তেঁতুলিয়ায় হাতের কাছেই হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:০২ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:০৬

এস কে দোয়েল, দিনাজপুর

পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে উত্তরের পর্যটন কন্যা তেঁতুলিয়াকে। শরত-হেমন্ত আর শীত ঋতুতে উত্তরের পরিষ্কার আকাশে দৃশ্যমান হয়ে উঠে আকাশছোঁয়া হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। সীমান্তবর্তী জনপদ হওয়ায় তীরঘেষা মহানন্দা নদীর তীরে একমাত্র পর্যটন স্পট জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ও পিকনিক কর্নার। এখানে অতি কাছ হতে নয়ন জুড়িয়ে উপভোগ করা যায় হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও দার্জিলিংয়ের রূপোচ্ছবি। তাছাড়া তিন দিক বেষ্টিত ভারতের ত্রিকোলে অবস্থিত ছোট্ট উপজেলার সীমান্তজুড়ে রয়েছে রূপের পসরা। পর্যটকদের আরো বেশি আকৃষ্ট করতে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে পর্যটনখ্যাত জনপদটিকে।

চিত্ত-বিনোদনের অন্যতম পর্যটন স্পট এখন তেঁতুলিয়া। মানচিত্রের সবার উপরে থাকায় একনামে চিনে সীমান্তবেষ্টিত পর্যটন খ্যাত এ জায়গাটি। প্রতিবছর টেকনাফের সাগর দেখতে অগণিত দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুরা পাড়ি জমান। তেমনি উত্তরে আকাশ চুম্বী হিমালয়, মেঘকন্যা কাঞ্চনজঙা আর দার্জিলিংয়ের অপরূপ সৌন্দর্য শোভা উপভোগ করতে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করেন ভারত ও নেপালে। সেই আকাশচুম্বী পর্বতশৃঙ্গ হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর দার্জিলিংকে কাছ থেকে দেখা মেলে তেঁতুলিয়ায় এলেই। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এ বছর নতুন রূপে ঢেলে সাজানো হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে পিকনিক কর্নার জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। এখান হতেই হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুবিধা দিতে নির্মাণ করা হয়েছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। এ ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে কাঙ্ক্ষিত আকাশচুম্বী হিমালয় পর্বত, মেঘকন্যা কাঞ্চনজঙ্ঘা, দার্জিলিং এবং নদীর ওপারে ভারতের বিস্তৃত সবুজ চা বাগানসহ নানান দৃশ্য।

এছাড়া পিকনিক স্পট ডাকবাংলোতে বিভিন্ন ভাস্কর্য স্থাপনের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। কৃত্রিম ভাস্কর্য ও পশুপ্রাণি স্থাপনসহ শিশুদের খেলনা স্থাপন করে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ডাইনিং রূমও। আর পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে নানান দৃষ্টি আকর্ষিত ভাস্কর্য। এসব ভাস্কর্যের মধ্যে মাঝিপাড়া বাইপাসে সারস পাখি, কালান্দিগঞ্জ বাজারে বাংলাদেশের প্রথম ১ টাকা নোট, ভজনপুরে শাপলা এবং তিরনই হাটে মাছসহ নানান ইতিহাস নির্ভর ভাস্কর্য।

উত্তরে বাংলাদেশের শেষ সীমানা বাংলাবান্ধায় জিরোপয়েন্ট। এখানে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর। ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে প্রবেশ করা যায় ভারত, নেপাল, ভূটান ও চীনে। পাসপোর্ট ভিসা থাকলে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায় ভারতের শিলিগুঁড়ি, দার্জিলিংসহ নানান দর্শনীয় স্থান এবং নেয়া যায় উন্নত চিকিৎসা সেবা।

হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছ হতে দর্শনের পর মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। ডাকবাংলোর তীরে বসেই ঝিরিঝিরি শীতল হাওয়ায় চোখে পড়বে সন্ধ্যার উত্তরের আকাশের আরেক সৌন্দর্য। দার্জিলিং চুড়ার ঢালু বেয়ে গাড়ি চলাচল। ঢালু পাহাড়ের পথ জুড়ে রঙিন ল্যাম্পস্টের আলো। নদী মহানন্দার তীর ঘেষা ভারতের কাটাতারের বেড়ার সাথে সারিসারি সার্চলাইটের আলো। সে আলোয় ১৫ কিলোমিটারজুড়ে মহানন্দাকে মনে হবে গড়ে উঠা কোন এক আধুনিক শহর। নেমে আসা সন্ধ্যার সূর্যাস্ত মনে হবে সাগরকন্যা কুয়াকাটার সূর্যাস্তের অবিকল নান্দনিক রূপ। মধ্য দুপুরের মাথার উপর সূর্যের কিরণে হীরের মতো জ্বলজ্বল করে হাসতে দেখা যাবে মহানন্দার চরের একেকটি বালিকণা। মন ছুটে যাবে বালুচরে হাটতে। পায়ের নিচে বালির ঝিরঝির শিহরণে আরেক অনুভূতিতে মোহিত করবে হিমালয়ের এই রাজলক্ষী মহানন্দা।

দৃষ্টি কাড়বে সবুজ চা বাগান। দেশের তৃতীয় সবুজ চা অঞ্চল এখন তেঁতুলিয়া। তিনদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে প্রতিবেশী ভারত। সীমান্তজুড়ে ভারতীয় সবুজ চা-বাগান, কাটাতারের বেড়া, সার্চলাইট, সুউচ্চ টাওয়ার আর কর্মরত চা শ্রমিকদের পাতা কাটার দৃশ্যও মুগ্ধ করবে যে কাউকে। মুগ্ধ করবে ভারতের দার্জিলিংয়ের ২০৬০ মিটার উঁচু মহালিদ্রাম পাহাড় হতে প্রবাহিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বয়ে আসা নদী মহানন্দায় হাজার হাজার শ্রমিকদের পাথর উত্তোলনের দৃশ্য। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের চিহ্ন হিসেবে এ অঞ্চল যুদ্ধের সময় ছিল সম্পূর্ণ নিরাপদ। কোন পাক বাহিনী এ অঞ্চলে প্রবেশ করতে না পারায় একাত্তরের মুক্তাঞ্চল হিসেবে খ্যাত স্বপ্নের মতো সুন্দর এ সীমান্ত জনপদটি। এছাড়াও পর্যটকদের ঘুরে দেখার মতো রয়েছে গ্রিন টি গার্ডেন, দর্জিপাড়া কমলা ও চা বাগান, আনন্দধারা, টি ফ্যাক্টরি, মিনা বাজার, সমতল ভূমিতে পাথর কোয়ারি এবং ভিতরগড়ের ঐতিহাসিক প্রত্মতত্ননগরী ও মহারাজা দিঘী।

পর্যটকদের জন্য রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভ্রমণ পিপাসুরা যাতে নির্ভিঘ্নে পর্যটন স্পটের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন সে বিষয়ে নিরাপত্তা জোরদার করে রেখেছে মডেল থানার পুলিশ। পর্যটকদের মনে করা হয় এ অঞ্চলের স্বাগত অতিথি। তাই পর্যটকদের কোন প্রকার সমস্যা না হয় সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সদা তৎপর রয়েছেন। সর্বোপরী সীমান্ত জনপদের নির্ভেজাল প্রকৃতির বিশুদ্ধ বাতাস যেমন শরীর-মন জুড়িয়ে যাবে, তেমনি এখানকার সুস্বাদু পানি, খাবারও তৃপ্তি এনে দেবে পর্যটকদের।

কিভাবে আসবেন: বাংলাদেশের যেকোন স্থান হতেই আসতে পারবেন। ঢাকা গাবতলী কিংবা আব্দুল্লাহপুর হতে তেঁতুলিয়ায় আসার সরাসরি বাস রয়েছে। হানিফ, শ্যামলী। অথবা পঞ্চগড় পর্যন্ত যেকোন  ডে/নাইট কোচে আসতে পারবেন। ভাড়া পড়বে নন এসি ৬০০-৭০০ টাকা, এসি ১২০০-১৩০০ টাকা। সময় লাগবে ১১/১২ ঘণ্টা।

কোথায় থাকবেন ও কি খাবেন: তেঁতুলিয়ায় এখন বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। খাবার বেশ সস্তা। ঘরোয়া খাবার খেতে চাইলে বাংলা হোটেল রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন প্রদের সবজি, ভর্তাসহ পছন্দনীয় খাবারই মিলবে।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)