‘পছন্দের ক্ষমতা জনগণের থাকলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:০২

গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এমন বাংলাদেশের স্বপ্নে লাখো মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ হয়েছে। এই চেতনা ধারণ করে পছন্দের ক্ষমতা জনগণের কাছে থাকলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও দেশে সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী কাঠামো দাঁড় করানো গেল না।

বুধবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই-এর নিয়মিত টকশো ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাতে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দায় সরকারের ওপর বর্তায়।

হুমায়ুন কবির বলেন, ‘৪৭ বছর আমরা একটা স্বাধীন দেশ। এখন পর্যন্ত আমরা সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনী কাঠামো আমরা দাঁড় করাতে পারিনি। এটা কিন্তু আমাদের জন্য খুব ভালো কথা না।

‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মানুষ যে আত্মত্যাগ করেছে এই আত্মত্যাগের অন্যতম লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এমন একটা বাংলাদেশ। সেখানে আমরা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে পারব, সব মানুষের অধিকার সংরক্ষিত হবে। এই চেতনাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দিকে নিয়ে গেছে। সেই চেতনা যদি আমরা ধারণ করি, জনগণ যারা রাষ্ট্রের মালিক, তাদের পছন্দের ক্ষমতা যদি তাদের কাছে থাকে, তাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে।’

জাতীয় নির্বাচনের আগে বড় দলের অবস্থান

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির অবস্থান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এ সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘নির্বাচন যতটা এগিয়ে আসবে, আমার ধারণা নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন দলের অবস্থাটা পরিষ্কার হতে থাকবে। সেটার একটা অংশ আমরা দেখলাম, বিএনপির প্রতীকী অনশনে। সেখানে অনশনটা যতটা না উদ্দেশ্য, লোকসমাগমের বিষয়টা আমার কাছে বড় মনে হয়েছে। একটা বড় আয়োজন তারা করেছে।’

নির্বাচনী ভাবনা আছে সরকারি দলের মধ্যেও। নির্বাচনের আগে তারাও তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট রাখছে। সরকারের দিক থেকে সরকার যেটা বলছে, নির্বাচন হলে নির্বাচন কমিশনকে তারা সহায়তা দেবে।‘

খালেদাকে ঘিরে বিএনপির উত্তেজনা

বেগম জিয়ার বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে আমাদের বাইরে থেকে খুব একটা কিছু বলার সুযোগ নেই।‘

তবে খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু বিষয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এখন যে জায়গাটায় একটু উত্তেজনা বাড়ছে সেটা হলো, বেগম জিয়া নির্বাচনে থাকতে পারবেন কি না। নির্বাচনের আগে তিনি মুক্তি পাবেন কি না। বিএনপির দিক থেকে তারা একবার বলছে বেগম জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার মুক্তি অর্জন করা যাবে কি না সেটা একটা অনিশ্চিত জাগয়া। তারা নির্বাচনে এলে নির্বাচনের অবস্থা কী দাঁড়াবে।

নির্বাচন ব্যবস্থাকে সহায়ক করতে হবে। সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেয়া সরকারের দায় উল্লেখ করে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হতে গেলে সবার অংশগ্রহণটা প্রয়োজন। একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে জনগণ তাদের দিক থেকে নিজের পছন্দে রায় দিতে পারবে। যাদের তারা সমর্থন করে, তাদের পক্ষে তারা ভোট দেবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা বাংলাদেশে যদি সংহত করতে হয় তাহলে এই ব্যবস্থাটাও চালু রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব সহায়ক করা যায়, যেন সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে। সেদিক থেকে সরকারেরও একটা দায় আছে বলে আমি মনে করি।’

কোটা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ও সমাধান

কয়েক সপ্তাহ নীরব থাকার পর বুধবার আবার কর্মসূচি দিয়েছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের একাংশ এখনো কারাগারে। কেউ পলাতক।

কোটা সংকটের আশু সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করেন এই প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা দেখলাম কোর্ট থেকে একটা সিদ্ধান্ত চায়। সেটা চাইতে পারে। এটাকে বাদ দিয়ে বাকি বিষয়গুলো নিয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।

‘ছাত্রদের মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করছে, সেটা আমরা সেখতে পাচ্ছি। ছাত্ররা যখন আবার রাস্তায় নামতে চাচ্ছে, তখন আমার মনে হয়, বিষয়টা দ্রুত সুরাহা করতে পারলে এই সমস্যাটা সামনের দিকে আর জটিল হবে না।’

সরকার নিজেদের উদ্যোগের সঙ্গে কিছুটা সমন্বয় করলেই জটিলতা কেটে যাবে বলেও মনে করেন এই কূটনীতিক। বলেন, ‘ছাত্রদের চাহিদা কী সেটা সরকার জানে। সরকারও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সে উদ্যোগটা সমন্বয় করে জিনিসটাকে (কোটা জটিলতা) শেষ করে দেয়া সম্ভব। এই বিষয়টা জরুরি হিসেবে নিয়ে সরকারি উদ্যোগ যদি সমস্যা সমাধানের একটা ধাপ হয়, তাহলে আমার মনে হয় সম্ভাব্য জটিলতা থাকছে না।’

(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/কারই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :