দুই ইউলুপ

যানজট অবসানে নতুন পথ

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:২০

এম গোলাম মোস্তফা

যানজট নিরসনে রাজধানী ঢাকার নবতর সংযোজন ইউলুপ। এখন পর্যন্ত দুটি ইউলুপ তৈরি হয়েছে। আর এ দুটিতেই প্রায় উধাও প্রগতি সরণির ব্য¯Íতম বাড্ডা ও রামপুরা এলাকার যানজট। ফলে সড়কের যাত্রীরা পেয়েছে স্বস্তি।

রামপুরা ব্রিজের ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে দেখা যায় ইউলুপ ব্যবহারের ফলে সিগন্যালে কোনো রকম যানজট নেই। বনশ্রী থেকে আসা গাড়িগুলো বাড্ডা, কুড়িল, উত্তরা, এয়ারপোর্ট যেতে এখন আর ইউটার্ন কিংবা রাইট টার্ন নিতে হচ্ছে না। হাতিরঝিল-কারওয়ান বাজার যেতে হলে যান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি না করে গাড়িগুলো সরাসরি ইউলুপ ব্যবহার করে যেতে পারছে গন্তব্যে। ইউলুপটি চালুর ফলে যানজট তো দূর হয়েছেই, পাশাপাশি কমেছে রাস্তায় চলাচলে ভোগান্তিও। ট্রাফিক পুলিশ, যানবাহনের চালক ও সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এই এলাকার যানচলাচলের আমূল পরিবর্তনের কথা।

রামপুরা ট্রাফিক জোনের টিআই মো. সারোয়ার জাহান বলেন, ‘ইউলুপ চালু হওয়ার পর এ এলাকা শতভাগ যানজটমুক্ত। কী রাস্তা ছিল এখানে! ট্রাফিক পুলিশ দম ফেলার সুযোগ পেত না। এখন এয়ারপোর্ট পর্যন্ত কোনো রকম যানজটে পড়তে হচ্ছে না যাত্রীদের।’

রাজধানীর যানজটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রামপুরা-নতুন বাজার সড়ক এলাকা। যানজট কমাতে ওই সড়কের বাড্ডায় তৈরি করা হয়েছে বাড্ডা ইউলুপ। এটি ব্যবহার করে হাতিরঝিল থেকে বের হয়ে সহজেই রামপুরা-বনশ্রী-মালিবাগের দিকে যাওয়া যাবে। একইভাবে এসব এলাকা থেকে যেকোনো যানবাহন নির্বিঘেœ হাতিরঝিল দিয়ে কারওয়ান বাজার বা মগবাজারের দিকে যেতে পারছে।

ইউলুপটি যানজট নিরসনে কতটা ভ‚মিকা রাখবে জানতে চাইলে হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (রাজউক) জামাল আক্তার ভূঁইয়া বলেন, ‘যানবাহনগুলো প্রগতি সরণি হয়ে ইউলুপ দিয়ে বাঁক নিয়ে বনশ্রী, আফতাবনগর, রামপুরা বা মালিবাগ অভিমুখে সহজেই যাতায়াত করতে পারছে। এয়ারপোর্ট, মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর, গুলশান ও কুড়িল যাওয়ার জন্য রাস্তার লেনটি করা হয়েছে ইউটার্নমুক্ত। পাশাপাশি বাড্ডা পয়েন্টে সৃষ্ট ব্যাপক যানজটেরও নিরসন হয়েছে।’

যোগ হবে নতুন ১১ ইউলুপ

যানজট নিরসনে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে এবার রাজধানীর যানজট কমাতে তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে উত্তরা-আবদুল্লাপুর পর্যন্ত ১১টি ইউলুপ করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এসব ইউলুপ বা¯Íবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে ডিএনসিসি। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুত কাজ শুরু হবে- জানিয়েছেন ডিএনসিসির সংশিøষ্ট ব্যক্তিরা।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত ছয়টি এবং বনানী ওভারপাস থেকে উত্তরা হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত পাঁচটি ইউলুপ নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যেই জমি অধিগ্রহণ ও নকশার কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বা¯Íবায়ন হলে রাজধানীর যানজট ২৫ শতাংশ কমবে বলে মনে করছেন সংশিøষ্টরা।

ঢাকার যানজট নিরসনে হাতিরঝিল থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২২টি ইউলুপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তৎকালীন মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ওই সভায় ডিএনসিসিকে ১২টি ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে ১০টি ইউলুপ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে আলোচ্য রুটেই নির্মাণ করা হবে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। এতে প্রকল্প দুটির মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য প্রকল্পটিতে আপত্তি তুলেছিল ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপÿ (ডিটিসিএ)। এ অবস্থায় ডিএনসিসির একটি ইউলুপ বাদ দিয়ে ১১টি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশক্রমে প্রকল্পটি ‘ইউলুপ’-এর স্থলে ‘ইউটার্ন’ করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল ও ডিএনসিসির যৌথ উদ্যোগে অর্থায়ন করা হবে। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, আর ডিএনসিসি ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয় করবে। গত ১১ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইউলুপ নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ও ইউটার্ন প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, ‘রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে উত্তরা-আবদুল্লাপুর পর্যন্ত ১১টি ইউলুপের পাশাপাশি রাস্তার উভয় পাশ প্রশ¯Í করা হবে। এ প্রকল্পের ফলে এসব এলাকায় যানজট অনেকটা কমে আসবে।’

ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/জিএম/এমআর