নতুন জীবনী: যৌনসম্পর্ক নিয়ে যা বলেছিলেন গান্ধী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৩১

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর যৌনসম্পর্ক নিয়ে কী ভাবনা ছিলো তা নিয়ে সম্প্রতি হৈ চৈ পড়ে গিয়েছে। গান্ধী চাইতেন শুধু আনন্দের জন্য যৌনমিলন করাকে নারীরা যেন প্রতিরোধ করে। তার মতে নর-নারীর যৌনসম্পর্ক হবে শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্য যতটুকু দরকার - ততটুকুই।

একজন আমেরিকান জন্মনিয়ন্ত্রণকর্মী এবং যৌন শিক্ষাবিদ মার্গারেট স্যাঙ্গারের সঙ্গে ১৯৩৫ সালে গান্ধীর যে কথোপকথন হয়েছিল- সম্প্রতি-প্রকাশিত সেই কথোপকথনের বিবরণ থেকে এসব জানা গেছে।

সম্প্রতি গান্ধীর এক নতুন জীবনীগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যা লিখেছেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। এ বইতে নারী অধিকার, যৌনতা এবং কৌমার্য বিষয়ে গান্ধীর ভাবনা উঠে এসেছে। মার্গারেট স্যাঙ্গারের সঙ্গে গান্ধীর কথোপকথনের বিস্তারিত নোট নিয়েছিলেন গান্ধীর সচিব মহাদেব দেশাই।

তিনি লিখছেন, ‘মনে হচ্ছিল দু'জনেই একমত যে নারীর মুক্তি হওয়া উচিৎ। তার নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা হওয়া উচিৎ। কিন্তু খুব দ্রুতই তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা গেল’।

মিসেস স্যাঙ্গার ১৯১৬ সালের নিউইয়র্কে খুলেছিলেন আমেরিকার প্রথম পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র। তিনি মনে করতেন, জন্মনিরোধকই হচ্ছে নারীর মুক্তির সবচেয়ে নিরাপদ পথ। কিন্তু গান্ধী বললেন, “পুরুষদের উচিৎ তার ‘জান্তব কামনা’কে সংযত করা, আর নারীদের উচিৎ তাদের স্বামীদের বাধা দেয়া। যৌনক্রিয়া করা উচিৎ শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্যই”।

সে বছর ভারতের ১৮টি শহরে সফর করেছিলেন স্যাঙ্গার, কথা বলেছিলেন ডাক্তার ও কর্মীদের সাথে। কথাবার্তার বিষয়বস্তু ছিল- জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং নারীমুক্তি। তিনি মহারাষ্ট্র রাজ্যে গান্ধীর আশ্রমেও গিয়েছিলেন এবং সেখানেই তার সাথে স্যাঙ্গারের এই কৌতুহলোদ্দীপক আলোচনা হয়।

‘আপনি কি মনে করেন যে যখন একজন নারী ও পুরুষ পরস্পরের প্রেমে আবদ্ধ এবং সুখী, তখন তারা শুধু বছরে দু'একবার যখন সন্তান চাইবে তখনই যৌনমিলন করবে- এটা কি সম্ভব?’ স্যাঙ্গার এমন প্রশ্নের পর জন্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘ঠিক এই ক্ষেত্রেই জন্মনিয়ন্ত্রণ খুবই সুবিধাজনক- যা নারীকে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ থেকে রক্ষা করবে এবং তার দেহের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে’।

এরপর গান্ধী স্যাঙ্গারকে বলেন, তিনি সব যৌনতাকেই ‘কামনা’ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, তার স্ত্রী কস্তুরবার সাথে তার সম্পর্ক তখনই ‘আধ্যাত্মিক’ হয়ে উঠেছিল যখন তিনি ‘শারীরিক কামনার জীবনকে বিদায় দিয়েছিলেন’।

১১২৯ পাতার এই বইয়ে গান্ধীর ১৯১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে প্রত্যাবর্তন থেকে শুরু করে ১৯৪৮ সাথে তার নিহত হওয়া পর্যন্ত সময়কালকে তুলে ধরা হয়েছে।

গান্ধী বিয়ে করেছিলেন মাত্র ১৩ বছর বয়েসে। এরপর ৩৮ বছর বয়েসে- যখন তিনি চার সন্তানের পিতা- তখন তিনি ‘ব্রহ্মচর্য’ বা যৌনসম্পর্কবিরহিত জীবনযাপন শুরু করেন।

‘দি ইয়ার্স দ্যাট চেঞ্জড দি ওয়ার্ল্ড’ নামের বইটিতে রামচন্দ্র গুহ বলছেন, গান্ধী মনে করতেন যৌনতা হচ্ছে ‘জান্তব কামনা’ মাত্র, যা বংশবৃদ্ধির জন্য দরকার। আর জন্মনিয়ন্ত্রণ এই জান্তব কামনাকে বৈধতা দিয়ে দিচ্ছে।

এর অনেক বছর পর তৎকালীন বঙ্গ প্রদেশের নোয়াখালীতে ভারত ভাগকে কেন্দ্র করে যথন ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা চলছে- তখন গান্ধী এক বিতর্কিত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলেন। তিনি তার নাতনী এবং সর্বক্ষণের সঙ্গী মানু গান্ধীকে বললেন, তার সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতে। তিনি চাইছিলেন এটা পরীক্ষা করতে যে তিনি তার যৌন আকাঙ্খাকে সম্পূর্ণ জয় করতে পেরেছেন কিনা।

গুহ লিখছেন, গান্ধী মনে করতেন- তিনি যে পরিপূর্ণ ব্রহ্মচারী হতে ব্যর্থ হয়েছেন তার সাথে ভারতের ধর্মীয় সংঘাতের একটা সম্পর্ক আছে।

তবে মানু গান্ধীকে নিয়ে ঘুমানোর পরীক্ষার কথা যখন গান্ধী তার সহযোগীদের বললেন, তখন তারা সতর্ক করেছিলেন যে তিনি যেন এটা না করেন এবং এতে তার সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। একজন সহকারী বলেছিলেন, এটা দুর্বোধ্য এবং সমর্থনের অযোগ্য। আরেক জন এর প্রতিবাদে গান্ধীর সাথে কাজ করা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

তিনি নারীদের শিক্ষা, কাজ করার অধিকার এবং নারীপুরুষের সাম্যেরও সমর্থক ছিলেন। তবে গান্ধী এটাও মনে করতেন যে সন্তান লালন-পালন এবং গৃহকর্ম নারীদেরই কাজ।

রামচন্দ্র গুহ লিখেছেন, আজকের মাপকাঠিতে বিচার করলে গান্ধীকে রক্ষণশীল বলা যায়, তবে তার নিজ সময়ের বিচারে তিনি নি:সন্দেহে প্রগতিশীল ছিলেন। সূত্র: বিবিসি

ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :