তামিমের সাহসিকতার ম্যাচে বাংলাদেশের বড় জয়

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:২৩ | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:৪১

ব্যাটিংয়ে মুশফিকের বীরত্ব, তামিমের সাহসিকতা। এরপর বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং। সবমিলিয়ে দারুণ একটি জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। শনিবার এশিয়া কাপের ১৪তম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে হারালো টাইগাররা। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন ‍মুর্তজার দল।

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে এদিন বাংলাদেশের দেয়া ২৬২ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩৫.২ ওভারে ১২৪ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন দিলরুয়ান পেরেরা। ২৭ রান করেন উপুল থারাঙ্গা। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজা ২টি, মোস্তাফিজুর রহমান ২টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ২টি, রুবেল হোসেন ১টি, সাকিব আল হাসান ১টি ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১টি করে উইকেট শিকার করেন।

শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২২ রানে প্রথম উইকেট হারায়। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে কুসল মেন্ডিসকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজুর রহমান। এক বলে শূন্য রান করেন মেন্ডিস। এরপর জোড়া আঘাত হানেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মুর্তজা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে উপুল থারাঙ্গাকে বোল্ড করার পর পঞ্চম ওভারে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। ১৬ বলে ২৭ রান করেন থারাঙ্গা। তিন বলে শূন্য রান করেন ধনঞ্জয়া।

তারপর কুসল পেরেরাকে সাজঘরে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ইনিংসের দশম ওভারে কুসলকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। কুসল পেরেরা করেন ১১ রান। এরপর ১৭তম ওভারে বোলিংয়ে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ওভারে রান আউট হয়ে ফিরে যান দাসুন শানাকা। সাত রান করেন এই ব্যাটসম্যান। ১৮তম ওভারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন রুবেল হোসেন। ম্যাথুজ করেন ১৬ রান।

১৯তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে রুবেল হোসেনের হাতে ক্যাচ হন থিসারা পেরেরা। তিনি করেন ছয় রান। ২৬তম ওভারে সুরঙ্গা লাকমলকে বোল্ড করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৩৫তম ওভারে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বলে স্ট্যাম্পিং হন দিলরুয়ান পেরেরা। ২৯ রান করেন তিনি। ৩৬তম ওভারে সাকিব আল হাসানের বলে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ হন আমিলা আপোনসো।

এর আগে ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ৪৯.৩ ওভারে ২৬১ রান করে অলআউট হয় টাইগাররা। দলের পক্ষে সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিম। ১৪৪ রান করে আউট হন তিনি।

ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহিমের এটি ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। আর ওয়ানডেতে এটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। এই রান করার পথে তিনি ১১টি চার মারেন ও চারটি ছক্কা হাঁকান। ওয়ানডেতে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুশফিকুর রহিমের এই ইনিংসটি দ্বিতীয় সেরা। ১৫৪ রান করে সবার উপরে আছেন তামিম ইকবাল।

অন্যদিকে, মোহাম্মদ মিথুনের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৬৩। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি তার প্রথম অর্ধশত। শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে লাসিথ মালিঙ্গা ২৩ রান দিয়ে চারটি উইকেট শিকার করেন। অন্যদের মধ্যে সুরঙ্গা লাকমল একটি, আমিলা আপোনসো একটি, থিসারা পেরেরা একটি ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা দুইটি করে উইকেট শিকার করেন।

এদিন বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় ওভারে হাতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। এরপর দলকে টেনে তোলেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুন। দুজনে মিলে ১৩১ রানের পার্টনারশিপ গড়েন।

২৬তম ওভারে লাসিথ মালিঙ্গার বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হন মোহাম্মদ মিথুন। এরপর আবারও চাপে পড়ে দল। পরের ব্যাটসম্যানরা কেউই সুবিধা করতে পারেননি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজরা দ্রুতই ফিরে যান সাজঘরে। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে রাখেন মুশফিকুর রহিম।

এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল মুশফিকুর রহিম হয়তো সঙ্গীর অভাবে সেঞ্চুরি করতে পারবেন না। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে ১২৩ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। শুধু সেঞ্চুরিই করেননি। ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন।

৪৬.৫ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান রান আউট হন। এটি ছিল বাংলাদেশের নবম উইকেটের পতন। ২২৯ রানে শেষ হতে পারতো বাংলাদেশের ইনিংস। কিন্তু তামিম ইকবালের দুঃসাহসিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের সংগ্রহ হয় ২৬১। তামিম ইকবাল হাতে ব্যথা পাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে তামিম ইকবালের হাতে ব্যান্ডেজ পরিয়ে দেয়া হয়। খবর ছড়িয়ে পড়ে এই ম্যাচে তামিম ইকবাল আর ব্যাট করতে নামতে পারবেনই না, এবারের এশিয়া কাপও তামিমের শেষ।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে শেষ উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গ দিতে মাঠে নেমে যান তামিম ইকবাল। এক হাত দিয়ে ব্যাট করেন তিনি। তামিমের এমন সাহসিকতা দেখে রীতিমতো বিস্মিত সবাই। ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হয়ে যান মুশফিকুর রহিম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ফল: ১৩৭ রানে জয়ী বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ইনিংস: ২৬১ (৪৯.৩ ওভার)

(তামিম ইকবাল ২*, লিটন দাস ০, সাকিব আল হাসান ০, মুশফিকুর রহিম ১৪৪, মোহাম্মদ মিথুন ৬৩, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১, মেহেদী হাসান মিরাজ ১৫, মাশরাফি বিন মুর্তজা ১১, রুবেল হোসেন ২, মোস্তাফিজুর রহমান ১০; লাসিথ মালিঙ্গা ৪/২৩, সুরঙ্গা লাকমল ১/৪৬, আমিলা আপোনসো ১/৫৫, থিসারা পেরেরা ১/৫১, দিলরুয়ান পেরেরা ০/২৫, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ২/৩৮, দাসুন শানাকা ০/১৯)।

শ্রীলঙ্কা ইনিংস: ১২৪ (৩৫.২ ওভার)

(উপুল থারাঙ্গা ২৭, কুসল মেন্ডিস ০, কুসল পেরেরা ১১, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ০, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ১৬, দাসুন শানাকা ৭, থিসারা পেরেরা ৬, দিলরুয়ান পেরেরা ২৯, সুরঙ্গা লাকমল ২০, আমিলা আপোনসো ৪, লাসিথ মালিঙ্গা ৩*; মাশরাফি বিন মুর্তজা ২/২৫, মোস্তাফিজুর রহমান ২/২০, মেহেদী হাসান মিরাজ ২/২১, সাকিব আল হাসান ১/৩১, রুবেল হোসেন ১/১৮, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১/৮)।

(ঢাকাটাইমস/১৫ সেপ্টেম্বর/এসইউএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :