রাজবাড়ীতে পদ্মার ভাঙন, হুমকিতে নদীপাড়ের মানুষ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:১১

রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন পদ্মার ডান তীর সংরক্ষণ বাঁধের চরধুঞ্চি এলাকায় আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। রবিবার হঠাৎ রাজবাড়ী বেড়িবাঁধের তীর সংরক্ষণ বাঁধের চরধুঞ্চি গ্রামে শুরু হয় নদী ভাঙন। তিন দিন ধরে ওই এলাকায় আকস্মিক ভাঙন দেখা দেয়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এতে প্রায় পাঁচশ' মিটারের বেশি সিসি ব্লক বাঁধ নদীতে তলিয়ে গেছে। ভাঙনে ওই এলাকায় মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

ভাঙনের খবর পেয়ে রবিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

রবিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া নদী ভাঙন মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্তও থামেনি।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজবাড়ী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর তীর সংলগ্ন ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধের প্রায় সাড়ে পাঁচশ মিটারের সিসি ব্লক ধসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি মাসে শহরের গোদার বাজার ও ধুঞ্চি এলাকার শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

আর হুমকির মুখে রয়েছে এ এলাকার তিনটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল ও মসজিদ এবং শত শত পরিবারের দীর্ঘদিনের বসত বাড়ি। যে কোনো সময় এগুলোও ভেঙে যেতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা। ভাঙনে নদীতে চলে যেতে পারে এ আশঙ্ক্ষায় অনেকে তাদের অনেক সাধের স্বপ্নের ঘরবাড়িসহ মূল্যবান সহায়-সম্বল ভেঙে দূরের আত্মীয়দের বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জলিল মণ্ডল ও চরধুঞ্চি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দোলেনা বেগম জানান, ঈশ্বরদীতে পারমানিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ভারি যন্ত্রপাতি নদী পথে বহনের জন্য সরকার বিআইডব্লিউটিএ-এর মাধ্যমে গত এক বছর ধরে পদ্মা নদী খনন করা হচ্ছে। নদীর তীর ঘেঁষে এবং একই জায়গায় অনেক দিন ধরে খনন কার্যক্রম চলছে। দীর্ঘদিন তাদের বাড়ি সংলগ্ন নদীতে ড্রেজিং করছে কর্তৃপক্ষ। এভাবে টানা একই স্থানে খনন করলে তাদের বাড়িঘর ভেঙে যেতে পারে এই ভয়ে ড্রেজার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু যারা এখানে দায়িত্বে আছেন তারা আমাদের কথায় গুরুত্ব দেননি।

রাজবাড়ীতে পদ্মার তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লোকজন। এক সপ্তাহের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার বিঘা জমি। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত নদী শাসন না করলে জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে অনেক গ্রাম ও ইউনিয়ন। ভাঙন ঠেকাতে জরুরিভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ব্যাগে নিয়ম অনুযায়ী মোটা দানার বালু ভরা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

নদী পাড়ের লোকজন জানান, চোখের সামনে নদীতে চলে যাচ্ছে ফসলি জমি ও বসতভিটা। গত ১ সপ্তাহে প্রায় কয়েক হাজার বিঘা জমি হারিয়ে গেছে পদ্মার করাল গ্রাসে। জেলা সদরের গোদারবাজার ঘাট, অন্তরমোড়, উড়াকান্দা, মহাদেবপুর, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়ন, গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়ন এলাকায় চলছে নদীভাঙন। ভাঙনের তীব্রতায় নিঃস্ব হয়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের ওপরে। হুকিতে রয়েছে নদী পাড়ে অবস্থিত সরকারি বিদ্যালয়, মসজিদসহ নানা সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, এমনকি শহররক্ষা বাঁধও রয়েছে হুমকিতে। জেলা সদরের চরধুঞ্চি এলাকার জলিল বলেন, এই এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি মসজিদ, বিদ্যালয়সহ শত শত বাড়িঘর। নদীভাঙনে এসব এলাকার মানুষ তাদের বাড়িঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। নদী গত কয়েক দিন ধরে পাড়ের মাটি সব তলিয়ে নিচ্ছে। নদী পাড়ের যেসব জমি অবশিষ্ট আছে এগুলোও যেকোনও সময় তলিয়ে যাবে।

স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য কিবরিয়া বলেন, ভাঙনে অনেক পরিবার এখন ক্ষতিগ্রস্ত। তারা অসহায় হয়ে এখন বাঁধের ওপরে আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয় কালাম বলেন, নদী যেভাবে ভাঙছে এভাবে ভাঙতে থাকলে বাঁধ হুমকিতে পড়বে। বাঁধ যদি ভেঙে যায় তাহলে রাজবাড়ী শহরে পানি ঢুকবে।

গত তিন দিনে হঠাৎ চরধুঞ্চি গ্রামের পনের পরিবারের বসতঘরগুলো ও অন্যান্য গাছপালা নদীতে ভেঙে পড়লে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের প্রচেষ্টা করছে।

তবে ব্যাগে নিয়ম অনুযায়ী মোটা দানার বালু ভরা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। স্থানীয় রাজু শেখ অভিযোগ করে বলেন, এখন যে অবস্থায় নদী ভাঙছে তাতে মানুষের অনেক দুর্দশা। এখানে ঠিকাদাররা যে কাজ করছে তা ঠিকমতো হচ্ছে না। বালির বস্তা যেভাবে ফেলার কথা সেভাবে ফেলছে না। কম ফেলছে, আরও বেশি করে বালির বস্তা ফেলতে হবে।

নিম্নমানের বালু ভর্তির কথা স্বীকার করে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানালেন, জরুরিভিত্তিতে এমনভাবে কাজ চলছে। পরে ভাঙন ঠেকে গেলে স্থায়ী কাজ করা হবে। কিন্তু গত তিন দিনে হাজার বস্তা নদী ফেলা হলেও ভাঙন ঠেকছে না।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক জানান, ড্রেজিংয়ের কারণে নদীতে ঘরবাড়ি ভাঙার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সান্তনা দেই। কীভাবে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় তা নিয়ে ড্রেজিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, আমরা আমাদের প্লান অনুযায়ী জরুরিভাবে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলে কাজ করেছি, কিন্তু পাড়ের বালু মাটিগুলো একটু নরম হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার জানান, রাজবাড়ী অংশের ৮০ কিলোমিটার জুরিডিকশন অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে ভাঙন। শুধু জেলা সদরের গোদারবাজার ঘাট এলাকায় সিসি ব্লকসহ প্রায় ৫০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবারের ভাঙন বেশি।

তিনি বলেন, সদর উপজেলার গোদারবাজার ঘাট এলাকায় আমরা লক্ষ্য করেছি, গত দুই সপ্তাহে হঠাৎ করেই রাইট ব্যাংকে (নদীর ডান তীরে) যে কাজ করা ছিল সেটা বিভিন্ন জায়গায় স্লুইট করে নেমে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও আমরা এখানে নদীর গভীরতা মেপে দেখেছি এখানে স্রোত বেশি।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯-১০ সালে যে কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, নদী বর্তমানে খাড়া হয়ে যাওয়ায় তা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এসেছে। এ পর্যন্ত রাজবাড়ী অংশের ৮০ কিলোমিটার জুরিডেকশন অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে ভাঙন। শুধু জেলা সদরের গোদারবাজার ঘাট এলাকায় সিসি ব্লকসহ প্রায় ৫০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এজন্য আমরা এখানে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করছি। তবে নদী তীরের কাছাকাছি ড্রেজিং করার ফলে বিগত বছরের চেয়ে এবারের ভাঙন বেশি কিনা তা খতিয়ে দেখলে বুঝতে পারব।

(ঢাকাটাইমস/১১সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :