বেগুনে অভাব দূর

মফিজুর রহমান শিপন, ফরিদপুর
| আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:০১ | প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৫৫

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় এখন মাঠের পর মাঠে চলছে বেগুনের আবাদ। প্রতিনিয়তই এখানে বাড়ছে বেগুন চাষ। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া বেগুন চাষের উপযোগী হওয়ায় বাম্পার ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। বাজারেও বেগুনের ভালো দাম পেয়ে এখন তাদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক।

কৃষকরা জানান, তাদের উৎপাদিত বেগুন পাইকাররা নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন হাট ও বাজারে।

সদরপুর উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঋতুভেদে প্রায় সব ধরনের সবজি উৎপন্ন হয় সদরপুরে। এখন ধান, গম, পাট থেকে সবজি চাষে লাভ বেশী হওয়ায় সবজির প্রতি অধিক হারে ঝুকছে এলানকার কৃষক।

অন্যান্য সবজির চেয়ে বেগুন আরও লাভজনক হওয়ায় বেগুন চাষে ঝুকছেন তারা। বেগুন চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবী, মাঠ শৌলডুবী, আবুলের মোড়, বাঁধানোঘাট এলাকায় গত ১৫বছর ধরে বিভিন্ন মৌসুমে জমিতে অন্যান্য ফসল চাষ না করে বেগুন চাষ করেছেন কৃষকরা।

অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকার প্রত্যেক কৃষকই সর্বনিম্মে পাঁচ কাঠা থেকে সর্বোচ্চ দুই বিঘা পর্যন্ত জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। এসব এলাকায় এসে যে দিকেই চোখ যায় দেখা মেলবে মাঠের পর মাঠ শুধু বেগুনের ক্ষেত।

এখানকার কৃষকরা জানান, বি পি হাইব্রিট, আইরেট, সিন্দুরী, সাদা, লাফাসহ বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ করেছেন তারা।

শৌলডুবী গ্রামের কৃষক আবুল বাশার জানান, তিনি ৪০শতাংশ জমি প্রতিবছর ২০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে গত তিন বছর ধরে বেগুন চাষ করছেন। অন্যান্য সবজির তুলনায় সারা বছরই বেগুনের একটু ভালো দাম পাওয়া যায়। বেগুন চাষ করে তার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে।

মাঠ শৌলডুবী গ্রামের কৃষক শাহেদ আলী মোল্লা জানান, তার নিজস্ব এক বিঘা জমি তিনি বেগুনের ক্ষেত করেছেন। বেগুন বিক্রি করে তিনি লাভবান হয়েছেন।

বাঁধানো ঘাঠ গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন তার ১০ কাঠা জমিতে এবং ভাষানচর গ্রামের শাহজাহান খাঁ ৭ কাঠা জমিতে ও মারুফ শিকদার ৯ কাঠা জমিতে এবং আজিজ মোল্লা ১৫ কাঠা জমিতে এবার বেগুনের চাষ করেছেন।

বেগুন চাষিরা জানান, বেগুন চাষে বোরো ধান আবাদের চেয়ে পানি কম লাগে। সার ও শ্রমিক খরচও অনেক কম। তুলনামূলকভাবে বাজারে মূল্য বেশী পাওয়া যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করলে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ওই জমি থেকে বেগুন পাওয়া যায় ১২০ থেকে ১৫০মণ।

ওই এলাকার বেগুন চাষি হাফিজ মাতুব্বর, জলিল পরামানিক, কালাম পরামানিকসহ আরও অনেকেই জানান, বেগুন চারা রোপনের এক মাস পর থেকেই ফলন শুরু হয়। এক টানা ৬মাস এ ফলন অব্যাহত থাকে। ফলন শুরু হওয়ার পর থেকেই সপ্তাহে দুইবার করে ক্ষেত থেকে বেগুন তোলা হয়। সপ্তাহের দুইদিনে ৮থেকে ১২মণ তোলা হয়। বাজার ভালো হলে প্রতি মণ বেগুন ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা যায়।

প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ১৩০ মণ বেগুন উৎপাদন ধরা হলে এক বিঘা জমি থেকে এক মৌসুমে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব।

প্রতি বিঘা জমিতে বেগুন রোপন ও সার কিটনাশক, শ্রমিক মজুরি দিয়ে কৃষকের খরচ বাদে লাভ হয় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা মুনাফা করা সম্ভব।

সদরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কাজি শফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার শৈলডুবির বেগুনের সুনাম দীর্ঘ দিনের। তিনি বলেন, কৃষকের বেগুন বিক্রি করতে তাদের বেশী কষ্ট করে হাটে বাজারে যেতে হয় না। স্থানীয় শৌলডুবী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, মজুমদার বাজার, সাদিপুর বাজার, বাড়ৈরহাট, নীল মনির বাজার, কৃষ্ণপুর বাজার, বাঁধানোঘাট, পোস্ট অফিস মোড় নামক এলাকায় প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুই দফা বেগুনের হাট বসে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে হাট থেকে হাজার হাজার মণ বেগুন কিনে বস্তাবন্দি করে দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠাচ্ছেন।

অপরদিকে পাইকারী কাঁচা তরকারী ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে কিনে নগদ টাকা দিয়ে যায়। এতেও কৃষকরা বেশী লাভবান হচ্ছেন।

ওই বাজারের পাইকারী বেগুন ক্রেতা আমজাদ হোসেন জানান, সদরপুরের বেগুনের কদর রয়েছে দেশের বিবিন্ন বাজার ও হাটে। তারা এখান থেকে বেগুন কিনে তারা ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ি, দোহার বাজার, নারিশা বাজার, কার্তিকপুর, শ্রীনগর, মাদারীপুর, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন বাজারে এখানকার বেগুন এক হাজার দুইশ থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়।

সদরপুর কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় ২৯০ হেক্টর জমিতে বেগুনের চাষ করা হয়েছে। গত বছর বেগুন চাষের জমির পরিমান ছিল ২৫০হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এ বছর ৪০ হেক্টর বেশী জমিতে বেগুনের চাষ করা হয়েছে।

উপজেলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় জানান, এ এলাকার কৃষকরা অত্যন্ত পরিশ্রমী পাশাপাশি চাষাবাদের বিভিন্ন কলা কৌশল জানার জন্য তারা বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক সেমিনারে অংশ নিয়ে থাকেন। বেগুন চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বেগুন চাষে উৎসাহী হয়েছে।

তিনি বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা বেগুন চাষে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটিয়েছেন যা দেখে অন্যান্য জেলার কৃষকরা উৎসাহিত হতে পারেন।

ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কান্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, জেলার শৌলডুবীর বেগুন চাষিদের আমরা মৌসুমের সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়াও এই মৌসুমে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা বেগুনক্ষেত গুলোতে বিশেষ নজর রাখেন।

(ঢাকাটাইমস/১২ সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ওআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :