অপহৃত সন্তানকে ফিরে পেয়ে বাবা
‘বুঝি না মানুষ কেন পুলিশকে খারাপ বলে’
চার বছরের সন্তান অপহৃত। পুলিশের কাছে ছুটে যান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে সাইফুল ইসলাম। এক দিনের মধ্যে উদ্ধার হয়ে যায় তার আদরের ধন।
সব সময় পুলিশের সম্পর্কে ‘খারাপ কথা’ শুনে এসেছেন সাইফুল। কিন্তু তার অভিজ্ঞতা একেবারেই বিপরীত। ছেলেকে কাছে পেয়ে সাংবাদিকদেরকে বললেন, পুলিশকে কেন মানুষ খারাপ বলে তিনি বুঝতে পারছেন না।
মঙ্গলবার রাতে নাখালপাড়ার ডা. মিজানের লিচু বাগান এলাকায় বাড়ির বারান্দায় খেলছিল শিশু তোয়াসিন ইসলাম সিমন। বাবা সাইফুল ইসলাম অফিসে এবং মা রান্না ঘরে থাকার সুযোগে সিমনকে অপহরণ করা হয়।
বুধবার সকালে অপহরণকারীরা সিমনের বাবার কাছে একটি মোবাইল নম্বার থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। পরে রফাদফা করে ১০ লাখ টাকায় ছেলেকে ফেরত দিতে রাজি হয় তারা।
এরপর সিমনের বাবা বিষয়টি তেজগাঁও থানাকে জানান। আর পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পারে ওই মোবাইল নাম্বারটির মূলত রোমানের এবং সেই ওই চক্রের হোতা।
মোবাইল ট্র্যাকিং করে বৃহস্পতিবার সিমনকে অচেতন অবস্থায় বিজয় সরণী এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় ছয় জনকে।
পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে সিমনের বাবা বলেন, ‘আমি জীবনের প্রথম বুধবার পুলিশের কাছে গেছি। তারা যেমন আন্তরিকতা দেখিয়েছে তাতে আমি মুগ্ধ। কারণ পুলিশের আন্তরিকতা না থাকলে আমার ছেলেকে পেতাম না। আমি বুঝি না মানুষ কেন পুলিশকে খারাপ বলে।’
এই ঘটনায় যাদেরকে পুলিশ আটক করেছে তাদের মধ্যে রোমান নামে একজনকেই অপহরণের হোতা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
সাইফুলদের বাসার পাশেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন এই রোমান। দুই পরিবারে পরিচয়ও ছিল।
সাইফুল জানান, এক সপ্তাহ আগে তিনি স্ত্রীসহ ওই বাড়ির একটি কক্ষে উঠেছেন। তার পাশের কক্ষে ভাড়া থাকতেন রোমান। অপহরণের দিন সকালেও তার স্ত্রীর কাছ থেকে একশ টাকা ধার নিয়ে বাজারে যান রোমান।
‘আর অপহরণের পর থেকে সে আমাদের সাথে থেকে সাহায্য করে। আমাদের ধারণা ছিল না সে এই কাজের সাথে জড়িত।’
রোমানের সঙ্গে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন তার স্ত্রী মীম আক্তার রিয়া, শহীদুল ইসলাম মানিক, জিসান মিয়া, সাইফুল ইসলাম ইমন, আলী আহমেদ। এই ঘটনায় জড়িত আরেক নারীকে খুঁজছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এই অপহরণ ও উদ্ধার অভিযানের বিস্তারিত জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিমনকে একটি বাড়িতে রেখে সিমনকে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়। পরে অপহৃতের বাবার সাথে করেই এলাকায় মাইকিং করে অপহরণকারী ও তার সহযোগীরাই। এতে তারা সন্দেহের বাইরে থাকবে বলে ধারণা করেছিল।
বিপ্লব কুমার জানান, আটক ছয় জনকে শুক্রবার রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। তারপর জানা যাবে তারা এর আগেও এই রকম কাজের জড়িত ছিল কি না।
শিশু সিমন অপহরণে প্রধান সন্দেহভাজন রোমান সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে পালিয়ে আমি বিয়ে করেছিলাম। যেখানে থাকি সেখানে রুম ভাড়া ঠিক মত দিতে পারছিলাম না। তাই কিছু টাকা জোগাড় করতেই অপরহণ করেছিলাম।’
ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/এসএস/ডব্লিউবি