কাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য-৩

লক্ষ্মীপুরে নীরব, ঢাকায় সরব আ স ম রব

আব্বাছ হোসেন, লক্ষ্মীপুর
 | প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:১৯

বাহাত্তরের যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), তা আর নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাঙতে ভাঙতে নানা ব্র্যাকেটে বন্দি হয়েছে দলটি। তাই জাসদের একটি অংশ এখন সক্রিয় জেএসডি নামে। এর সভাপতি আ স ম আবদুর রব। রাজনীতির মাঠের হিসাবে ঢাকায় অনেক সরব তিনি। তবে নির্বাচনি এলাকা লক্ষ্মীপুরে অনেকটাই নীরব তিনি বা তার দল।

গত তিন দশকে জোট রাজনীতিতে সক্রিয় তিনি। কখনো জাতীয় পার্টি, কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গড়েছেন। এভাবে এমপি, মন্ত্রী হয়েছেন। হালে তার বেশি উঠাবসা বি. চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে। তাদের সবার নতুন মোর্চা যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্ট আবার বিএনপির সঙ্গে বৃহৎ ঐক্য নিয়ে আগ্রহী। সবটা মিলে বিএনপি জোটের দিকেই আছে জেএসডি।

আ স ম আবদুর রবের নির্বাচনি আসন লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর)। এখান থেকে ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আর এ আসন থেকে নির্বাচিত হতে পারেননি তিনি।

১৯৮৮ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বর্জন করা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রবের দল লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ আসন) থেকে এম এ গোফরান, লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর আসন) থেকে আবদুস সাত্তার ও লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি আসন) থেকে আ স ম আবদুর রব বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। এভাবে রব সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হন। তখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। তাই রবের দল এরশাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের কাছে ‘গৃহপালিত বিরোধীদল’ হিসেবে সমালোচিত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জোটের সুবিধা নিয়ে নৌ-পরিবহন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

নব্বইয়ের দশকের শেষার্ধ্বে ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে জাসদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পায় লক্ষ্মীপুর। এরশাদের পতনের পর তাতে ভাটা পড়তে শুরু করে। ১৯৯১ সালে বিএনপি প্রার্থী আবদুর রব চৌধুরী ২৫ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন আ স ম আবদুর রব। তিনি পান ২৫ হাজার ভোট। ২০০ ভোটে পরাজিত হন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন নিজান পান ৪৫ হাজার ৯৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন আ স ম আবদুর রব। তিনি পান ৪৩ হাজার ৪৫৩ ভোট। এবার পরাজিত হন দুই হাজার ৫২৪ ভোটে। ২০০৮ সালে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসন থেকে ভোট করে চতুর্থ হন আ স ম আবদুর রব।

এরশাদ আমলের প্রত্যক্ষদর্শী এমন স্থানীয়দের অভিযোগ, এরশাদ শাসনামলে জাতীয় পার্টির পাশাপাশি জাসদও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এমনকি ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের দিন রামগতি বাজারে জিতেন্দ্র নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে তারা। ওই সময় এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন আ স ম আবদুর রব। তখন বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। পরে সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লায় নিয়ে যায়। তবে একসময় লক্ষ্মীপুরের প্রতিটি এলাকায় জাসদের নেতা-কর্মী ছিল। এখন নেই বললেই চলে। ছোট্ট সমাবেশ করার মতো জনবলেরও অভাব। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এলাকায় সরব হন রব। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে তিনি নীরব থাকেন, এলাকায় যানও কম। তখন সক্রিয় থাকেন ঢাকায়।

রব বিভিন্ন সরকারের সময়ে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকলেও এলাকার উন্নয়নে কাজ করেননি বলে অভিযোগ করেন রামগতি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন হেলাল। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, রব সাহেব এমপি, মন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছেন রাজনৈতিক জীবনে। কিন্তু নদী ভাঙন প্রতিরোধ থেকে শুরু করে এলাকায় তার কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ছিল না। তাই স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি ও তার দল এখন অনেকটাই গুরুত্বহীন।

তবে উল্টো কথা বললেন রামগতি উপজেলা যুব পরিষদের সভাপতি আবদুল হান্নান। তার দাবি, ‘জাসদ আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে সভা-সমাবেশসহ দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে জাসদের প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন।’

ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় নির্বাচন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা