হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:৪৮

চার বছর সংস্কার কাজের পর ইন্টারকন্টিনেন্টালে নামে উদ্বোধন হলো রাজধানীর পাঁচ তারকা মানের হোটেল রূপসী বাংলা।

বৃহস্পতিবার রাতে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।

গ্র্যান্ড বলরুমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা ইন্টারকন্টিনেন্টাল কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “খুব ভালো লাগলো ইন্টারকন্টিনেন্টাল আবার ফিরে এসেছে।”

‍হোটেলটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ইন্টারকন্টিন্যান্টাল নামেই ছিল। তাদের সঙ্গে চুক্তি শেষে শেরাটন কর্তৃপক্ষ এটি চালায়। এরপর বাংলাদেশ সরকার রূপসী বাংলা নামে হোটেলটি চালাতে থাকে। এখন আবার ইন্টারকন্টিন্যান্টাল কর্তৃপক্ষ এটি চালানোর দায়িত্ব পেয়েছে। তারা সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নামেই ফিরে এসেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

যুদ্ধের সময়ে এ হোটেলে বিদেশি সাংবাদিকরা অবস্থান করতেন। সেসব স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে উন্নতি করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দারিদ্র হ্রাস করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি, জাতির পিতা যুদ্ধের পর একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে রেখে গিয়েছিলেন। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে উল্লেখ করে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হোটেলটি নবরূপে শুরু হচ্ছে।

বলেন, এই ইন্টারকন্টিন্যান্টাল নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি। বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল শাহবাগ হোটেল। ১৯৬৬ সালে হোটেল ইন্টারকন্টিন্যান্টাল তৈরি হয়। ১৯৭১ সালে যখন সত্তরের নির্বাচনে সারা পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে, কিন্তু পাকিস্তানের শাসকরা তখন নির্বাচনের ফল অস্বীকার করে, আওয়ামী লীগকে কোনো মতেই ক্ষমতা দেবে না। সেসময় আওয়ামী লীগ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। সে সময় এই হোটেলটি ছিল বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র ভালো হোটেল। সারাবিশ্বের নানান সাংবাদিকরা এখানে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন।

সে সময় ভুট্টো আলোচনার জন্য এখানে এসেছিলেন, ইয়াহইয়া খানও এসেছিলেন। আলোচনা ব্যর্থ হয়। ইয়াহখান ফিরে চলে যান এবং নির্দেশ দিয়ে যান আক্রমণের। ২৫ মার্চ রাত্রে পাকিস্তানি হানাদাররা আক্রমণ করে। রাজারবাগে প্রথম আক্রমণ করে। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইপিআর ফাঁড়ি এবং ৩২ নম্বরেও আক্রমণ করে। আর এই হোটেলে অবস্থানরত সমস্ত সাংবাদিকদের বন্দি করা হয়। কোনো সাংবাদিককে বের হতে দেয়া হয় না। সায়মন রিং তখন অল্প বয়সী সাংবাদিক। সে কোনোমতে লুকিয়ে হোটেলের কিচেনে চলে যায়। হোটেলের কর্মচারীরা তাকে লুকিয়ে রাখে। পরে সে হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়। সেই ছিল প্রথম সাংবাদিক যে কিনা রাজপথে পাকিস্তানিদের হত্যা, অগ্নি সংযোগের ছবি পাঠিয়ে দেয়। গণহত্যার বার্তাটা পৌঁছে দেয়। কাজেই এ হোটেলের সঙ্গে আমাদের স্মৃতি জড়িত।

যখন যুদ্ধ শুরু হলো, তখনে এখানে গেরিলারা দুইবার আক্রমণ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই গেরিলা আক্রমণে ছিল নারী ছিল। কায়সার রশিদ চৌধুরীর মেয়ে জিনাত। সে একটা বড় ভূমিকা পালন করে। হোটেলের ভেতরে ছোট একটা বোমা ফাটানো হয়। প্রথম বোমাটা ফোটে এখানে। পরে গেরিলারা আরেকবার আক্রমণ করে। ইন্টারকন্টিন্যান্টাল বেশ কিছুদিন চলে। পরে তাদের চুক্তি শেষ হলে তারা চলো যায়। শেরাটন কোম্পানি আসে।

এ সময় হোটেলটি ঘুরে দেখেছেন জানিয়ে এর সাজ সজ্জার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বাংলাদেশে এখন বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। বিদেশিদের আনাগোনাও বাড়ছে। কাজেই আমাদের উন্নত মানের হোটেলের প্রয়োজন। সে দিক থেকে আমি মনে করি এই হোটেলটি সময়োচিতভাবে তৈরি হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যের দিক থেকেও হোটেলটি কাজ করতে পারবে। এর অবস্থান খুব সুন্দর জায়গায়। আমি মনে করি দেশি বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে। আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক। ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ২০২১ সালে সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দেশ।

২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন হতে হবে তার পরিকল্পনা ও কর্মসূচিও আমরা প্রণয়ন করেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। পরে প্রধানমন্ত্রী হোটেলের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

ইন্টারকন্টিনেন্টালকে সাজানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

রূপসী বাংলা হোটেলে ২৭২টি কক্ষ থাকলেও সংস্কারের পর ইন্টারকন্টিনেন্টালে কক্ষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৬টি। তবে কক্ষের আয়তন বাড়ানো হয়েছে।

২২৬টি কক্ষের মধ্যে ৪০ বর্গমিটার আয়তনের ২০১টি ডিলাক্স, প্রিমিয়াম ও এক্সিকিউটিভ কক্ষ, ৬০ বর্গমিটার আয়তনের পাঁচটি সুপিরিয়র স্যুইট, একই আয়তনের ১০টি ডিলাক্স স্যুইট, ৭৫ বর্গমিটার আয়তনের পাঁচটি ডিপ্লোমেটিক স্যুইট এবং ১৫০ বর্গমিটার আয়তনের পাঁচটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল দুটি বলরুম ও সাতটি সভাকক্ষ ২১ হাজার বর্গফুটের। প্রধান বলরুমটির নাম রাখা হয়েছে রূপসী বাংলা।

সুইমিং পুল ও ডাইনিং হলের জায়গা পরিবর্তন করা হয়েছে। বড় করা হয়েছে বলরুমের আকার। এছাড়া হোটেলের মূল ফটকও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আধুনিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত সুইমিং পুল ছাড়াও জিমনেসিয়াম, স্পাসহ নানা সুবিধা থাকছে ইন্টারকন্টিনেন্টালে।

হোটেলটির সংস্কার কাজে ৬২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের বিচার

এক হাতে ইফতারের পানির বোতল, আরেক হাতে যান চলাচলের ইশারা ডিসির

এলিফ্যান্ট রোডে বাসা থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ঢাকাস্থ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

অসুস্থতার যন্ত্রণা সইতে না পেরে ছুরিকাঘাতে রিকশাচালকের আত্মহত্যা

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’

বুধবার থেকে এক ঘণ্টা বাড়ছে মেট্রোরেল চলাচলের সময়

ঈদকে সামনে রেখে ডিবি-সাংবাদিক পরিচয়ে অপহরণের ফাঁদ

ভবিষ্যৎ নগর উন্নয়নে জাইকা ও ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সঙ্গে রাজউকের সভা

২৭ মার্চ থেকে রাত ৯টার পরও চলবে মেট্রোরেল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :