বিএনপির নতুন উদ্বেগ ইভিএম

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট ২০১৮, ০৮:০৬
ফাইল ছবি

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়া, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারার মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে বিএনপিকে। আর সেটি হলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম।

ভোট নেয়ার এই যন্ত্র উন্নত বিশ্বে ব্যবহার হয়ে আসছে আশির দশক থেকেই। এতে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া যেমন সহজ, তেমনি ফলাফল পাওয়া যায় এক ক্লিকেই।

তবে বিএনপির সংশয় অন্য জায়গায়। তাদের ধারণা, এই যন্ত্র দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় আর ক্ষমতায় থাকায় এই সুবিধা পাবে আওয়ামী লীগ।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ তিনশ আসনের একশটিতে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ইসির ভাবনার কথা জানান। বলেন, এ লক্ষ্যে দেড় লাখ যন্ত্র আমদানি হতে পারে। আর এতেই বিএনপির মধ্যে ছড়ায় উদ্বেগ।

এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে কারচুপির নতুন হাতিয়ার বলা হয়েছে।

ইভিএম নিয়ে আপত্তি কেন-জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিশ্বের যেসব দেশে এ পর্যন্ত ইভিএম ব্যবহার হয়েছে সেখানকার সবাই তা বাদ দেয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। অনেকে বাদও দিয়েছে। এর বড় উদাহরণ প্রতিবেশী দেশ ভারত। সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।’

অবশ্য ভারত ইভিএম বাদ দেয়নি। ১৯৯৯ সাল থেকেই দেশটিতে এই যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আর ধীরে ধীরে তার ব্যবহার বাড়ছে। যদিও সম্প্রতি দেশটির বিরোধী দল ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট নেয়ার দাবি জানিয়েছে।

বাংলাদেশে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ওই বছর চট্টগ্রাম এবং পরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে সে সময় যন্ত্রটিকে সমস্যা দেখা দেয়ার পর আর আগায়নি ইসি।

তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গত ডিসেম্বরে রংপুরে একটি, ১৫ মে খুলনায় দুটি, ২৬ জুলাই গাজীপুরে ছয়টি এবং ৩০ জুলাই বরিশালে ১১টি আর রাজশাহী ও সিলেটে দুটি করে কেন্দ্রে ভোট নেয়া হয়েছে ইভিএমে।

এই ২৪টি কেন্দ্রের কোথাও ভোটে কোনো গোলযোগ বা সমস্যা ধরা পড়েনি। আর ভোটাররাও এই যন্ত্র দিয়ে ভোট প্রদানকে সহজ বলেছে। আর এসব কেন্দ্রের ফলাফলও পাওয়া গেছে আগেভাগে।

গত পাঁচ সিটি নির্বাচনে যে ২৩টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে তার মধ্যে বিএনপি কেবল খুলনায় একটি এবং সিলেটের দুটি কেন্দ্রে বিএনপি জয় পেয়েছে।

খুলনায় একটি কেন্দ্রে বিএনপি অল্প ভোটে জিতলেও অপর কেন্দ্রে হেরেছে বড় ব্যবধানে। আর রাজশাহীর দুটি, গাজীপুরের ছয়টি এবং বরিশালের ১১টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের অর্ধেক ভোটও পড়েনি বিএনপির পক্ষে। আর এসব কেন্দ্রের ফলাফল ও সার্বিকভাবে ভোটের ফলাফল ছিল একই রকম। অপরদিকে সিলেটে ইভিএমের মতো সামগ্রিক ফলও এসেছে বিএনপির পক্ষেই।

এসব নির্বাচনেও ইভিএমের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। কিন্তু ভোটের পর ইভিএমের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারেনি দলটি।

যদিও খন্দকার মোশাররফ দাবি করেছেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে ইভিএমের সুইচে চাপ দিলে শুধু নৌকা প্রতীকই আসে।’

এটা হলে সিলেটে ইভিএমের দুই কেন্দ্রেই কীভাবে ধানের শীষে নৌকার দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পড়ল, সেই ব্যাখ্যা অবশ্য দেননি এই বিএনপি নেতা।

এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অভিযোগ থাকতেই পারে কিন্তু সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা দেখতে হবে। ইভিএমে ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।’

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচনে অসৎ উপায় অবলম্বন করা সহজ ইভিএমের মাধ্যমে। ভারতসহ অনেক গণতান্ত্রিক দেশে এটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর ইভিএম ভালো ভোটের নিশ্চয়তা দেয় না। ভোট কারচুপি করা সহজ হবে এটা নির্বাচনে ব্যবহার করলে।’

আপত্তির অন্য জায়গা হিসেবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারি দল ছাড়া সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে ইভিএমের বিরোধিতা করেছে। ইসিও বলেছিল সীমিতভাবে তারা এটি ব্যবহার করবে। তাও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে। কিন্তু সেখানে হঠাৎ করে এমন উদ্যোগ সন্দেহের সৃষ্টি করবে এটাই স্বাভাবিক। তাহলে ইসি কি সরকারকে জয়লাভ করানোর জন্য এ কাজ শুরু করছে?’

বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভীর দাবি, বিশ্বের ২০০টি দেশের মধ্যে মাত্র চারটি দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। সেসব দেশেও ইভিএম ব্যবহার নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে।

যেসব অল্পসংখ্যক দেশে ইভিএম আংশিকভাবে ব্যবহার করা হয়, সেখানেও ভোট প্রক্রিয়ায় ও ফল নির্ধারণের ভয়াবহ কারচুপির প্রমাণ মিলেছে বলেও দাবি করেছেন বিএনপি নেতা।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই মেশিন দিয়ে যে কারচুপি করা সম্ভব সেটা বিশ্বের অনেক দেশে প্রমাণ হয়েছে। অনেকে এই পদ্ধতি বাতিলও করেছে। সেখানে আমাদের এখানে এমন উদ্যোগ কেন বুঝি না।’

(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/বিইউ/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :