‘ইভিএম নিয়ে ইসির তোড়জোড়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৪০

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং কমিশন বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়েই আগামী নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড়ে একটা ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ দুই সাংবাদিক। এ ব্যাপারে যেকোনো সিদ্ধান্তের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

বুধবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের সংবাদ সম্প্রসারণ অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা শওকত মাহমুদ এবং জিটিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শারমিন চৌধুরী।

গতকাল সাংবাদিকদের নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় একশ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের প্রস্তুতি চলছে। সে লক্ষ্যে দেড় লাখ ইভিএম কিনতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতসহ সবকিছু ঠিক থাকলে সংসদ নির্বাচনের এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার মতো সক্ষমতা থাকবে ইসির।

সিদ্ধান্তের আগেই টাকা বরাদ্দ চাচ্ছেন কেন’

শওকত মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দুই দিন আগে শুনেছি নির্বাচন কমিশন তাদের বৈঠক অল্প সময়ের জন্য করেছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত হয়নি যে, ইভিএমের ব্যাপারে তারা কী করবেন। সিদ্ধান্ত না হয়ে থাকলে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প পাঠানোর তাৎপর্য কী? সেটাও আমার মনে হয় স্ববিরোধী উদ্যোগ হতে পারে। আপনারা (ইসি) যেহেতু সিদ্ধান্তই নেননি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা বাকি আছে বলছেন, সেখানে ইভিএম আগেভাগে কিনে ফেলার জন্য সরকারের কাছে টাকা বরাদ্দ চাচ্ছেন কেন।’

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে ইসি সচিবের গতকাল দেয়া বক্তব্য তুলে ধরে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘ইসি সচিব বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে তিন ভাগের একভাগ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনে একটা প্রকল্পও পাঠানো হয়েছে। ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।’

‘রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি কিন্তু বড় বিষয়। তাদের সম্মতি ছাড়া ইভিএমের জন্য প্রকল্প, আবার এখনও আরপিও সংশোধন হয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে একটা ধূম্রজাল রয়েই গেছে।’

রাজনৈতিক দল, ভোটারসহ যারা স্টক হোল্ডার আছে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বাচন কমিশন বাস্তব পদক্ষেব নেবে এমন আশা প্রকাশ করে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘আমি ভোটার, আমি ইভিএমে ভোট দেব কি না এটারও একটা ব্যাপার আছে।’

‘ভারতে ইভিএম নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। যারা ইভিএমে ভোট দিয়েছিল তারা বলছেন আমাদের ভোট সঠিকভাবে গণনা হয়নি এবং তারা ব্যালটে ভোট দিতে চাচ্ছেন। আমাদের মতো দেশে এক সময় প্রযুক্তির চাপে হয়তো ইভিএম আসবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমরা ভোটাররা কতখানি প্রস্তুত আছি। ইভিএম নিয়ে কারও কোনো বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট থাকলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়াটাই সঙ্গত হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি কিন্তু বড় বিষয়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা (ইসি) বলছে ইভিএম মেলা করবেন। কিন্তু আমি মনে করি না এই নির্বাচন একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসছে। কারণ রাজনৈতিক টানাপোড়ন আছে এবং বিবোধী দলগুলোর দাবি-দাওয়া আছে। সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর বোঝাপড়া আছে। এর মধ্য দিয়ে ভোটারদের ইভিএম শিক্ষা দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। ভোটাররা সেই শিক্ষা নিতে কতখানি আসবে সেটাওতো প্রশ্নের ব্যাপার।’

সম্প্রতি কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘কারণ এটা খুব সীমিত আকারে ব্যবহার হয়েছে। আর ভোটের ফলাফল যেগুলো এসেছে সেগুলোতে যে কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে সেগুলোর ভোটের কোনো প্রভাব ছিল না। কারণ কোনো সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা বিরোধীদল কোনো অভিযোগ করলে সেই ভোট দিয়ে মোট ফলাফলকে প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ নেই। এজন্যই ইভিএমটা কোনো আলোচনার মধ্যে আসেনি।’

আওয়ামী লীগও ইভিএমে ততটা জোর দিচ্ছে না’

জিটিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার হবে কি হবে না এ ব্যাপারে আমি মনে করি শওকত ভাই (শওকত মাহমুদ) সঠিক বলেছেন। প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে আমরা, যদি সে প্রযুক্তি নির্ভুল হয়ে থাকে। তবে খটকা লাগে যেহেতু বিষয়টা সেটেল (চূড়ান্ত) হয়নি। সচিব নিজেই বলেছেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন আলোচনা করবে। তার আগে প্রকল্পের বিষয়টি কেন মাথায় এলো, কেন চিন্তা-ভাবনায় এলো? তাহলে মনে হতে পারে এক ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়াই হয়ে গেছে। এই ধরনের ভাবনা চলে আসে কি না? আমার বিশ্বাস ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ হবে সেখানে হয়তো একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারে।’

বিএনপিতো তার সিদ্ধান্ত জানিয়েই দিয়েছে যে ইভিএমে ভোট চলবে না, এমকি গণতান্ত্রিক বাম জোটও বলেছে ইভিএমে নির্বাচন চায় না। সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘তারপরও হয়তো কনভেন্স করতে পারে। আসলে আওয়ামী লীগও কিন্তু ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে ততটা জোর দিচ্ছে বলে মনে হয় না। দেখা যাক কমিশন কীভাবে বিষয়টা স্টেক হোল্ডারের কাছে আনতে পারে, কতটা যৌক্তিকভাবে আনতে পারে।’

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/জেআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :