সিজারে কুকুরের সাত বাচ্চা প্রসব

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:৫৪

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

রাজশাহীতে একটি কুকুরের সিজারিয়ান অস্ত্রপচার করা হয়েছে। এতে জন্ম নিয়েছে সাতটি বাচ্চা। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর নারিকেলবাড়িয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগের ভেটেরিনারি ক্লিনিক অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে এই অস্ত্রপচার করা হয়।

ক্লিনিকের ডেপুটি ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ এই অস্ত্রপচার করেন। তাকে সহযোগিতা করেন ক্লিনিক্যাল অ্যাটেন্ডেন্স জিয়াউর রহমান ও রাবির ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগের পিএইচডি ফেলো ড. ইসমাইল হক।

ডা. আরিফ বলেছেন, এ ধরনের অস্ত্রপচার রাজশাহীতে প্রথম। এর আগে দেশের কোথাও এমন অস্ত্রপচার হয়েছে কিনা তা তার জানা নেই। তবে এটি অবশ্যই একটি বিরল অস্ত্রপচার। এই অস্ত্রপচারে তারা সফল হয়েছেন। বাচ্চাদের নিয়ে কুকুরটি এখন ভালোই আছে।

মা কুকুরটির নাম ‘লিলি’। এটি একটি ক্রস জাতের কুকুর। লিলি বগুড়া জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমানের পোষ্য। আতিকুর রহমান এবারের পর তিনি কুকুরটির আর বাচ্চা চান না। তাই গর্ভবতী অবস্থায় তিনি কুকুরটিকে রাবির ভেটেরিনারি ক্লিনিক অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে নিয়ে যান। পরে সেখানে লিলির সিজারিয়ান অস্ত্রপচার করা হয়। একইসঙ্গে তার বাচ্চা বন্ধ্যাকরণও করে দেয়া হয়।

ডা. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ জানান, আমরা গর্ভবতী কুকুরটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাই। এরপর প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে তার সিজারিয়ান অস্ত্রপচার করা হয়। দুই ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফেরে। ১০ দিন আগেই সিজার করায় বাচ্চাগুলো একটু দুর্বল ছিল। তাই তাদের ৭২ ঘণ্টা আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। এখন বাচ্চাগুলো সুস্থ। প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, দেশে এর আগে বিড়াল, গরু ও ভেড়া-ছাগলের সিজারিয়ান অস্ত্রপচার হয়েছে। কিন্তু কুকুরের অস্ত্রপচার এর আগে হয়েছে কিনা তার জানা নেই। তিনি ধারণা করছেন, এটি দেশে প্রথম কুকুরের সিজারিয়ান অস্ত্রপচার। বিদেশি কুকুরের বীজ দিয়ে দেশি কুকুরকে গর্ভধারণ করানোর পর এভাবে সিজারিয়ান অস্ত্রপচারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করানো হলে দেশে উন্নত কুকুরের সম্প্রসারণ ঘটবে। সেইসঙ্গে জন্ম নেয়ার পর কুকুরের বাচ্চারা যেসব রোগে আক্রান্ত হয়, সেগুলোও হবে না।

ডা. আরিফ বলেন, কুকুরটির অস্ত্রপচারের জন্য খরচ ২০ হাজার টাকা। তবে যেহেতু এটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি ট্রেনিং সেন্টার, তাই আমরা কোনো টাকা নেইনি। কুকুরটির মালিক এখন শুধু নিয়মিত এসে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। আর ১০ দিন পর বাচ্চাসহ মা কুকুরটিকে মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

কুকুরটির মালিক আতিকুর রহমান বলেন, দুই বছর আগে মেয়ের আবদারে তিনি লিলিকে বাসায় নিয়ে যান। কুকুরটি তাদের খুব আদরের। বাচ্চা প্রসব করার পর বাইরের পরিবেশে গিয়ে সে হারিয়ে যাক, এটা তারা চাননি। তাছাড়া এরপর লিলি আর গর্ভধারণ করুক এটিও তারা চাইছিলেন না। এ জন্য তিনি লিলির সিজারিয়ান অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নেন। অস্ত্রপচার সফল হওয়ায় তিনি খুব খুশি। এখন বাচ্চাদের নিয়ে লিলিকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন।

(ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/আরআর/এলএ)