প্রকল্পে ধীরগতি, গাজীপুরে বেহাল মহাসড়কে জনদুর্ভোগ

আবুল হাসান, গাজীপুর থেকে
 | প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট ২০১৮, ১০:০১

গাজীপুর থেকে এয়াপোর্ট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন ও যানজট নিরসনে এগিয়ে চলছে বাস র‌্যাপিট ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্প। কিন্তু প্রকল্পের কাজের ধীরগতি, মহাসড়কে খোঁড়াখুড়ি, পাশেই প্রকল্পের কাজ চলমান থাকা এবং মহাসড়কের বেহাল দশায় সড়কটিতে বাড়ছে যানজট। ফলে জনভোগান্তি এখানে চরমে। আধ ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগছে তিন-চার ঘণ্টা। তবে বিআরটি কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পের ব্যয় বাড়লেও নির্ধারিত সময়ে এটি সম্পন্ন করা হবে।

বিআরটি প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কম ব্যয়ে দ্রুত যাতায়াত নিশ্চিতে উন্নত বিশ্বের আদলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রথমবারের মতো বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এলক্ষে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত নির্দিষ্ট লেনে বাস র‌্যাপিট ট্রানজিট-বিআরটি বাস পরিবহন ব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর সরকার এই প্রকল্পটির অনুমোদনও দেয়। সেসময় তাতে ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ এক হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় ধরা হয়।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয় চার বছর। এই প্রকল্পের আওতায় ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে উত্তরা থেকে টঙ্গীর চেরাগআলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড বিআরটি লেইন থাকবে। বাকি ১৬ কিলোমিটার থাকবে সমতলে। নির্মাণ করা হবে ছয়টি ফ্লাইওভার। প্রতি দুই থেকে পাঁচ মিনিট পরপর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে। স্টেশনের সংখ্যা হবে ২৫টি। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। ১৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এই পথে। প্রকল্পের আওতায় ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পারাপার হতে পারবে। বাস ভাড়া আদায় হবে ইলেক্ট্রনিক স্মার্ট কার্ডে।

কিন্তু এত স্বপ্নের পরও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি এ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটির জন্য নির্ধারিত সময় চার বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। দুই বছর সময় বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বরে শেষ করার কথা থাকলেও ছয় বছরে অগগ্রতি হয়েছে প্রকল্পটির যৎ সামান্য। ফলে নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। সড়ক প্রশস্তকরণ, সার্ভিস সড়ক ও গাজীপুরে তিন কিলোমিটার ড্রেনেজ নির্মাণসহ এর মধ্যে এ প্রকল্পটির মাত্র ২৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

আর প্রকল্পের কাজে ধীরগতি ও মহাসড়কের পাশে যন্ত্রপাতি রাখাসহ বেহাল মহাসড়কের কারণে চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাস, বোর্ডবাজার, গাজীপুরাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট বেড়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা।

কলেজ শিক্ষার্থী সায়েম বলেন, রাস্তার খোঁড়াখুড়িতে সারা বছর এখন ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট লেগে থাকে। তাছাড়া চান্দনা চৌরাস্তায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজও চলমান থাকায় বিকালের দিকে এই মহাসড়ক দিয়ে গন্তব্যে যাওয়াটা দুরূহ ব্যাপার। আধ ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করতে প্রতিদিন তিন/চার ঘণ্টা সময় লাগছে।

রিকশা চালক জসিম উদ্দিন বলেন, এই মওসুমে একটু বৃষ্টি হলেই চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাসে পানি জমে গেছে। এর মধ্যে ড্রেন খোঁড়াখুড়িসহ সড়কের পাশে লোহা, রড রাখা হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে রিকশা চালাতে পারছি না। বেশির ভাগ সময় যানজটে যাত্রী নিয়ে আমাদের আটকা থাকতে হয়।

বাস চালক রাজিব বলেন, রাস্তার খোঁড়াখুড়ির কারণে প্রচণ্ড যানজট হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে থাকায় ট্রিম নিয়ে সমস্যা হয়। আমাদের ইনকাম কম হয়।

ড্রেনেজ নির্মাণ ও প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অনেক স্থানে একলেনে যান চলাচল করায় যানজট হয় জানিয়ে জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ওমর ফারুক দোলা বলেন, যানজট হলে অতিরিক্ত জনবল দিয়ে সংকট সমাধানে তারা চেষ্টা করছেন। তবে প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করা গেলে যানজট লাঘব হবে এবং এই সড়ক ব্যবহারকারী যাত্রীরা উপকৃত হবেন বলে মনে করেন ট্রাফিক বিভাগের এই কর্মকর্তা।

প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়ার পর এর ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু দুই দফা পিছিয়ে বতর্মান এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার কোটি টাকার ওপর। ফলে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে জনদুর্ভোগ।

এ ব্যাপারে প্রকল্পটির পরিচালক মো. সানাউল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, যানজট নিরসন ও যাত্রীদের সেবা দিতে এই মেগা প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। অনেক আগে এর কাজ শুরু হলেও নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ করা যায়নি স্বীকার করে তিনি জানান ড্রেন, ট্রার্মিনাল, মহাসড়ক প্রশস্তকরণসহ এ পর্যন্ত এই প্রকল্পের ২৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কারণে এর ব্যয়ও বাড়বে। তবে ২০২০ সালের মধ্যে এটি সম্পন্ন করা হবে বলে আমরা আশা প্রকাশ করছি।

(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :