কিশোরগঞ্জে জেবিন হত্যার বিচার চায় স্বজনরা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট ২০১৮, ১৪:০৩

কিশোরগঞ্জে আয়েশা আক্তার জেবিন হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে তার পরিবার ও এলাকবাসী।

শুক্রবার সকালে জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন নিহত জেবিনের বাবা মুর্শেদ মিয়া।

তিনি বলেন, ‘নৃশংসতার শিকার হতভাগা আমার মেয়ে আয়েশা আক্তার জেবিনের হত্যাকাণ্ড বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলার কালীহাতী থানায় কর্মরত এ.এস.আই হামিদুল ইসলামকে বাঁচানোর ষড়যন্ত্র নিয়ে দু-চার কথা বলার জন্য। আমার মেয়ে আয়েশা আক্তার জেবিনের পূর্ব স্বামী কাজী সুমন প্রায় চার বছর আগে মারা যায় ক্যান্সারে। সুমনের সাথে ছিল এ.এস.আই হামিদুল ইসলামের বন্ধুত্ব। সেই সুবাদে সুমন মারা যাবার পর সুমনের ঔরষজাত সন্তান আরাফাত ও আরহামকে স্নেহ দিয়ে আদর করে যায় প্রতিনিয়ত। এক পর্যায়ে প্রস্তাব দেয় জেবিনকে বিয়ের। জেবিন এতে অস্বীকৃতি জানালে তার দুই সন্তানকে নিজ সন্তান হিসেবে দায়িত্ব নেবে বলে জানায়। সামাজিকভাবে এর প্রস্তাবও দেয়। মধ্যস্থতাকারী এ বিষয়ে হামিদুল ইসলামের স্ত্রী ও তার পরিবারের মতামত জানতে চায়। একটি তালাকনামা দিয়ে ও হামিদুলের স্বজনদের আশ্বস্থ করা হলে আমরা জেবিনকে বিয়ে দেই হামিদুলের কাছে। গত ৭ মে এ বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের তিন মাস ২৩ দিনের ব্যবধানে আমার মেয়ে সেই হত্যার শিকার হয়। যার ঘাতক পুলিশ এএসআই হামিদুল।

গত ১২ আগস্ট এএসআই হামিদুল জেবিনকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ এসে বাপের বাড়িতে রেখে যায়। পরে এসে নিয়ে যাবে বলে। জেবিন বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানতে পারে যে, হামিদুলের পূর্বের স্ত্রী সাবিকুন্নাহার টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার সাতোটিয়া সাকিনস্থ অরুন চন্দ্র রায়ের ভাড়াটে বাসায় অবস্থান করছে। একথা উপলব্ধি করে জেবিন ১২ আগস্ট কিশোরগঞ্জ থেকে চলে যায় ওই ঠিকানায়। সেখানে গিয়ে হামিদুলের পূর্বের স্ত্রী সাবিকুন্নাহারকে দেখতে পায় জেবিন। তখনই শুরু হয় ঝগড়া। ঝগড়াটির ভেতর দিয়ে চলে আট দিন। এভাবে জেবিনে চলে আসে জীবনের অন্তিম সময়। আট দিনের মধ্যেই প্রতিদিন জেবিন চেষ্টা করছিল কিশোরগঞ্জ ফিরে আসার। তাই জেবিনের মোবাইল ও টাকা সবকিছুই নিয়ে নেয় হামিদুল। যাতে জেবিন বাড়িতে আসতে না পারে ও যোগাযোগ করতে না পারে। হামিদুল ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগে জেবিন ২০ আগস্ট বিকালে আটবার কল দেয় বাড়িতে মার কাছে লুকিয়ে হামিদুলের মোবাইল থেকে। কিন্তু জেবিনের মা অসুস্থ থাকায় জেবিনের কল ধরতে পারেনি। জেবিনের শেষ কলটি ধরে ৩টা ৩৫ মিনিটে জেবিনের মা নাঈমা আক্তার ওরফে নাসিমা। ফোনে জেবিন বলে আম্মু, ইমনকে পাঠাও, এখানে থাকা যাবে না, এখানে থাকলে আমাকে মেরে ফেলবে। সবকিছু বলা যাবে না। এরকম কিছু কথা বলার মূহূর্তেই জেবিনের কন্ঠ থেমে যায়। তারপর শোনা যায় ধস্তাধস্তির শব্দ। নিস্তব্ধতা ভেঙে তারপর রাত ৭টায় হামিদুল জেবিনের মাকে আবার ফোন দিয়ে বলে জেবিন অসুস্থ, তাকে নিয়ে যান। তখনই আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, নির্যাতন করে আয়েশা আক্তার জেবিনকে মারাত্মক একটা কিছু করা হয়েছে। পরে জেবিনের মা নাঈমা আক্তার নাসিমা অজ্ঞান হয়ে যায়। এ অবস্থায় ২০ আগস্ট রাতেই আমরা ঈদের যানজট পেরিয়ে পরদিন পৌনে ৭টায় কালিহাতীতে পৌঁছি। কিন্তু সেখানে পৌঁছেই আমরা জানতে পারি যে, জেবিন পৃথিবীতে নেই। আরো জানতে পারি যে, লাশ এলাকাবাসী দেখতে চাইলে হামিদুল কাউকে বাসায় ঢুকতে দেয়নি। এ অবস্থা জেনে আমি পিতা হিসেবে কান্নাকাটি শুরু করলে এলাকার লোকজন এসে জড়ো হয় এবং সমবেদনা প্রকাশ করে।

ময়নাতদন্তের পর সন্ধ্যায় আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। আমাদের পীড়াপীড়িতে সুরতহাল রিপোর্টটি আমাদেরকে দেয় পুলিশ। পরের দিন ঈদুল আজহা। তাই তড়িঘড়ি করে লাশ নিয়ে রওনা দেই কিশোরগঞ্জে। কিশোরগঞ্জে পৌঁছে লাশ ধোয়ানোর সময় জেবিনের শরীরে বিভিন্ন জখমের চিহ্ন দেখা যায়- যা সুরতহালে আসেনি।

হামিদুল পুলিশ সদস্য হওয়ায় আমরা পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। আমরা জেবিন হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রেক্ষিতে পিবিআই-এর উপর তদন্তভার প্রদানের জোর দাবি জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন- নিহত জেবিনের মা নাইমা আক্তার নাসিমা, মামা রেজাউল হাবীব রেজা, ভাই ইমন, পুত্র আরাফাত ও আরহামসহ এলাকাবাসী।

(ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :