ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল: সরকারকে দূরদর্শী হওয়ার পরামর্শ

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের ওপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করায় হতাশা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিলটি আইন হিসেবে পাস হলে তা সংবিধানের মূলচেতনার বিরোধী হবে আশঙ্কা করে টিআইবি সরকারকে বিলটি আইনে পরিণত করার ক্ষেত্রে দূরদর্শী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে আজ বৃহস্প‌তিবার এক বিবৃতিতে এ পরামর্শ দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অংশীজনদের মতামত অগ্রাহ্য করে গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা হরণের ঝুঁকিপূর্ণ ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-এর বিতর্কিত ধারাগুলো অপরিবর্তিত রেখে সংসদীয় কমিটি কর্তৃক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একদিকে প্রস্তাবিত বিলের ৮, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারাগুলোর ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্বেগ ও মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে, যা তাদের স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে বিতর্কিত ৩২ ধারার ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ অনুসরণের সুপারিশ করার দৃষ্টান্ত অত্যন্ত হতাশা ও দুঃখজনক।’

প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারার অপপ্রয়োগের ফলে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তথ্য জানার আইনি অধিকার ব্যাপকভাবে রুদ্ধ হবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, ‘এর ফলে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং যেকোনো ধরনের গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।’

বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলটি আইনে রূপান্তরিত হলে তা সংবিধানের মূল চেতনা বিশেষ করে মুক্তচিন্তা, বাক-স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের পথ ব্যাপকভাবে রুদ্ধ হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা বোধ সৃষ্টি করবে।

একে আত্মঘাতী হিসেবে অভিহিত করে বিবৃতিতে সরকার বিশেষ করে জাতীয় সংসদ বিষয়টি নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে আরও আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে টিআইবি আশা করে।

টিআইবি মনে করে, সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে প্রস্তাবিত আইনটি সে ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনে সরকারের পাশাপাশি জনগণ, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকাও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।

গণমাধ্যমসহ সব নাগরিক যাতে সব ধরনের ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন ও বাধাহীন মতামত প্রকাশ করতে পারে তার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলটি আইনে পরিণত করার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও দূরদর্শী হতে পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি।

(ঢাকাটাইমস/১৩‌সে‌প্টেম্বর/এমএবি/মোআ)