গোপালগঞ্জে কবিগানে মন্ত্রমুগ্ধ হাজারো দর্শক

নিজস্ব প্রতিবেদক,গোপালগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:১২

গোপালগঞ্জে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ঐতিহ্যবাহী কবিগান উপভোগ করলেন হাজারো দর্শক। উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত কবিয়াল ও বাংলাদেশ কবি অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি মনি শংকর সরকার ও সঞ্জয় সরকার এ কবিগানে অংশ নেন।

গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকে অসংখ্য শ্রোতা আসেন এ কবি গান শুনতে। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত এ গান অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রম্মচারীর ২৮৮ তম আবির্ভাব দিবস পালন উপলক্ষ্যে গোপালগঞ্জ লোকনাথ সেবক সংঘ কেন্দ্রীয় কালী বাড়ীতে এ কবি গানের আয়োজন করে।

ওই দিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সার্বজনীন কালিবাড়ির ময়দানের মাঝখানে বানানো মঞ্চে দুই কবিয়াল বাক-বিতন্ডা আর তর্ক-বিতর্কের যুদ্ধে লিপ্ত হয়। শ্রোতারা মন্ত্র-মুগ্ধের মতো নির্ঘুম রাত জেগে এই যুক্তিতর্ক উপভোগ করেন।

কবি গানের এ দৃশ্য এখন শুধুই কাল্পনিক হলেও সমাজের শিকড় সন্ধানী কিছু মানুষ এখনও এ কবি গানকে খুঁজে বেড়ান মনের অজান্তে।

যেখানে এই গানের খবর শোনেন সেখানে চলে যান ছুটে। তাইতো রাতে আলো-আধারে কবিয়ালদের তাত্ত্বিক যুক্তি-তর্ক শুনতে জড়ো হন হাজারো নারী-পুরুষ। প্রাচীনতম এই গান শুনতে ছুটে আসেন নতুন প্রজম্মের মানুরাও।

প্রখ্যাত এই দুই কবিয়ালের গান শুনতে গোপালগঞ্জ জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রোতা উপস্থিত হন। অনেকেই আবার প্রথমবারের মত কবিগান শুনতে হাজির হন। আয়োজকরা আগামীতেও কবি গান আয়োজন করবেন বলে জানিয়েছেন।

এক সময় এ অঞ্চলের শ্রোতারা কবি বিজয় সরকারের গান মন্ত্র-মুগ্ধের মতো শুনতেন। তখন মানুষের বিনোদনের একটি বড় মাধ্যম ছিল কবি, জারি, সারি গান। তার মধ্যে কবি গান ছিল অন্যতম। কালের আবর্তে এবং আধুনিকতার ছোয়ায় এসব গানের শ্রোতা একদিকে যেমন কমে গেছে, তেমনি গায়কও কমে গেছে।

গান শুনতে আশা ভজন সাহা , বিধান চন্দ্র আঢ্য,গোবিন্দ চন্দ্র দাস, অসীম রায়, সমীর রায়, রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, অন্যন্যা ভক্ত, প্রত্যাশা মন্ডল, শিপ্রা বিশ্বাস, নির্ম্মলা মন্ডল, অনুপম ভক্ত, বিনয় বিকাশ মজুমদার, পপি মন্ডল ও মিঠুন বালাসহ বেশ কয়েকজন শ্রোতা বলেন, কবি গান শুনলে সমাজের ভালো মন্দ জানা ও শেখা যায়। ধর্মীয় শিক্ষা পাওয়া যায়। আনেক আগে বেশী করে বকিগান হতো আমরা শুনতাম । এখন আর বেশী হয়না। তাই শুনতে ও পারিনা। যেখানে বকিগানের খবর পাই সেখানে চলে যাই।

বাংলাদেশ কবি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিশংকর সরকার বলেন, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ ও ভাটি অঞ্চলে বকিগানটা বেশী চলে। বকিগানে বিজ্ঞান, দর্শণ, ইতিহাস ও ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়। এখানে ভালো মন্দ দুটো দিক তুলে ধরা হয়। কারণ শুধু ভালো বললে মানুষ সেটা গ্রহণ নাও করতে পারে এই জন্য মন্দো দিকটা বলে মানুষকে ভালোর দিক বুঝানো হয়।

কবি গান যদি বেশী বেশী শোনা হয় তাহলে মানুষের লেখাপড়া না করেও জ্ঞানার্জন সম্ভব। তাই সরকারি বা বেসরকারি ভাবে যদি এই বকিগানকে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয় তাহলে কবি গানের মাধ্যমে দেশ আরও উন্নত হতো পারতো বলে তিনি জানান।

জম্ম-জয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক লিটন সাহা (মনা) বলেন, বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ও সম্প্রতির বন্ধন ধরে রাখতে আমরা এই কবি গানের আয়োজন করেছি। আগামীতেও এই ধরনের বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিগুলো পর্যায় ক্রমে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কিশোর কৃষ্ণ চন্দ বলেন, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রম্মচারী ছিলেন, দলিত নিপিড়ত মানুষের আশ্রয়স্থল। তার আবির্ভাব দিবসে তাই গ্রাম বাংলার লোক সংস্কৃতি কবি গানের আয়োজন করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৬ সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ওআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :