কোনো লোভ নয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:২৯ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:২৫
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লোভে না পড়ে বিনিয়োগ শিক্ষা এবং কোম্পানির সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বলেছেন, কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হলে তার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। তাহলেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির রজতজয়ন্তী বা ২৫ বছর পূর্তিতে বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বিকাশ ও স্বচ্ছতা এবং জবাবহিদিতা নিশ্চিতে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগও তুলে ধরেন।
পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস এবং ভবিষ্যতে উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে একটি হাতিয়ার হিসেবেও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
বর্তমান সরকারের আমলেই ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধস নামে। আর বিনিয়োগ শিক্ষা ও পর্যাপ্ত জ্ঞান ছাড়াই হাজারো মানুষ বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে লোকসানে পড়ে শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায়। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারের সূচক যেখানে ছিল, আট বছর পর ২০১৮ সালেও সেখানে পৌঁছেনি।
এই ধসের জন্য সরকারকেই দায় নিতে হয়েছে, সেটি জানেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্যই তিনি বিনিয়োগকারীদের শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন।
‘আপনারা যাই করেন না কেন গালিটা খেতে হগয় সরকারকে। অথচ আমরা সরকার এর মধ্যে নাই বলতে হয়। কিন্তু তারপরও আমি এ জন্য আমি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করব, কারও কথায় প্ররোচিত না, নিজে জেনে বুঝে তারপর পদক্ষেপ নিতে হবে, তার পরে বিনিয়োগ করতে হবে।’
‘আমি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করব, যে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবেন, সে প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে সকল তথ্য সংগ্রহ করে নেবেন। সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেবেন, বিস্তারিত জেনে নেবেন যে কোথায় আপনি বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন, বা সেটার ভবিষ্যতটা কী এবং সে ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ থাকবেন।’
বেশি লোভ না করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগ করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটা আমরা কখনও চাই না। আর খুব বেশি যেন লোভে পড়ে না যান। আর একটা সীমা রেখেই পা ফেলতে হবে। তাহলেই কেউ ক্ষতিগস্ত হবেন না।’
১৭ মিনিটের বক্তব্যে শেখ হাসিনা তার সরকারের আমলে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, সারা দেশে ১০০টি শিল্প অঞ্চল তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দেয়ায় কর্মসংস্থান বিৃদ্ধি, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের কথা তুলে ধরেন।
পুঁজিবাজারকে ‘আর্থিক খাতের অন্যতম স্তম্ভ’ উল্লেখ করে এর বিকাশেও সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘পুঁজিবাজার আজকে স্থিতিশীল অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। বাংলোদেশেরে পুঁজিবাজার আজকে বিকাশমান. সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’
বিএসইসির নিজস্ব ভবনও নির্মাণ, কমিশনের কর্মীদের পদমর্যাদা ও বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাংলাদেশ ব্যাংকের সমমানের করে দেয়া, কমিশনের জন্য জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনি বিধান রাখা হয়েছে। কমিশনে কর্মরত সকলের জন্য দেশে বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষণ যাতে হয় হয় সে ব্যবস্থা করেছি।’
‘একটি স্থিতিশীল স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকাণ্ডে স্থিতিশীলতা আনয়নের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে।’
‘শেয়ারবাজারে লেনদেন কারচুপি ও অনিয়ম শনাক্তকরণে যথাযথ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণীত প্রণোদনা প্যাকেজের সকল বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।’
‘আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল এফআরসি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট রুলস ২০১৫ এর মাধ্যমে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অব প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হচ্ছে।’
নানা উদ্যোগের ফলে বিএসইসির ‘এ’ ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের সম্মান অর্জন এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
চীনের কনসোর্টিয়াম ইতিমধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবে বলে আমি বিশ্বাসন করেন প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস হিসেবে মানি মার্কেটের উন্নয়ন, নতুন নতুন প্রোডাক্ট চালু, এর তার পরিচিতি পরিচালন প্রক্রিয়া ও কৌশল সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করাসহ নানা পরামর্শও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, এসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হলে বেসরকারিখাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তড়ান্বিত হবে এবং দেশে অগ্রগতির ধারা আরও বেগবান করবে।
সরকার ভবিষ্যতেও পুঁজিবাজার উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম প্রমুখ এ সময় বক্তব্য রাখেন।
ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/ডব্লিউবি