আসছে ইমন-আজাদের ‘স্বপ্নের উড়ান’

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:০৪

শেখ সাইফ, ঢাকাটাইমস

জীর্ণ জীবনযাপন করা মানুষেরও কত না স্বপ্ন থাকে। থাকে স্বপ্ন পূরণের অদম্য ইচ্ছা। কৃষকের অসহায়ত্ব আর সুদখোরের রক্তচোষার মধ্যদিয়ে চলে জীবন। অভাব যেখানে নিত্য সঙ্গী। এমনি গ্রাম্য আবহে তৈরি হয়েছে টেলিছবি ‘স্বপ্নের উড়ান’।

পান্থ শাহরিয়ারের রচনা ও সাইফুল আলমের পরিচালনায় শিগগির আসছে টেলিছবি ‘স্বপ্নের উড়ান’। চ্যানেল আই-এর পর্দায় দেখা যাবে টেলিছবিটি।

স্বপ্নের উড়ান টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম, মামনুন হাসান ইমন, জান্নাতুন নুর মুন, ইকবাল হোসাইন, মতিউল আলম, আফ্রিবা মুমু, রনি, জুথি, রাজ্জাক রাজ, মুক্তা, আফিয়া, সাইফুল আলম শামীম, রাফি মামুন সহ আরও অনেকে...।

টেলিছবিটির চিত্রগ্রহণে ছিলেন নিয়াজ মাহবুব। সম্পাদনা করেছেন আমিনুল সিকদার। সহ-সম্পাদনা করেছেন সৈকত আশরাফ। আবহ সংগীত- মীর মাসুম, প্রধান সহকারী পরিচালক- রাজ্জাক রাজ, সহকারী পরিচালক- রাফি মামুন।

পুবাইলের বিভিন্ন লোকেশানে টেলিছবিটির চিত্রায়ণ করা হয়েছে।

টেলিছবির গল্পে দেখা যাবে-এক চিলতে জমির উপর অতি জীর্ণ একটা বাড়ি মানিকের। দূর থেকে এক পলক দেখেই বুঝে নেয়া যায় অতি দরিদ্র এক কৃষকের ছাপড়া ঘর। বাড়ির সামনে এক টুকরো খোলা জায়গা আর আর সেখানেই পৃথিবীর সমস্ত আনন্দ জড়ো করে খেলতে থাকা মানিকের ১৬/১৭ বছরের মেয়ে পাখি যেন থমকে যায় বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ানো অশুভ সংকেতের মতো দাঁড়ানো আলতাফের উপস্থিতিতে। কেমন যেন মাথার উপর খোলা আকাশে ডানা শক্ত করে উড়তে থাকা শকুনের মতো চোখ দু’টো লোকটার। বুকের ভেতর এক অজানা আতঙ্কে ঢিপ ঢিপ করে উঠে পাখির। কী ছিনিয়ে নিতে এসেছে লোকটা এই বাড়িতে?

মানিকের বাড়ি হতে ফিরে আসবার পর থেকেই আলতাফকে যেন কেমন এক বিষন্নতায় পেয়ে বসে। নতুন করে আবার পড়তে ইচ্ছে হয় রঙিন কাপড়... যেতে ইচ্ছে করে সিনেমা ঘরে... আজকাল গদিতে লোকজন জড়ো করে অকারণ সরের কথা বলতেও বেশ ফুরফুরে লাগে আলতাফের। চোখের সামনে শুধু মাইনকার মেয়ের চোখ দুটো ভাসতে থাকে। অমন করে তাকিয়ে কী দেখতে চেয়েছিল মেয়েটা আলতাফের চোখের ভেতর? কত রকম চিন্তা এসে ভিড় করে আলতাফের মাথার মধ্যে। কত বড় সংসার... কতো কতো মানুষ... মেয়ে দুইটা এখনও ছোট... বউটা কেমন অবিবেচক এর মতো ফট করে মরে গেল। এতসব দেখা কি আর আলতাফের বয়সী একটা পুরুষ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়? আজকাল ঘটকটাও খুব ঘন ঘন দেখা করছে। সবকিছু মিলিয়েই একদিন ফট করে আলতাফ বলে বসে বিয়ে করতে চায় মাইনকার বেটিকে। ঘটক প্রস্তাব নিয়ে যেতেই মানিকের বউটা বিছানা নেয়। মানিক পাগলের মতো হাউমাউ করে কাঁদে। শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন জায়গা থেকে চাপ প্রয়োগ। উপায় থাকে না মানিকেত সামনে। বেঁচে থাকবার জন্য অথবা পাখিকে বাঁচিয়ে রাখবার জন্য রাজি হয়ে যায় আলতাফের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবে।

অতঃপর আলতাফের সাথে বিয়ে দিয়ে মানিক যেন আপস কর নেয় তার দারিদ্রের সাথে। আর পাখি? কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই আকাশ কালো করে রাত ঘন হয়ে আসে তার। এতদিন মাটির পুতুল নিয়ে আম বাগানে বসে হাড়ি আতিল দিয়ে সংসার সংসার খেলা আর আলতাফ সাহেবের সংসারের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক সেটা বুঝতে বড় কষ্ট হয় পাখির। অথবা না বুঝেই শুরু করতে হয় জীবনের এই নতুন খেলা। তার চেয়েও ভয়ংকর এক খেলা শুরু হয় রাতের অন্ধকার নামতেই। ভয়ে জমাট হয়ে থাকে পাখি। রাতের অন্ধকার দেখলে তার মনে হয় কবরের নিচেও বুঝি এমন কালো অন্ধকার থাকে সব। এভাবেই চলতে থাকে দিনের পর দিন। কতো আর কাঁদতে পারে মানুষ? তাও পাখির মতো এক কিশোরী!!

আলতাফের ছোট মেয়েটা প্রায় পাখির বয়সী, একটু বড় হবে। কখনো সখনো হয়তো ভুল করে খেলায় মেতে উঠে পাখি। আবার কখনও কখনও বাড়িতে থাকা লজিংমাস্টারের কাছ থেকে গল্পের বই নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে কিশোরী পাখি। সেই অপরাধে মার খেয়েছে কতবার আলতাফের কাছে। বাড়ির বউ সে। মেয়ে তো নয় যে সমস্ত অধিকার থাকতে হবে। পাখি বুঝতে পারে বিয়ে করা মানে হচ্ছে তার সমস্ত অধিকার ট্রাঙ্গকে করে তুলে আসতে হয় বাবার বাড়িতে। দিনে দিনে অভ্যস্ত হতে শুরু করে পাখি। সবকিছুই মেনে নেয়া এখন যেন তার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন সবাই তাকে বুঝিয়েছিল মেয়ে হলে তো একদিন তাকে মা হতেই হবে। আর সেই মা হবার যুদ্ধে যখন পাখি মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিল তখন আর সবাই নতুন সন্তানের আনন্দে মেতে উঠেছে। পাখি শুধু তাকিয়ে থাকতে শিখেছে। এমনকি এখন তার চোখের পানিও শুকিয়ে এসেছে। কে বলবে পাখিকে দেখে যে, ওর বয়স এখনও ১৮ পেরোয়নি।

আলতাফের নতুন সংবাদের সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি সংবাদ ঢুকে পড়ে। আজ রাতেই নাকি লজিং মাস্টার মন্নাফ এই বাড়ির ছোট মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। আলতাফের কানে কথাটা পৌঁছানো মাত্র ভয়ংকর এক মূর্তি ধারণ করে সে। আটক করা হয় মন্নাফকে। চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। আর সিদ্ধান্ত হয় আজ রাতের মধ্যেই... কেউ জানা জানি হবার আগেই আলতাফের ছোট মেয়েকে বিয়ে দেবার বন্দোবস্ত করা হবে। আলতাফের বৈঠকখানায় যখন সবাই মিলে বসে পাত্র খোঁজার কাজে ব্যস্ত তখনই আবার বাইরে থেকে খবর আসে বাড়ির কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আলতাফের মেয়েকে। হুংকার দিয়ে ছুটে এসে সবাই দেখে মন্নাফ আধমরা হয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। প্রশন তবে কার সাথে পালিয়ে গেলো ঈটুকুন মেয়ে? শুরু হয় আবার নতুন করে খোঁজ। সারারাত ধরে পুরো গ্রাম তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়ায় সবাই। কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না আলতাফের মেয়েকে। ভোর বেলা মেয়ে হারানোর শোকে বিষন্ন আলতাফের সামনে এসে দাঁড়ায় পাখি। সে জানে কোথায় আছে আলতাফের ছোট মেয়ে।

(ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/এসএস/জেবি)