ফখরুলকে গুতেরেসের আমন্ত্রণ পাত্তা দিচ্ছেন না কাদের

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোরিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিউ ইয়র্ক যাত্রাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, ‘জাতিসংঘ ডাকতে পারে, কথা বলতে পারে; কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত আমরাই নেব।’

‘জনগণই আমাদের শক্তি। সংবিধান বহির্ভূত কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না।’

বুধবার নগরভবনে আয়োজিত ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পরিষদের ১১তম সভা শেষে ক্ষমতাসীন দলের নেতা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের আমন্ত্রণে গত রাতে মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে গিয়ে তাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবিরও।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার চেষ্টায় বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘের জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো। তবে সমঝোতা হয়নি।

তখন যে বিরোধে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি, সেই বিরোধের মীমাংসা হয়নি এখনও। সরকার সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে রাজি নয়। আর বিএনপিও বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথাই বলছে।

এই পরিস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিবকে জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণের বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মতামত জানতে চাওয়া হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার কাছে অবিরাম নালিশ করে চলেছে। আবারও হয়ত তারা দিবে। তবে, ডাকলে যেতেই পারে। এখানে সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের কোন আপত্তি নেই।’

প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে দায়িত্ব নেবেন কে? ফখরুল?’

নির্বাচনের আগে বিএনপির প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিকে ‘মামার বাড়ির আবদার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন কাদের। প্রশ্ন রেখেছেন, তাহলে তখন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।

আওয়ামী লীগের আগের আমলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়। ফলে নির্বাচিত সরকারের অধীনেই হয়েছে দশম সংসদ নির্বাচন আর আগামী নির্বাচনও সংবিধানের এই বিথানেই হবে বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।

তবে বিএনপি তফসিলের আগেই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়াসহ নানা দাবি জানাচ্ছে। নইলে নির্বাচন হতে না দেয়ার হুমকিও দিচ্ছে তারা।

বিএনপির হুমকির জবাবে কাদের বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন তাহলে দেশের দায়িত্ব নিবেন কে, মির্জা ফখরুল? মামা বাড়ির আবদার। কোন চাপের কাছে মাথা নত করা হবে না। সবকিছুই সংবিধান অনুযায়ী চলবে, আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না।’

‘পরিষ্কারভাবে বলতে চাই নির্বাচন হবে পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী। সরকার কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।’

আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘অক্টোবরের পর সংসদ আর বসবে না। মন্ত্রীরা শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবেন। সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙা হবে না, তবে সংসদ বসবে না যদি দেশে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি না হয়।’

তবে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো আশঙ্কা নেই সেটিও জানিয়ে দেন কাদের। বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে যখন আমরা যুদ্ধ করলাম না আর কার সাথে যুদ্ধ করা লাগবে? তারা তাদের হেলিকপ্টার দিয়ে বার বার আকাশসীমা লংঘন করে আমাদেরকে উস্কানি দিয়েছে তারপরও আমরা যুদ্ধে জড়াইনি।’

নির্বাচনের আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি পাবেন কি না এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে আদালত। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। সরকার যদি আদালতের উপর হস্তক্ষেপ করতই তাহলে ৩০টির ওপরে মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন পেতেন না। বারবার বলেছি আবারো বলছি এটা আদালতের বিষয়।’

প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন সংসদে উঠছে রবিবার

মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদন দেওয়া প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন  এর খসড়া আগামী রবিবার সংসদে তোলা হবে বলেও জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। বলেন, ‘এরপর এটি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে। দশম জাতীয় সংসদের একটি সংক্ষিপ্ত অধিবেশন আগামী অক্টোবরে হবে। সড়ক নিরাপত্তা আইনটি ওই অধিবেশনে পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ঝুলে থাকা সড়ক পরিবহন আইনটির খসড়ায় অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এই আইন বাস্তবায়নে সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা অনেক কমে আসবে বলে আশা করছে সরকার।

ঢাকাটাইমস/১২ সেপ্টম্বর/এনআই/ডব্লিউবি