ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:২০ | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:১৬

হাইকোর্টের নির্দেশের পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগঠন ডাকসুর নির্বাচনের পদক্ষেপ না নেওয়ায় উপাচার্য আখতারুজ্জামানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলার পাঁচদিনের মাথায় এ নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ঢাবি কর্তৃপক্ষের আলোচনা শুরু হয়েছে।

রবিবার বেলা ১১টা থেকে উপাচার্যের কার্যালয় সংলগ্ন আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রীসহ ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন।

এর আগে গত বুধবার হাইকোর্টের নির্দেশের পরও ডাকসুর নির্বাচনের পদক্ষেপ না নেওয়ায় ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান ও ট্রেজারার কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট শাখায় মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আজ সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি প্রশাসন ছাত্র নেতাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। উপাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ হল প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত আছেন।

এছাড়া উপস্থিত আছেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন।

অন্যদিকে ছাত্রদলের প্রতিনিধি দলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা দিয়ে আলোচনা সভাস্থলে নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন সহকারী প্রক্টর। ছাত্রদলের পক্ষে আলেচনায় এসেছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী।

এছাড়াও জাসদ ছাত্রলীগ, বাসদ ছাত্রলীগ, বিসিএল, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ বাম সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নেতারা উপস্থিত আছেন।

এর আগে আলোচনার জন্য প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ছাত্র সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো হয়।

এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাবি কর্তৃপক্ষকে ঢাকসু নির্বাচনের বিষয়ে নোটিশ পাঠান আইনজীবী মোরসেদ। এতে বলা হয়, ৭ দিনের মধ্যে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা না নিলে তাদের বিরুদ্ধে হাইকার্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।

মামলা হওয়ার পর ঢাবি উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হলে সেসময় তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশের পর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল। তবে সেটা কোনও না কোনও কারণে হয়নি। আর আদালতের বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’

আইনি নোটিশের জবাব না দেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জবাব দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে কেন সেটা করা হয়নি, আমি দেখব সেটা।’

ডাকসুর বিধান অনুযায়ী প্রতি বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু প্রায় ২৮ বছর আগে ১৯৯০ সালের ৬ জুলাই ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়। আর সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। এরপর প্রতিটি রাজনৈতিক সরকার এই নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও আর ভোট হয়নি।

কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা নেই বলে মনে করা হয়। এতে মূলধারার রাজনীতিতে যেমন নতুন নেতা তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ছাত্র সংগঠনগুলোও শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্রতি উদাসীন হয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে বলেও নানা সময় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে আসছেন।

ডাকসু নির্বাচন চেয়ে নানা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গত সমাবর্তনে এই নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেন আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও। কিন্তু এরপরেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

২০১২ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনে পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ শিক্ষার্থীর পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও ট্রেজারারকে লিগ্যাল নোটিশ দেন মনজিল মোরসেদ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই নোটিশের কোনও জবাব না দেওয়ায় ২০১২ সালে ২৫ শিক্ষার্থীর পক্ষে রিট আবেদন করা হয়।

এরপর একই বছরের ৮ এপ্রিল হাইকোর্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করার ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে বিবাদী করা হয়।

পরে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ৬ মাসের মধ্যে করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :