ভৈরবে তিন সেতুর মেঘনাপাড়ে অবাধে খুন-ছিনতাই

রাজীবুল হাসান, ভৈরব প্রতিনিধি
| আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:২১ | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:১৩

তিন সেতুসংলগ্ন ভৈরবের মেঘনাপাড় এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্য। প্রতিদিন ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি তো হচ্ছেই, প্রায়ই ঘটছে খুনের ঘটনা। গত তিন বছরে ওই এলাকায় পুলিশসহ ১৬ জন খুন হয়েছে ছিনতাইকারীদের হাতে। আহত হয়েছে শতাধিক লোক।

সর্বশেষ গত ১৩ আগস্ট দুপুরে মেঘনাপাড়ের রেলওয়ে সেতুসংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের মালামাল ভাগাভাগি নিয়ে নিহত হয় বাপ্পী নামের এক ছিনতাইকারী। এ সময় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।

পাশাপাশি দুটি রেলসেতু ও একটি সড়কসেতু- তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকায় এলাকাটি সরকার ঘোষিত কেপিআই এরিয়া। সেতুগুলোর নিরাপত্তার জন্য এখানে কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে আটজন পুলিশ নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশ সদস্যরা বলছেন, অরক্ষিত মেঘনাপাড় দেখার দায়িত্ব তাদের নয়, তারা শুধু সেতু পাহারা দেন।

ভৈরব মেঘনাপাড়ে রেলওয়ের নতুন সেতুসহ তিনটি সেতু ও নদীর পাড়ে ঘুরতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসে এ এলাকায়।

পুলিশ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া হিসাবে দেখা যায়, গত বছর জুলাই মাসে ৯ দিনের ব্যবধানে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় দুজন খুন হয় মেঘনাপাড়ে। তারা হলো নরসিংদীর রমজান ও নবীনগরের এক যুবক। এরপর ৩০ অক্টোবর ইমরান নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুন করে ছিনতাইকারীরা।

এর কিছুদিন পর সেতুর টোল প্লাজার কাছে অ্যাডভোকেট ইসমাইল নামের এক ব্যক্তি খুন হন ছিনতাইকারীদের হাতে।

গত বছর রেলসেতু সংলগ্ন এলাকায় এক বখাটেকে আটক করতে গিয়ে পুলিশ কনস্টেবল আরিফুল ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন ডালিম নামের এক পথচারী।

এর আগে পুলিশের এসআই মোস্তাফিজ এক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করার পর তার ছুরিকাঘাতে নিহত হন তিনি। এভাবেই ছিনতাই-খুন চলে আসছে দিনের পর দিন।

মেঘনাপাড়ে দর্শনার্থীদের প্রতিনিয়ত ইভটিজিং করে বখাটেরা। কিন্তু ভয়ে তাদের কিছু বলতে পারে না দর্শনার্থীরা। ভৈরব মেঘনাপাড়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের অধিকাংশই গ্রাম এলাকা থেকে আসে। ভৈরবের আশপাশে রায়পুরা, কুলিয়ারচর, বেলাব, নরসিংদি, কটিয়াদী, বাজিতপুর, আশুগঞ্জ, সরাইল, নবীনগর, বাহ্মণবাড়ীয়াসহ হাওড় জনপদের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী- নানা পেশার অসংখ্য মানুষ এই কেপিআই এলাকায় বেড়াতে আসে। একে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে অপরাধচক্র।

ছিনতাইকারী, বখাটে ও অপরাধীরা নদীর পাড়ে প্রতিনিয়ত ওত পেতে থাকে। বিশেষ করে বিকেলে অসংখ্য মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে মেঘনাপাড়ে এলে অপরাধী, বখাটে ও ছিনতাইকারীরা তাদের মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা, সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়। পুলিশের ডিউটি না থাকায় জায়গাটি থাকে অরক্ষিত। এই সুযোগে ছিনতাইকারীরা বেপোয়ারা হয়ে উঠেছে।

ভৈরবে ঘুরতে এসে গত সোমবার ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন আরিফুল হক। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এখানে যদি পুলিশের ডিউটি থাকত তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটত না।

ভৈরব পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরিল ফখরুল আলম আক্কাছ এ ব্যাপারে বলেন, ‘জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে আমি বহুবার এসব ঘটনা অবহিত করেছি। কিন্তু পুলিশ ভৈরব মেঘনাপাড়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বারবার ছিনতাইসহ নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে সেখানে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাশরুকুর রহমান খালেদ মোবাইল ফোনে এই প্রতিনিধিকে জানান, ঘটনাটি শুনে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভৈরব থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সীমিতসংখ্যক পুলিশ দিয়ে তারা ভৈরবের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন বলে জানান ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তারপরও চেষ্টা করছি ছিনতাই কমাতে।’ মেঘনাপাড়ে আসা লোকজনকেও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি মো. আবদুল মজিদ জানান, রেললাইনের ১০ গজের আওতাভুক্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের থানার। এ এলাকার যেকোনো ঘটনায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি। মেঘনাপাড় বা সেতু দেখা জিআরপি পুলিশের দায়িত্ব নয় জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :