এমপি রানার জামিন শুনানির সময় বাইরে সংঘর্ষ, অস্ত্রসহ আটক ১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
| আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:১৫ | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:০৮

টাঙ্গাইলে চাঞ্চল্যকর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার জামিনের শুনানিকে কেন্দ্র করে শহরে ব্যাপক উত্তেজনা হয়েছে। এমপির সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ।

এসময় ৮ রাউন্ড গুলি, ২টি ম্যাগজিন ও একটি বিদেশি পিস্তলসহ এমপি রানার দুই সমর্থকসহ আরো ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার সকালে এমপি রানাকে টাঙ্গাইল অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের আদালতে হাজির করার পর এ ঘটনা ঘটে।

মামলায় আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। মামলার অন্যতম আসামী সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার উপস্থিতিতে এ আদেশ দেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাকসুদা খানম। পাশাপাশি এমপি রানার জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করেছে আদালত।

এর আগে গত ৮ আগস্ট আসামিপক্ষের জামিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি হয়। সেদিন শুনানিতে বুধবার জামিন বিষয়ে আদেশ দেয়ার দিন ধার্য করেছিলো আদালত। একইসঙ্গে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও সাক্ষী উপস্থিত না থাকায় আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সাক্ষীগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।

এদিকে সকালে এমপি রানাকে আদালতে হাজির করার পর কোর্ট চত্তরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কোর্ট চত্তর ঘিরে মুক্তিযোদ্ধা ফারুকের সমর্থকরা এমপি রানার শাস্তির দাবিতে মিছিল করতে থাকে। আদালত চত্বরে সকাল থেকেই পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করে। আদালত চত্বর ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এক পর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে পুলিশ ২ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ ও ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। পরে প্রথমে দুপুর ১টার দিকে পুলিশ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গেটের একটি দোকান থেকে ৮ রাউন্ড গুলি, ২টি ম্যাগজিন ও একটি বিদেশী পিস্তলসহ এমপি রানার দুই সমর্থক রাইছুল ইসলাম রাব্বি (২০), মাজাহার হোসেন তমাল দুইজনকে আটক করে। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে আরো ৯ জনকে আটক করা হয়। এ নিয়ে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে।

এছাড়া শহরের ডিস্ট্রিক গেইট থেকে দুইটি চাইনিস কুড়াল, দুইট দেশীয় হাতুড়, ১টি লোহার ডান্ডা ও একটি রড উদ্ধার করা হয় বলে মঙ্গলবার দুপুর আড়াই টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শরিফুল হক বলেন, এমপি আমানুর রহমান খান রানার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র শহরে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। উত্তেজনা ও যে কোনও নাশকতা ঠেকাতে শহরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ২ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের অভিযানকালে হাসপাতাল গেট সম্মুখ থেকে ৮ রাউন্ড গুলি, ২টি ম্যাগজিন ও একটি বিদেশী পিস্তলসহ প্রথমে ২ জন ও পরে আরও ৯জনকে আটক করা হয়।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর এমপি রানা গত ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এই আদালতেই আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বেশ কয়েক দফা উচ্চ আদালত ও নিন্ম আদালতে আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি টাঙ্গাইল মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরবর্তীতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে এবং ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এমপি রানা ও তার তিনভাইসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

তদন্ত চলাকালে ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট এমপি আমানুর রহমান খান রানার ঘনিষ্ট কর্মী আনিসুর রহমান রাজা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে তিনদফায় মোট ১৫ দিন রিমান্ড শেষে ওই বছরের ২৭ আগস্ট টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদত হোসেনের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

অপর আসামী মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার হন একই বছরের ২৪ আগস্ট। তিনি দশদিনের রিমান্ড শেষে ৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ নাজমুন নাহারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

উভয় আসামীর জবানবন্দিতে ফারুক আহমেদ হত্যাকাণ্ডে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করলে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে খান পরিবারের চার ভাইয়ের জড়িত থাকার কথা প্রথম প্রকাশ পায়। এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার সঙ্গে আমানুর রহমান খান রানার অপর ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তদানীন্তন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও টাঙ্গাইল জেলা বণিক সমিতির সভাপতি জাহিদুর রহমান খান কাকন যুক্ত বলে মোহাম্মদ আলী তার জবানবন্দিতে প্রকাশ করেন।

ঢাকাটাইমস/০৫সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :