বাস ভর্তি যাত্রী তবু ভাড়া ‘সিটিং’য়ের

মোসাদ্দেক বশির ও সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:১৩
ফাইল ছবি

রাজধানীতে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য চরমে উঠেছে। বাস ভর্তি করে দাঁড়ানো যাত্রী নিয়েও সিটিং সার্ভিসের নামে আদায় করা হচ্ছে দু-তিন গুণ বেশি ভাড়া।

গাড়িতে উঠে কাছাকাছি কোনো স্টপেজে নামলেও যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাসমালিকের স্বনির্ধারিত দূরবর্তী স্টপেজের ভাড়া। সিটিং বলে হেঁকে যাত্রী নেয়া হচ্ছে দাঁড় করিয়ে। কিন্তু ভাড়া সিটিংয়ের। এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের সঙ্গে বাড়বিতণ্ডা হচ্ছে কন্ডাক্টর ও চালকদের।

কিন্তু রাজধানী জুড়ে গণপরিবহণে ভাড়া নৈরাজ্য চললেও এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সড়ক পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর। লাইসেন্স, ফিটনেস পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হলেও বাড়তি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটির অভিযানের কথা শোনা যায়নি খুব একটা।

রাজধানীতে বড় বাসে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা, ছোট বাসে ৫ টাকা। কিন্তু এই বিধান মানা হচ্ছে না কোনো বাসে। কোনো কোনো পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ থেকে ৪০ টাকা।

বাসের চালক-কাণ্ডাক্টরদের ভাষ্য, মালিকের নির্ধারণ করা ভাদা নেন তারা। ওয়েবিলের হিসাবে মালিককে টাকা দিতে হয় তাদের। আর দাঁড়ানো যাত্রীরা জোর করে বাসে ওঠেন।

মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বাসে নির্দিষ্টসংখ্যক আসন বরাদ্দ রাখার যে বিধান বেশ কয়েক বছর ধরে মান্য করা হচ্ছিল, সেটিও বাসমালিকরা বন্ধ করে দিয়েছে সিটিং সার্ভিসের নামে।

কিন্তু এখন ‘সিটিং সার্ভিস’ সেবা না দিয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার কারণে মহিলা ও প্রতিবন্ধীরা পড়ছে ভোগান্তিতে। সিটিংয়ের ডাক শুনে বাসে উঠে দেখেন আসন নেই। উপরন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে দাঁড়ানো যাত্রীতে বাস ভরে যায়। ফলে নারী বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী মেয়েরা হয়রানির শিকার হয় বেশি।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা অভিযোগে গত বছর এপ্রিলে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করার পর থেকে নানা কৌশলে দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন শুরু করে বাসগুলো। কিন্তু ভাড়া আদায় করা হয় সিটিং সার্ভিসের।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর ঢাকা ও আশপাশের পাঁচ জেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। কিছুদিন পর তেলের দামও কমে। কিন্তু নানা কায়দায় বাড়ানো হয় ভাড়া।

সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে গাবতলী (১০ কিলোমিটার দূরত্ব) ছোট বাসের ভাড়া হওয়ার কথা ১৫ টাকা। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ২৫ টাকা। মগবাজার থেকে থেকে খিলক্ষেতের দূরত্ব সাড়ে ১০ কিলোমিটার। প্রথম দিকে ভাড়া নেয়া হতো ১২ থেকে ১৫ টাকা। বছর খানেক ধরে ভাড়া নিচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা।

গুলিস্তান থেকে নবীনগর চলাচল করে ওয়েলকাম পরিবহন। শুরুতে গুলিস্তান থেকে খামারবাড়ি পর্যন্ত ১০ টাকা ভাড়ার বিধান করলেও বর্তমানে সেটা বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহনটি। এখন কোনো যাত্রী গুলিস্তান থেকে উঠে যেখানেই নামুক তাকে গাবতলী পর্যন্ত ২৫ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে।

খিলক্ষেতের বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সিটিং বাসে সিটিং নাই। দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া হয়। কিন্তু ভাড়া নেয়া হয় সিটিংয়ের। এ নিয়ে প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাক্টরের বাকবিতণ্ডা হয়।’

লিয়াকত বলেন, ‘খিলক্ষেত থেকে মগবাজার পর্যন্ত বলাকা বাস নেয় ২০ টাকা। একই দূরত্বে শতাব্দী নেয় ৪০ টাকা, প্রভাতী-বনশ্রী ও গাজীপুর পরিবহন নেয় ৩০ টাকা। এক এক পরিবহন তাদের ইচ্ছামতো ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করে নিয়েছে। যাত্রা শুরুর জায়গা থেকে শেষ স্টপেজ পর্যন্ত একটি বাস ৫-৭ বার সিট বিক্রি করে। আর এর মধ্য দিয়ে প্রতিটি সিট থেকে আয় করছে কয়েক গুণ ভাড়া।

আবু সালেহ যাত্রাবাড়ির শনির আখড়ায় থাকেন। তার অফিস ইস্কাটনে। তিনি বলেন, নামে সিটিং হলেও প্রতিটি বাস ভরে যাত্রী তোলা হয়। বাসের পেছন বা মাঝখান থেকে নামতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হয় যাত্রীদের। বিশেষ করে মহিলাদের কষ্টের সীমা থাকে না। অথচ তারা ভাড়া মিটিয়েছেন সিটিংয়ের।

সদরঘাটের বোরহান উদ্দীন বলেন, সদরঘাট-চিড়িয়াখানা রুটের তানজিল পরিবহণে সদরঘাট থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত ভাড়া ৫ টাকা। কিন্তু গত বুধবার থেকে কন্ডাক্টররা যাত্রীদের বলছে যারা পল্টন নামবেন তাদের ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে লাব্বাইক পরিবহনের কন্ডাক্টর কালাম বলেন, ‘আমাদের সিটিং সার্ভিস। কতজন যাত্রী আছে সেটা চেকিং করে ওয়েবিলে লিখে দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী মালিককে আমাদের টাকা দিতে হয়।’

দাঁড়ানো যাত্রী বহন করার বিষয়ে তিনি বলেন, গাড়ির সংখ্যা কম। যাত্রীরাই জোর করে গাড়িতে ওঠে। আবার অনেক সময় যাত্রীরা নেমে গেলে দাঁড়ানো যাত্রীরা বসে পড়ে।

ভাড়া নৈরাজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক দক্ষিণের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ ঢাকাটাইমসকে জানান এই নৈরাজ্য কীভাবে কমানো যায় তা তারা দেখছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বিষয়টি নিয়ে আমরা বসেছিলাম পরিবহন মালিক-শ্রমিক, রাজউকসহ সব অংশীজনের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে। তখন বলা হয়েছিল ঢাকা শহরের সব গাড়ি থাকবে স্টপেজগামী।’

ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সার্ভে করে ১২১টি ইন্টারসেকশনে বাস স্টপেজ করা হয়েছে জানিয়ে মফিজ উদ্দিন বলেন, সেই বাসস্টপেজের শুরু ও শেষ কোথায় তার সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় সিটি করপোরেশন যাত্রী ছাউনি করে দিয়েছে, বাকিগুলো করা হবে।’

যুগ্ম কমিশনার বলেন, সব বাস কাউন্টারভিত্তিক হবে। সেখানে টিকিট কাউন্টার থাকবে। টিকিট ছাড়া যদি যাত্রী না ওঠানো হয় তাহলে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে কাউন্টারে এসে দাঁড়াবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/এমএবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :