মুশফিকের যে সাহস দেখেনি কেউ

হিমু আক্তার, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৫৩ | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:১১

শনিবার দুবাইয়ে ক্রিকেট ম্যাচটায় শ্রীলঙ্কা আসলে কাদের সঙ্গে লড়েছে? যদি বলা হয় বাঙালির সাহসের সঙ্গে, তাহলে ভুল বলা হয় না।

ব্যাথার কারণে এক হাতে ব্যাট করে ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তামিম ইকবাল। কিন্তু শনিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে সাহসী আরেক ‘বীর সেনা’ ছিলেন মুশফিকুর রহিমও। তবে তার যন্ত্রণা বোঝার উপায় ছিল না বাইরে থেকে।

পাজরে প্রচণ্ড ব্যাথা নিয়েই বাংলাদেশের ইনিংস টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের ‘লিটল মাস্টার’। ব্যাথাটা এতই বেশি ছিল যে, সচরাচর ক্রিকেটাররা এই অবস্থায় মাঠে নামার সাহস রাখেন না।

কিন্তু বাংলাদেশের আরেক নাম যে সাহস। অস্ত্র আর প্রশিক্ষণ ছাড়াই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ঠেকিয়ে দেয়ার চিন্তাটা আগুনে ঝাঁপ দেয়া মনে হতে পারে। কিন্তু পূর্ব পুরুষরা তা করেছেন বলেই এখন বাংলাদেশ স্বাধীন আর তার হয়েই লড়ছেন তামিম, সাকিব, মুশফিকরা। তাদের কি সাহসী না হলে চলে?

পাঁজড়ের ৯ নম্বর হাড়ে চিড় আছে মুশির। শুক্রবার রাত পর্যন্ত দলে না থাকাটাই এক রকমের নিশ্চিত ছিল। বদলে মাঠে নামার কথা নাজমুল হোসেন শান্তর। কিন্তু দেশের জন্য খেলতে এসে ব্যথাকে গুরুত্ব দেয়ার মানুষ নন মুশফিক। সরে যেতে চাননি নিজের দায়িত্ব থেকে। টেপ বেঁধে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন।

দুবাইয়ের মাঠে বাংলাদেশ যখন দুই রানে দুই উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে, তখনেই মাঠে নামলেন সাবেক টাইগার দলপতি। এরপর ব্যাট চালিয়েছেন প্রায় চার ঘণ্টা। মাঝে কুঁকড়ে গেছেন ব্যাথায়। এর মধ্যেই খেলেছেন ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস, জিতিয়েছেন দেশকে।

বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম ওভারেই শুরুতেই মালিঙ্গার করা বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন লিটন কুমার দাস। মালিঙ্গার পরের বলে কাটা পড়লেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ওভার শেষে দলের স্কোর তখন ২ উইকেটে ১ রান। লাকমলের বলে আঘাত পেয়ে দ্বিতীয় ওভারে মাঠ ছাড়তে হলো তামিমকে, ফলে কার্যত তিন উইকেট নেই টাইগারদের।

এরপরেই পাঁজরের যন্ত্রণা নিয়ে ব্যাট হাতে নামেন মিস্টার ডিপেনন্ডেবল। বিপদে পড়া দলকে আস্তে আস্তে ঠেকিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালালেন। একটা সময় রান ছিল ২৫ বলে ৫। সেখান থেকে ১৫০ বলে ১৪৪ রান করে খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আউট হন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। তখন দলের রান ২৬১, লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে গেছে টাইগারবাহিনী।

ইনিংসের ১৯তম ওভারে সিলভার বলে যখন প্রথম ছক্কাটি হাঁকালেন মুশফিক তখন হাসির বদলে একটু বিমর্ষই দেখা গিয়েছিল তাকে। হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলেন পাঁজরটা।

হয়তো ব্যথাটা খুব বেশি অনুভব করেছিলেন। কারণ, আগে থেকেই চিকিৎসকের নিষেধ ছিল, বড় শট খেলা যাবে না, খেললেই ব্যথা পাবেন। এর মধ্যে ইনিংসের মাঝপথেই পাঁজরের ব্যথার সাথে যুক্ত হয় ক্র্যাম্প। দুবাইয়ের গরমে পায়ের পেশীতে টান লাগে। যার জন্য দৌড়াতে সমস্যা হয়। তারপরেও থামানো যায়নি তাকে।

দলকে বিপদ থেকে তুলতে হলে তো শট খেলতেই হবে। যার জন্য নিজের ব্যথাকে উপেক্ষা করে দায়িত্ববোধটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন প্রিয় মুশফিক।

এর মাঝে ইনিংসের শেষ ৩২ রানকে মহাকাব্য বলা অত্যুক্তি হয় না। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন মোস্তাফিজুর আউট হন, তখন দলের সংগ্রম ২২৯ রান। এই স্কোর পেলে শ্রীলঙ্কা ম্যাচে আত্মবিশ্বাসী থাকত সিংহলীরাই। তখনই মাঠে আসেন আহত তামিম। এক হাতে একটি বল ঠেকালেন।

আর তিনটি ওভারের মধ্যে ১৫টি বল একাই খেললেন মুশফিক। তিনটি ছক্কা, তিনটি চার আর দুটি সিঙ্গেলে দলীয় স্কোরে যোগ করলেন ৩২ আর তাতেই ম্যাচটা হয়ে গেল বাংলাদেশের।

সব মিলিয়ে ম্যাচে ১১ টি বাউন্ডারি আর চারটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন ছোটখাটো গড়নের ছেলেটি। দলকে জেতালেন, করলেন ওয়ানডেতে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি, খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস, বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা, এশিয়া কাপের ইতিহাসেও দ্বিতীয় সেরা এবং দুবাইয়ের মাঠের সর্বোচ্চ করা ইনিংসটি।

নিষেধ অমান্য করে এমন সাহস করে মাঠে নামায় মুশফিকের প্রতি কি রাগ করেছেন চিকিৎসক! মনে হয় না। কারণ সাহসই যে তাদের পরিচয়।

(ঢাকাটাইমস/১৬ সেপ্টেম্বর/এইচএ/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :