নির্মাণ

বেজমেন্ট নির্মাণে সতর্কতা

প্রকৌশলী এ কে এম দাউদ হাসান জাহেদী
| আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:০১ | প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৫৬

নির্মাণকাজে যে বিষয়গুলো প্রথমে আসে তার মধ্যে অন্যতম হলো বেজমেন্ট। যারা বাড়ির কাজ করতে যান তাদের বেজমেন্ট সম্পর্কিত বিশদ জ্ঞান না থাকার দরুন অনেক সময় নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দেখা যায় সঠিকভাবে কাজ না জানার ফলে একদিকে যেমন খরচ বেড়ে যায় আবার কনস্ট্রাকশনের কাজের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। সুতরাং নিয়মতান্ত্রিকতা মেনে কাজ করা জরুরি। পারিপার্শ্বিকতার বিষয়গুলো আমলে নেওয়া জরুরি।

যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সেগুলোর মধ্যে আছেÑ বেজমেন্টের কাজের ক্ষেত্রে প্রথমত কোনো প্রকল্পের ইউটিলিটি লাইন মাটি কাটার এরিয়ার বাইরে সুবিধাজনক যেকোনো প্রোপার্টি লাইনের দিকে প্রতিস্থাপন করতে হবে। প্রকল্পের পাশে যদি ভবন, রোড, বিদ্যুতের পোল থাকে তবে সাইট প্রটেকশনের জন্য আই জয়েস্ট ড্রাইভ অথবা কাস্ট ইন সিটু পাইল করে নিতে হবে। প্রয়োজনে পাইলের মাথায় ব্রেচিং দিতে হবে। রাস্তার পাশে যদি কোনো ওপেন ড্রেন থাকে তবে তা পাইপ দিয়ে কনসিল করে নিতে হবে, যেন ড্রেনের পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে প্রকল্পে পানি প্রবেশ না করতে পারে। এছাড়াও বাইরের পানি প্রজেক্টে যেন প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রকল্পের পার্শ্বের মেইন রাস্তার সর্বোচ্চ উচ্চতাকে ০’ লেভেল চিন্তা করে তা প্রকল্পের চারদিকে মার্ক করে নিতে হবে। ড্রয়িং অনুযায়ী লে-আউট দিয়ে চারদিকে অবস্থিত স্থায়ী স্থাপনাগুলোতে স্থায়ীভাবে গ্রিডলাইন মার্ক করে নিতে হবে। সাইটে মাটি কাটার পূর্বে প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা করে নিতে হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত বাঁশ ও খালি পলিথিনের সিমেন্ট ব্যাগ, ত্রিপল ইত্যাদি সাইটে রাখতে হবে।

কাজ শুরু হলে প্রথমে ড্রয়িংয়ে উল্লিখিত সেকশন অনুযায়ী মাটি কাটার গভীরতা চেক করে নিতে হবে, অতঃপর মাটি কাটার কাজ শুরু করতে হবে। প্রয়োজনীয় ড্রয়িং মোতাবেক সিসির কাজ করে নিতে হবে। সেই সাথে পুনরায় ০’ লেভেল থেকে বেজমেন্টের বটম লেভেল চেক করে নিতে হবে। তারপর চারদিকে লে-আউটের গ্রিড লাইনগুলো মার্কিং করে পুনরায় চেক দিতে হবে। সেই মার্ক এবং ড্রয়িং অনুযায়ী রিটেইনিং ওয়ালের বাইরে ব্রিক ওয়াল করে নিতে হবে। এরপর স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং অনুযায়ী রডের কাজ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কাভারিং, রডের ডিরেকশন, স্পেসিং ইত্যাদির দিকে খেয়াল রেখে রড বাইন্ডিংয়ের কাজ শেষ করতে হবে। ঢালাই কাজ শুরু করার পূর্বে প্রয়োজনীয় জায়গা পরিষ্কার ও পানি নিষ্কাশন করে নিতে হবে। একনাগাড়ে যে পর্যন্ত ঢালাই হবে সে পর্যন্ত স্টপার বা কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট সিদ্ধান্ত ডিজাইন অনুযায়ী দিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় মিকশ্চার মেশিন, ভাইব্রেটর মেশিন সাইটে সচল অবস্থায় আছে কি না চেক করে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় ওটার সিমেন্ট রেশিও মেইনটেইন করতে হবে। সুবিধাজনক এক পাশ থেকে ঢালাই শুরু করতে হবে। রডের জালির উপর প্রয়োজনীয় প্লেন-সিট দিতে হবে যাতে ঢালাইয়ের সময় ময়লা না হয়। বেজমেন্ট ঢালাইয়ের সময় ভাইব্রেটর ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় সিলিন্ডার টেস্ট করে নিতে হবে।

এরপর ঢালাই দেওয়া হয়ে গেলে ঢালাই করার ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর বেজমেন্টের টপে ওয়াটার বেরিয়ার এবং চট বিছিয়ে কিউরিংয়ের ব্যবস্থা করে নিতে হবে। রিটেইনিং ওয়ালের গোড়ার ঢালাই পরিষ্কার করে রড বাইন্ডিং এবং সাটারিং করে নিতে হবে। দুই বারে রিটেইনিং ওয়াল ঢালাই করতে হবে এবং প্রতিবারে ঢালাইয়ের পর ওয়ালের ভেতর কী রাখতে হবে। রিটেইনিং ওয়ালের ঢালাইয়ের পূর্বে প্রয়োজনীয় সাটারিং, ইনক্লায়েন্ড সাপোর্ট এবং কাভারিং চেক করে নিতে হবে। রিটেইনিং ওয়ালের সাটারিং খোলার পর চট দিয়ে কিউরিং করে নিতে হবে। রিটেইনিং ওয়ালের বাইরে ভিটি সেন্ড দিয়ে ফিলিং করে সাইটকে নিরাপদ করে নিতে হবে। বেজমেন্ট ওয়ার্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকা এবং আশপাশের লোকজনের অসুবিধার কথা বিবেচনা করা।

লেখক: প্রকৌশলী এ কে এম দাউদ হাসান জাহেদি ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলার বাড়ি ইঞ্জিনিয়ার্স

(ঢাকাটাইমস/১সেপ্টেম্বর/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :