‘সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থায় কারাগারে কোর্ট বসার নজির নেই’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে অনুষ্ঠিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচার প্রক্রিয়াকে গোপন ট্রায়াল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেছেন, সাংবিধানিক সরকারব্যবস্থায় কারাগারে কোর্ট বসার নজির নেই পৃথিবীতে।
বুধবার রাতে বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনে ‘কোন দিন হবে জামিন’ শীর্ষক টক শোতে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘যেখানে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কোর্টে পাঠাচ্ছে না অসুস্থতার জন্য, সেখানে কেন তাকে ট্রায়ালের জন্য নিয়ে আসা হলো। কেন এই নিষ্ঠুরতা তার প্রতি? পৃথিবীর কোথাও এমন নিয়ম নেই যে, একজন অসুস্থ মানুষকে ট্রায়ালের মুখোমুখি হতে হয়।
‘আইন বলছে, আগে তাকে সুস্থ করতে হবে; তারপর তাকে ট্রায়ালে আনতে পারবে। তাহলে কেন একজন অসুস্থ মানুষকে ট্রায়ালে নিয়ে আসা হলো? কারণ তারা গোপন ট্রায়াল করতে চায়, যা ইচ্ছে তাই করতে চায়। এটা একটা গোপন ট্রায়াল।’
বিচার বিভাগকে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘তার কারণটা আমি খোলাখুলি বলছি। সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থায় পৃথিবীর কোনো দেশেই কারাগারে কোর্ট বসার নজির নেই। তা হলে কেন এটা কারাগারে বসানো হলো?’
এ সময় উপস্থাপক জানতে চান বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী হিসেবে কারাগারের আদালতে কেন যাননি মাহবুব উদ্দিন খোকন। জবাবে খোকন বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে আদালতে কীভাবে যাব। আমি যাইনি কারণ আমাদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি।’
রাহাত মিনহাজের সঞ্চালনায় টক তো উপস্থিত ছিলেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। খোকনকে উদ্দেশ্ করে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ত্বরান্বিত হোক সেটা আপনারা চান না। এ জন্যই আপনারা এসব অজুহাত সৃষ্টি করেন এবং এসব কথা বলছেন।’
কাজল বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বিচার এগিয়ে নিতে ডিজিটাল পদ্ধতি আমরা প্রয়োগ করতে পারি আইনের সংশোধনের মাধ্যমে। এখন প্রযুক্তির কারণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও বিচার হচ্ছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেই এটা করা হয়েছে।’
টক শোতে আরও উপস্থিত ছিলেন গাজী টিভির এডিটর-ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। তিনি দুদকের এই আইনজীবীর কাছে জানতে চান খালেদা জিয়ার বিচার প্রক্রিয়ার গেজেট কেন তাড়াহুড়ো করে প্রকাশ করা হলো এবং কেন বিরোধী পক্ষের আইনজীবীদের নোটিশ করা হলো না।
জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘তাড়াহুড়োর কোনো বিষয় নয়। এখানে আদালত হয়েছে, আদালত হওয়ার পর একজন পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে আমি মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছি। বেলা দুইটার দিকে আমরা জানিয়েছি। আমরা মিডিয়ার কাছে বলেছি যে বেগম জিয়ার বিচারের স্থান পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনটা হয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৯(২) ধারা মোতাবেক। আইনেই আছে, সরকার ইচ্ছে করলে যেকোনো স্থানে আদালত বসাতে পারেন। সেই বিধান মোতাবেকই হয়েছে। এবং এই সিদ্ধান্তটা উচ্চতর আদালতে নিষ্পত্তিও হয়েছে।’
মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘বিচারকে সহজ করা ও খালেদা জিয়ার নিরাপদ আসা-যাওয়ার জন্য এটা করা হয়েছে। এবং এটার গেজেট যখন হয়েছে তার কপিও আমরা পাঠিয়েছি। বিচারটা দেরি হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে বিচার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কারাগারে বিচার প্রক্রিয়া হচ্ছে। বিএনপির উচিত ছিল এটাকে ত্বরান্বিত করা। আইনের লড়াই করা। সেসব কাজে তারা আসেন না।’
(ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/এনআই/মোআ)