রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মুখে পিতা মুজিবের কথা শুনে অভিভূত

ড. কাজী এরতেজা হাসান
 | প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:৫৫

সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা। ঢাকার কোথাও কোথাও বৃষ্টিও হয়েছে ইতিহাসের দায়মুক্তির দাবি নিয়ে। প্রকৃতির এমন দিনে নির্মল বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে এক মহতী অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছি রাষ্ট্রনায়ক, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনন্য এক অধ্যায়। যে অধ্যায় আমাদের জাতির ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করবে, এমনকি অজানা অনেক অধ্যায় আমাদের চোখের সমানে নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরবে।

শুক্রবার বিকালে দেশের প্রভাবশালী মন্ত্রী, আমলা, পদস্থ কর্মকর্তা, কূটনৈতিকদের মেলা বসেছিল গণভবনে। উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের গোপন নথি নিয়ে ১৪ খণ্ডের বইয়ের প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক বইটির প্রকাশনা উৎসব।

উৎসবে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রায় আধা ঘন্টার বক্তব্য শুনেছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বললেন, দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরই তখনকার স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)’র প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জাতির জনককে নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নথিগুলো দেয়ার জন্য। কিন্তু সে সময় তিনি সেগুলো পাননি। এরপর ২০১০ সালে বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. জাবেদ পাটোয়ারীকে দায়িত্ব দেয়ার পর অনেক কষ্ট করে তিনি এসব নথি খুঁজে বের করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৎকালীন পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নথিতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যেসব নথি পাওয়া গেছে তার বেশিরভাগই ছিল নেতিবাচক। প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতার কন্যা হিসাবে চাইলে নেতিবাচক প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ না করে সব ইতিবাচক প্রতিবেদন নিয়েই বইটি প্রকাশ করতে পারতাম। কিন্তু তাহলে ইতিহাসের মহানয়ক সর্ম্পকে অনেক অজানা অধ্যায়ই জাতি জানতে পারবো না।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান নির্ণয় করা যাবে না। দেশের মানুষের স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আনতে তিনি কতটুকু করেছেন তা দেশের মানুষ জানে। গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি বঙ্গবন্ধু হননি। তিনি জনগণের আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়েই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হয়েছেন। আমি (প্রধানমন্ত্রী) চাইলে বাবাকে (বঙ্গবন্ধু) ফেরশতা হিসাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই নির্মোহ সঠিক ইতিহাসটা সবাই জানুক। পাঠকই বিচার করবে বঙ্গবন্ধু কেমন ছিলেন। তার সব দিক জানাটা আমাদের সবার প্রয়োজন।

বঙ্গবন্ধু কন্যার এমন মহানুভব ও নির্মোহ বক্তব্য শোনার পর বারবার মনে হয়েছে, একজন রাষ্ট্রনায়ক হয়েও পিতা মুজিবের নেতিবাচক গোয়ন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করার সৎ সাহস আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও নেই।

প্রকাশনা উৎসব শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটি নিয়ে যখন গণভবন থেকে বের হচ্ছিলাম তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই), জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের মহাপরিচালকগণ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিক, সেনাবাহিনীর কোয়াটার মাস্টার জেনারেল। ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বেরিয়ে আসার সময় বলছিলাম, যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই, তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা ফিরে পেতাম জাতির পিতা।

সত্যিই ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখ পিতা মুজিবকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তাতে পাঠক হিসাবে আমি মুগ্ধ। নির্মোহ সত্য ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরতে তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়।

‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটির মাধ্যমে বাঙালি জাতি তার ইতিহাসের মহানায়কের অজানা অধ্যায়গুলো জেনে তৃপ্ত হবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য ও ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য

সংবাদটি শেয়ার করুন

গণমাধ্যম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

গণমাধ্যম এর সর্বশেষ

সাংবাদিক মিনার মাহমুদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাংবাদিক সাব্বিরের ওপর নৃশংস হামলায় ঢাকাস্থ গাজীপুর সাংবাদিক ফোরামের নিন্দা

বাংলানিউজকর্মী মিথুনের ক্যানসার চিকিৎসায় এগিয়ে এলো বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন

আজ ভোরের পাতা সম্পাদকের পিতার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী

সাংবাদিক মোহসিন কবিরকে মারধরের ঘটনায় ডিআরইউর প্রতিবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ সাংবাদিককে বহিষ্কারের নিন্দা বিএফইউজের

ডিইউজে নির্বাচন: সোহেল-তপু সভাপতি, আকতার সম্পাদক

ঈর্ষান্বিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে ঢাকা টাইমস সম্পাদককে

শেরপুরের সাংবাদিক রানাকে কারাদণ্ডে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

নকলায় সাংবাদিককে কারাদণ্ড: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্বেগ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :