কারাগারে আদালত
জিয়ার সেনা শাসনের সঙ্গে তুলনার বিরুদ্ধে খালেদার আইনজীবী
কারাগারে আদালত বসানোর বিষয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলের সঙ্গে বর্তমান আমলের তুলনা চলে না বলে মনে করেন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
খালেদা জিয়ার মামলার শুনানিতে কারাগারে আদালত বসানোর বিষয়ে বিএনপির শাসনামলে কর্নেল তাহেরের বিচারের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে টেনেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থাকার সময় কর্নেল তাহেরের বিচার হয় সামরিক আদালতে এবং ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই তাঁকে ফাঁসি দেয়া হয়।
৪২ বছর পর আবার আদালত বসেছে কারাগারে। বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে চলা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানির জন্য বুধবার আদালত বসেছে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শেষ শুনানি হয়েছিল। কিন্তু ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আর শুনানি করা যায়নি। অসুস্থতার কথা বলে খালেদা জিয়া আর আদালতে যাননি এবং এ কারণে আদালতেই কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন। আর মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
বিএনপি এই সিদ্ধান্তকে সংবিধানবিরোধী বলে দাবি করেছে। তবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৯ ধারা অনুসারে কারাগারে আদালত গঠন করা হয়েছে এবং এখানে সংবিধান লঙ্ঘনের কিছুই ঘটেনি।
বুধবার প্রথমবারের মতো শুনানি হয় এই আদালতে এবং খালেদা জিয়া সেখানে হাজির হয়ে বলেছেন, তিনি আর আদালতে আসবেন না।
বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীরা অবশ্য এই শুনানি বর্জন করেছেন। আর বিকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষে কৌশল নির্ধারণ বিষয়ে বৈঠকে বসেন তার। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদন।
কর্নেল তাহেরের বিচারের উদাহরণের জবাবে খালেদার জিয়ার আইনজীবী বলেন, ‘তাহলে কি দেশে এখন সামরিক শাসন চলছে? এটা আইনমন্ত্রী জবাব দেবেন।’
‘কর্নেল তাহেরের যখন বিচার হয়েছে তখন দেশে সামরিক আইন ছিল। সেখানে কোনো সাংবিধানিক আইন ছিল না। তাহলে বুঝতে হবে তারা আইন মানে না। আইনমন্ত্রী যদি দেশের আইন না মানে তাহলে পরে সে দেশে বিচার ব্যবস্থা কীভাবে চলবে?’
‘যদি দেশে সামরিক শাসন থাকে সে ক্ষেত্রে যা ইচ্ছা তা করতে পারে। কিন্তু সংবিধান মোতাবেক কারাগারে কোনও আদালত স্থাপন করা যায় না।’
কারাগারের আদালত বসানোর প্রজ্ঞাপন বেআইনি দাবি করে জয়নুল দাবি করেন বিএনপির নেত্রীকে জোর করে হুইল চেয়ারে করে হাজির করা হয়েছে।
‘মঙ্গলবার হঠাৎ করে অন্ধকার কারাঘরে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিচারের জন্য একটি আদালত গঠন করা হয়েছে। অতীতে আমরা কখনো দেখিনি এবং বাংলাদেশে কেন পাকিস্তানের ইতিহাসেও নেই যে, সাংবিধানিকভাবে কারাগারে কোনও আদালত হতে পারে।’
সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, ‘বিচার হতে হবে প্রকাশ্যে এবং জনগণের উপস্থিতিতে, অর্থাৎ যেখানে জনগণের উপস্থিতি থাকবে না সেখানে বিচার করা যাবে না।’
কারাগারের যে কক্ষে অস্থায়ী আদালত বসানো হয়েছে সেটি সম্পর্কে জয়নুল বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিধি সেখানে গেছে। দেখেছে একটি অন্ধকার কূপ, একটি গুহা। ২৪ ফুট ও ২৬ ফুট হলো তার দৈর্ঘ্য প্রস্থ। এই অবস্থার মধ্যে একটি আদালত বসিয়েছে এবং খালেদা জিয়া এত অসুস্থ যে তিনি আসতে পারেননি। তবুও তাকে হুইল চেয়ারে করে জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে।’
‘সংবিধানে আছে জোর করে কাউকে আনা যাবে না, বিশেষ করে অসু্স্থ মানুষকে। অথচ তাকে (খালেদা) জোর করে আনা হয়েছে।’
এ সমস্ত বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দলের মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) এসেছিলেন আমাদের মতামত নেওয়ার জন্য। এখানে অন্য কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। খালেদা জিয়ার জন্য যে আদালত গঠন করা হয়েছে তা আইনগত কি-না সে বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনায় বসেছিলাম। এর পরবর্তী কী হবে সেটা সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে জানানো হবে।’
ঢাকাটাইমস/০৫ সেপ্টেম্বর/এমএবি/ডিএম