা হয়েছে৷ আর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় যাদের আটক করা হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ৷ বাড়তি হিসেবে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্জের বাসভবনে হামলার মামলা।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা জামিনে মুক্ত হলেও তারা মামলা থেকে রেহাই পায়নি৷ এখন তাদের এইসব মামলায় চার্জশিট হবে৷ বিচার হবে৷ চার্জশিট দিলে বোঝা যাবে, ঠিক কতজনকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়৷ আর এই ছাত্রদের এখন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে।’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সরকার চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে পারে৷ কিন্তু একজন আইনজীবী হিসেবে তো আমি মামলা তুলে নেয়ার কথা বলতে পারি না৷ আমি বলব, আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহার না হলে হয়রানি চলতেই থাকবে৷ তাই ৩১ অগাস্টে মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না করলে আমরা নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচি দেব।’

এদিকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ধানমন্ডি থেকে আটক গৃহবধূ বর্ণালি চৌধুরী লোপা এবং একটি কফি শপের মালিক ফারিয়া মাহজাবিনও ঈদের পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে৷ –ডয়েচে ভেলে

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :